রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ইলেক্টোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এ ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’

বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠকের আলোচনা শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সালহাউদ্দিন আহমদ।

বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ৭০ হাজার স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিকে ভোটার করে নির্বাচন করার প্রস্তাব তাদের কাছে এখনই গ্রহণযোগ্য নয়। ভবিষ্যতে যদি সংসদীয় আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সমঝোতা হয়, তখন তা বিবেচনার বিষয় হতে পারে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়টি উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকলে অতীতের অনেক নির্বাচনের অনিয়ম রোধ করা যেত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন থাকলেই নির্বাহী বিভাগ ও সংসদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা সম্ভব।

নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে আইন রয়েছে, সেটি দুর্বল এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে অনুপযুক্ত। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন এখন কার্যকর হলেও ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী আইন প্রণয়ন দরকার।

নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহি আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিশনারদের অপসারণের বিধান থাকলেও আরও কিছু খুঁটিনাটি আইন তৈরি করতে হবে, যেন মিসকন্ডাক্ট বা অপব্যবহারের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।

এ ছাড়া মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য সাংবিধানিক ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্যও শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও কার্যকর আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

আরও পড়ুনকিছু ভিন্নমতসহ এনসিসির পক্ষে জামায়াত-এনসিপি, বিপক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ ব যবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘হায়া’ মানে শুধু শালীনতা নয়

ইসলাম মানুষকে উত্তম চরিত্রের শিখরে পৌঁছানোর পথ দেখায়। মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে পাঠানো হয়েছে শুধু উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় পৌঁছাতে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৮,৯৫২)

উত্তম চরিত্র গড়ে তুলতে ইসলাম কিছু মৌলিক গুণের ওপর জোর দেয়, যার মধ্যে হায়া অন্যতম। হায়া শুধু লজ্জা বা শালীনতা নয়, বরং এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে অশোভন আচরণ থেকে বিরত রাখে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ধর্মের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো হায়া।’ (সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪,১৮১)

প্রতিটি ধর্মের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো হায়া।সুনানে ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪,১৮১হায়া কী

হায়া আরবি শব্দ হায়াত (জীবন) থেকে এসেছে, কারণ প্রাচীন আরবরা বিশ্বাস করত, হায়া ছাড়া মানুষের জীবন অসম্পূর্ণ। এটি লজ্জা, শালীনতা, সংযম ও সচেতনতার সমন্বয়, যা মানুষকে অনৈতিক কাজ থেকে দূরে রাখে।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘হায়া মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ, যা ছাড়া মানবতার কোনো অংশ থাকে না। এটি ছাড়া কেউ অতিথির সেবা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা পবিত্রতা বজায় রাখতে পারে না।’ (আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ২৫)

আধুনিক যুগে লজ্জার ধারণা ব্যক্তিবাদের কারণে নেতিবাচক হয়ে উঠলেও মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, সুস্থ লজ্জা আমাদের ভুল সংশোধনের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ সতর্কতা হিসেবে কাজ করে।

কোরআনে হায়ার সূচনা দেখা যায় আদম ও হাওয়া (আ.)-এর ঘটনায়। নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাঁরা তাঁদের নগ্নতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে পাতা দিয়ে নিজেদের ঢেকেছিলেন (সুরা ত্ব-হা, আয়াত: ১২১)।

কেননা, হায়া প্রতিটি মানুষের ফিতরাতে (সৃষ্টিজাত স্বভাব) রয়েছে। ইসলাম হায়াকে ইমানের অংশ বলে আরও শক্তিশালী করেছে, যাতে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর শাস্তির ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকে।

হায়া মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ, যা ছাড়া মানবতার কোনো অংশ থাকে না। এটি ছাড়া কেউ অতিথির সেবা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা পবিত্রতা বজায় রাখতে পারে না।ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.), আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ২৫আরও পড়ুনশিক্ষাদানে মহানবীর (সা.) ১২ কৌশল১৩ মে ২০২৫কোরআন ও সুন্নাহতে হায়া

মুসা (আ.) মাদিয়ানের কূপে দুই নারীকে সাহায্য করার পর প্রতিদান না চেয়ে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে চলে যান, যা তাঁর শালীনতার প্রকাশ (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৪)। একই সুরায় একজন নারী হায়ার সঙ্গে মুসা (আ.)-কে তাঁদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান, যা তার কণ্ঠ ও আচরণে প্রতিফলিত হয়। (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৫)

নবীজি (সা.) হায়াকে ইমানের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, ‘হায়া ও ইমান একসঙ্গে জোড়া; একটি উঠে গেলে অপরটিও চলে যায়।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৫৮)

ইসলামি আইনে হায়ার সুরক্ষার জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। যেমন কাউকে লজ্জার চাপে তার অধিকার ছাড়তে বাধ্য করা নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমের সম্পত্তি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নেওয়া হারাম’ (সুনানে দারাকুতনি, হাদিস: ২,৮৮৫)। তিনি বলেছেন, ‘হায়া শুধু কল্যাণ বয়ে আনে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১১৭)

ইসলামি আইনে হায়ার সুরক্ষার জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। যেমন কাউকে লজ্জার চাপে তার অধিকার ছাড়তে বাধ্য করা নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমের সম্পত্তি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নেওয়া হারাম।’নবী ও সাহাবিদের জীবনে হায়া

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ হায়াসম্পন্ন ও উদার; যখন কেউ তাঁর কাছে হাত তোলে, তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৫৬)

হায়া আল্লাহর মহত্ত্ব ও দয়ার প্রকাশ। তিনি পাপ গোপন রাখতে ভালোবাসেন, কিন্তু যারা নিজের পাপ প্রকাশ করে, তারা এই রক্ষাকবচ হারায়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৭২১)

নবীদের জীবনে হায়া ছিল তাঁদের চরিত্রের প্রধান অলংকার। মুসা (আ.)-এর তীব্র হায়ার কারণে আল্লাহ তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ থেকে তাঁকে মুক্ত করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৮)

আমাদের নবীজি (সা.) ছিলেন এমন লজ্জাশীল, যখন তিনি কিছু অশোভন দেখতেন তাঁর চেহারায় অপছন্দের ভাব ফুটে উঠত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১০২)

মিরাজের রাতে অন্য নবীদের পরামর্শে বারবার নামাজের সংখ্যা কমানোর জন্য আল্লাহর কাছে যাওয়ার পরে, শেষে ৫ ওয়াক্তের পরে আর ফিরে যাননি, কারণ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি লজ্জায় পড়ে গেছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,৫১৭)

সাহাবিদের মধ্যে ওসমান (রা.)-এর হায়া এত বেশি ছিল যে ফেরেশতারাও তাঁর সম্মানে লজ্জা পেতেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪০১)। ওমর (রা.)-এর কবরের পাশে যেতেও আয়েশা (রা.) হিজাব পরতেন হায়ার কারণে (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৫,৬৬০)।

ফাতিমা (রা.) মৃত্যুর পরও তাঁর শরীরের আকৃতি গোপন রাখতে বিশেষ কাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৩৯)।

প্রথম প্রজন্মের মুসলিমরা, যেমন ফুজায়েল ইবনে আয়াজ (রহ.), অন্ধকারেও আল্লাহর প্রতি হায়া পোষণ করতেন।

আরও পড়ুনইসলাম সম্পর্কে কীভাবে শিখবেন০৮ জুন ২০২৫মিরাজের রাতে অন্য নবীদের পরামর্শে বারবার নামাজের সংখ্যা কমানোর জন্য আল্লাহর কাছে যাওয়ার পরে, শেষে ৫ ওয়াক্তের পরে আর ফিরে যাননি, কারণ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি লজ্জায় পড়ে গেছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,৫১৭)হায়া গড়ে তোলার উপায়

হায়া গড়ে তুলতে কয়েকটি পদক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকর। প্রথমত, আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা হায়াকে জাগিয়ে তোলে। ইবনুল কাইয়্যিম বলেন (রহ.), ‘যে আল্লাহর গুণের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করে, সে তাঁর নৈকট্য লাভ করে।’ (আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ১৫০)

দ্বিতীয়ত, হায়ার চর্চা, যেমন দৃষ্টি নত করা বা হিজাব পরা, এটিকে পুনরুজ্জীবিত করে। (সুরা আল-আ’রাফ, ৭:২৭)

তৃতীয়ত, আল্লাহর গুণাবলি, যেমন আর-রাকিব (পর্যবেক্ষক) বা আল-বাসির (সর্বদ্রষ্টা), সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন হায়াকে শক্তিশালী করে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘পাপ করার সময় তোমার ডানে-বাঁয়ে ফেরেশতাদের উপস্থিতি ভুলে যাওয়া পাপের চেয়েও বড়।’

চতুর্থত, আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত স্মরণ করা হায়া জাগায়। আল-জুনায়দ বলেন, ‘হায়া হলো নিয়ামত দেখা এবং নিজের ত্রুটি উপলব্ধি করা।’ (আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ১৭৫)

পঞ্চমত, নিয়মিত ইবাদত করা। যেমন নামাজ অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)। ষষ্ঠত, সৎসঙ্গ এবং সাহাবিদের জীবনী পড়া হায়াকে অনুপ্রাণিত করে।

সপ্তমত, সততা আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে আনে, যা হায়ার ভিত্তি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সততা পুণ্যের দিকে নিয়ে যায়, আর পুণ্য জান্নাতে নিয়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,০৯৪)

হায়া ইসলামের প্রাণ। এটি শুধু লজ্জা নয়, বরং আল্লাহ ও মানুষের সামনে আমাদের আত্মমর্যাদা ও পবিত্রতার প্রতীক। এটি নবীদের উত্তরাধিকার এবং আল্লাহর প্রিয় গুণ।

সূত্র: ইয়াকিন ইনস্টিটিউট

আরও পড়ুনঘড়ির চাপে কি আমাদের ইবাদতের ক্ষতি হচ্ছে২২ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিসি’র জবাবদিহিতার সুনির্দিষ্ট কাঠামো নেই: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • গাজীপুরে অটোরিকশা ও লেগুনার সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত
  • সংস্কার নিয়ে আমাদের প্রস্তাবের বাইরে বহু প্রস্তাবে একমত হয়েছি: সালাউদ্দিন আহমদ
  • কক্সবাজারের সাবেক ডিসিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ১ জুলাই
  • আসনের সংখ্যানুপাতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পদ বিরোধী দল পাওয়ার বিষয়ে সবাই একমত: সালাউদ্দিন আহমদ
  • ‌‘লন্ডন বৈঠ‌কে’ ক্ষুব্ধ জামায়া‌ত বয়কট করল ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ
  • ‘হায়া’ মানে শুধু শালীনতা নয়
  • ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান, সরকারকে সালাহউদ্দিন আহমদ
  • ‘তথ্য আপাদের’ দাবি নিয়ে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান