১৪নং ওয়ার্ড জুড়ে ফ্যাসিস্টের দোসর জানে আলমের পোস্টার, ক্ষোভ
Published: 21st, June 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে এলাকার বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগিয়েছেন জানে আলম নামে এক ব্যক্তি যিনি সম্পর্কে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার বিয়াই এবং এক সময়ের টানবাজারের গডফাদার সম্রাট শাহজাহানের ছোট ভাই। গত ১৫ বছর এলাকায় শামীম ওসমানের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন জানে আলম।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন গুলোতে শামীম ওসমানের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন। ৫ আগস্টের পর ভোল পাল্টে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছেন তিনি এবং কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে এলাকায় পোস্টার লাগিয়েছেন। জানে আলমের এই পোস্টার লাগানোর বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না ১৪ নং ওয়ার্ডের জনগণ।
তাদের মতে এতদিন যে ফ্যাসিবাদের কবলে নিমজ্জিত ছিল ১৪ নং ওয়ার্ড, জানে আলম ছিলেন তাদেরই দোসর তাই তাকে কোনভাবেই এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা মেনে নেবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময়ে নারায়ণগঞ্জের টানবাজারের গডফাদার ছিলেন শাহজাহান। নারায়ণগঞ্জের কাশিপুরে অবস্থিত তার একটি সিনেমা হলের নাম ছিল সম্রাট। সেই থেকে তিনি সম্রাট শাহজাহান নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বিয়ে করেন মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্নার বোনকে।
সেই শাহজাহানের ছোট ভাই জানে আলম বিগত দিনগুলোতে কাউন্সিলর মুন্না, কাউন্সিলর হোটেল মনির এবং শফিউদ্দিন প্রধানের পক্ষে কাজ করেছেন। স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে ছিল তার অবস্থান। এলাকার কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তাকে পাওয়া যায় নাই।
কিন্তু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন জানে আলম এবং এলাকায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে পোস্টার লাগানো শুরু করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৪ নং ওয়ার্ডের ভোটাররা জানান, গত ১৫ বছর আমরা এলাকার মানুষের সুখে দুখে কখনো জানে আলমকে পাই নাই। তিনি ছিলেন শামীম ওসমানের লোক। জানে আলমের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল শামীম ওসমানের সহযোগী কামরুল হাসান মুন্নার। সেই সূত্রে তিনি তাদের হয়ে কাজ করেছেন।
৫ আগস্টের পর তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে দাবি করছেন এবং কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হিসেবে এলাকায় পোস্টার লাগিয়েছেন। আমরা যে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছি, সেই ফ্যাসিবাদকে আর দেখতে চাই না। আমরা চাই ১৪ নং ওয়ার্ডের মানুষের সুখে দুখে এতদিন যারা আমাদের পাশে ছিলো, তাদের কাউকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে। কোনো সুবিধাবাদীকে আমরা মেনে নেবো না।
এলাকাবাসী আরো জানায়, গত ১৫ বছর যারা স্বৈরাচারের পক্ষে ছিলেন তাদেরকে যারা নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন, তাদেরকে আমরা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, ১৪ নং ওয়ার্ডে কোনো ফ্যাসিবাদের ঠাঁই হবে না। আমরা এলাকাবাসীর সম্মিলিতভাবে তাদেরকে প্রতিরোধ করবো। আগে যেভাবে ভোট কেন্দ্র দখল করে সিল মারা হয়েছে সেই রাজনীতি আমরা আর ফিরে আসতে দেবো না। তাই সুবিধাবাদীরা সাবধান হয়ে যান।
এসব বিষয়ে জানতে জানে আলমের মুঠোফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ শ ম ম ওসম ন র শ হজ হ ন এল ক র এল ক য় আলম র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০
নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট নিরসনে সড়কে কাজ করা শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাটারিচালিত রিকশা (ইজিবাইক) চালকরা হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে ইজিবাইক চালকদের সাথে সংঘাতে জড়ালে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইজিবাইকচালকরা প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে রাখেন। তাদের অবরোধে পুরো শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাঢ়া ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ গেটে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষার্থী ও ইজিবাইক চালকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়।
এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো- মোঃ আবু সাঈদ (১৯), মারুফ (১৯), আসিফ (৩০), মাহিম (২২), ফয়সাল আহমেদ (২৮), হুমায়ন কবির (২৬), এনামুল হক শান্ত (২৩), শাহীন খন্দকার (২২) ও নুহেল মুন্সী আপন (২২)। তবে আহত ইজিবাইক চালকদের নাম পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীরা চাষাড়ায় ঢুকতে বাঁধা দেয় ইজিবাইক চালকদের। এ নিয়ে কথাকাটাকিাটি হয় উভয়ের মধ্যে এক পর্যায়ে ইজিবাইকরা চালকরা সংঘবদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকেই আহত হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ইজিবাইক চলকরা সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। পরে আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সংঘর্ষের সময় ইজিবাইক চালকদের অনেকেই তাদের গাড়ির সিটের নিচ থেকে লাঠি ও লোহার রড বের করে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়।
ধারণা করা হয়, আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল ইজিবাইক চালকরা যে শিক্ষার্থীদের উপর সুযোগ পেলেই হামলা করবে। কারণ গত এক দেড় মাস ধরেই চাষাড়ায় ইজিবাইক ঢুকতে বাধা দিয়ে আসছিল শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষোভ জমতে থাকে ইজিবাইক চালকদের মধ্যে। আজকে তারা সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে।
ওদিকে যানজট নিরসনে কাজ করা শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘আমরা এক মাস ধরে শহরের যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। চেম্বার অব কমার্স এবং বিকেএমই থেকে আমাদেরকে ট্রাফিক মনিটরিং সেলে দেওয়া হয়। আমাদের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই বড় অটোরিকশাগুলো চাষাঢ়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
কিন্তু তারা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চাষাঢ়ায় প্রবেশ করেন। পরে বাধা দিলে তারা আমাদের ওপর ক্ষেপে যান। এবং পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
তবে উজ্জল নামে এক অটোরিকশাচালক জানায়, ‘আমাদের চাষাঢ়া যাওয়া নিষেধ। আমরা নিষেধ উপেক্ষা করে চাষাঢ়া গেছি, এটা আমাদের অপরাধ। কিন্তু তারা আমাদের অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে দিয়েছে। গ্লাস ভাঙার কারণ জানতে চাইলে তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের অনেককে তারা মারধর করেছে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভালো একটি সমাধানে আসা সম্ভব হয়েছে। আলোচনা সভায় দুই পক্ষই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের সব সিদ্ধান্ত মানতে একমত হয়েছেন। এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হবে।