ইরান যখন ইসরায়েলে পাল্টা হামলা হিসেবে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে চলেছে, তখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও জনগণ উভয়ের মনেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে: যদি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে একদিন এই একই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম হবে?

হুমকি ও এর পেছনের প্রযুক্তি বোঝার জন্য, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল বিমান নীতি, মহাকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ তাল ইনবারের সঙ্গে কথা বলেছে।

ইনবার কয়েক দশক ধরে ইরান, উত্তর কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আসছেন।

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দায় কাতারের প্রধানমন্ত্রী

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরু করার আহ্বান এরদোয়ানের

কীভাবে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ‘পারমাণবিক সক্ষম’ হয়ে ওঠে?

ইনবারের মতে, একটি ক্ষেপণাস্ত্রকে পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম করা যেতে পারে কিনা, তা নির্ভর করে দুইটি মূল বিষয়ের ওপর। ১.

 ক্ষেপণাস্ত্রটির বহনক্ষমতা এবং ২. ওয়ারহেড সংরক্ষণের জন্য অভ্যন্তরীণ জায়গার পরিমাণ। 

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রায় ৫০০ কেজি  ওজনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র তাত্ত্বিকভাবে একটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম হতে পারে।

ইরানের শাহাব ৩ ক্ষেপণাস্ত্র এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র। এটি উত্তর কোরিয়ার স্কাড প্ল্যাটফর্মের ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি মাঝারি ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং এর আরো উন্নত প্রযুক্তি যেমন: গাদর ও এমাদ। যেগুলো বর্তমান যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে।

ইনবার বলেন, “এটি কোনো বিশাল প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়। ইরানের কাছে ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় ওজন বহন করতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।”

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কত দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে? 

ইরান এখন পর্যন্ত যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছুঁড়েছে, সেগুলো প্রায় ১,৮০০ কিলোমিটার যেতে পারে। ইরানের সক্ষমতা এর চেয়েও বেশি বলে দাবি এই বিশেষজ্ঞের।

তিনি বলেন, তাদের (ইরানের) এমন এক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যেগুলো ২,০০০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। চলমান সংঘাতে তেহরান এখনও এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তেহরান ব্যবহার করেনি।

এছাড়া ইরান অনেক বেশি দূর পাল্লার সিস্টেম তৈরি করছে। ইনবার ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) দ্বারা তৈরি একটি রকেট উৎক্ষেপণ যান ‘ঘায়েম-১০০’ এর দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করে প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম।

ইনবার বলেন, ইরানের এত দূরপাল্লার সিস্টেম ব্যবহারের সম্ভাবনা কম। তাদের এটি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। ইরান ইসরায়েল ছাড়া আর কাকে টার্গেট করবে?

একাধিক ওয়ারহেড বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র কী ইরানের কাছে আছে? 

ইরান দাবি করেছে, তাদের কাছে একাধিক স্বতন্ত্রভাবে লক্ষ্যযোগ্য পুনঃপ্রবেশযোগ্য যান (এমআইআরভি) আছে। যার মাধ্যমে একটি মাত্র ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং একাধিক লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে।

ইনবার জানান, ইরান খোররামশাহর নামক একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করেছে। যেটি এই ধরনের ক্ষমতা রাখে। তবে এর কার্যকর ব্যবহারের কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

ইরান এই প্রযুক্তি কোথা থেকে পেয়েছে?

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির শুরু কয়েক দশক আগে। ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর, ইরান উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়া থেকে স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছিল, যেগুলো পরবর্তীতে তাদের নিজস্ব নকশার ভিত্তি হয়ে ওঠে।

সেই সময়েই, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) স্থানীয়ভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য সিরিয়ায় একটি প্রতিনিধি দল পাঠায়। এর ফলেই তৈরি হয় শাহাব-থ্রি। মূলত উত্তর কোরিয়ার স্কাডের একটি উন্নত ও বড় সংস্করণ এটি।

ইনবার বলেন, প্রতিটি দেশ নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার তৈরি করেছে, একে অপরের সঙ্গে কোনো প্রযুক্তিগত জ্ঞান বিনিময় ছাড়াই। ইরান ও উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির মধ্যে বর্তমানে কোনো মিল বা সহযোগিতা নেই।

তবে ইনবার আরো বলেন, এই সিস্টেমগুলো প্রযুক্তিগতভাবে একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদিও এটি ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম, একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষ কোনো পরিবর্তন ছাড়াই একটি উত্তর কোরিয়ান পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, উত্তর কোরিয়া এমন অস্ত্র ইরানকে দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বর্তমানে কোথায় দাঁড়িয়ে?

ইরানের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, তারা এখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারেনি। তবে, ইরান একসময় এবিষয়ে খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিল। ইনবার ২০১৮ সালে ইসরায়েল কর্তৃক প্রকাশিত ইরানি পরমাণু আর্কাইভের কথা উল্লেখ করেন, যা ইরান থেকে গোপনে বের করে আনা হয়েছিল। এতে দেখা যায়, ২০০৩ সালের আগে ইরান একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রায় সব উপাদান তৈরি ও পরীক্ষা করেছিল।

ইনবার বলেন, বিশ বছর আগেই ইরান জানতো কীভাবে বোমা বানাতে হয়। তারা সব উপাদানই তৈরি করেছিল শুধু পারমাণবিক কোর বাদে। আজ ইরানের কাছে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বিশাল মজুত রয়েছে, যা বেসামরিক শক্তি উৎপাদনের চেয়ে অনেক বেশি এবং এগুলো ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা হলে অন্তত ১০টি পারমাণবিক বোমার কোর তৈরি করা সম্ভব। তবে শুধু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করলেই চলে না। এটিকে একটি কার্যকরী ওয়ারহেডে রূপান্তর করতে হলে আরো অস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া দরকার।

ইনবারের মতে, ইরানের এটি ইস্পাহানে করার পরিকল্পনা ছিল, সেখানে সম্প্রতি ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। ইনবার মনে করেন না যে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে। তিনি স্পষ্ট বলেন, কেউ পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সঙ্গে ঝামেলা করে না। ওদের যদি থাকত, ওরা সেটা দেখাত। কিছু অবকাঠামো এখনো অক্ষত রয়েছে। 

তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রে ইরানের কোনো বড় সাফল্য খুব একটা সম্ভাব্য নয়। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করে তারা নাতাঞ্জে (গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র) এখনো কতগুলো সেন্ট্রিফিউজ অবশিষ্ট রেখেছে তার উপর। আর অবশ্যই ফোরদো (পারমাণবিক কেন্দ্র) এখনো আক্রমণের শিকার হয়নি এবং সেখানে তারা আসলে কী রেখেছে, তা আমরা জানি না।”

ইনবার সতর্ক করে বলেন, ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ধরে নেওয়া উচিত নয়।

তিনি বলেন, পারস্য সাম্রাজ্য আবিষ্কার করেছিল দাবা। আর আমেরিকা আবিষ্কার করেছিল বেসবল। দুটো এক নিয়মে চলে না। ইরানি শাসকগোষ্ঠী প্রতারণায় পটু। ঠিক কী হচ্ছে তা জানার সুযোগ নেই।

তিনি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সামান্য তদারকিরও সমালোচনা করে বলেন, ইরানের অনেক স্থাপনা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার দ্বারা পরিদর্শিত হয়নি। আপনাকে যদি শুধু কিছু অংশ দেখানো হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সাইটে প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়, তাহলে আপনি কিছুই জানতে পারবেন না।

ইনবারের মতে, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা এখন নতুন অস্ত্র তৈরি করবে কিনা নাকি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে সেটি বলা যাচ্ছে না। 

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ব যবহ র ইনব র র এক ধ ক কর ছ ল ইসর য ধরন র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

‘রক্তাক্ত মহাসড়ক’, সাত ঘণ্টায় ৬০ জনকে হত্যা

মহাসড়কের ১ কিলোমিটার অংশ। সেখানে মাত্র সাত ঘণ্টায় হত্যা করা হয় অন্তত ৬০ জন মানুষকে। তাঁদের মধ্যে ৫৬ জন শহীদ হন প্রাণঘাতী গুলিতে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের দিন যাত্রাবাড়ী থানাকেন্দ্রিক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। সেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা ও প্রমাণ উঠে এসেছে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রে। উল্লেখ্য, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অন্তত মোট ১১৭ জন শহীদ হয়েছেন বলে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

রক্তাক্ত মহাসড়ক: যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড শিরোনামের এই প্রামাণ্যচিত্র গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। দর্শকেরা প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে গিয়ে এটি দেখতে পারছেন।

আরও পড়ুনআমার ধারণা, শেখ হাসিনার শেষ দিন ভারতেই কাটবে : আসিফ নজরুল১৮ ঘণ্টা আগেযাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্রটি সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান।ডেভিড বার্গম্যান, সাংবাদিক

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে প্রামাণ্যচিত্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, পলায়নরত, নিরস্ত্র, মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন—এমন মানুষকে যুদ্ধক্ষেত্রেও হত্যা করা যায় না। পৃথিবীর যেকোনো আইনে এটা যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে দেখা গেছে, পালিয়ে যাচ্ছেন, এমন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর একজন মানুষ হাতজোড় করছেন, তাঁকে কাছে থেকে গুলি করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, পুলিশকে যিনি এ রকম একটা অমানুষ, বেপরোয়া, ভয়াবহ বাহিনীতে রূপান্তর করেছেন, তিনি কত বড় অমানুষ?

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অসংখ্য ফুটেজ (ভিডিও) আছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি শেখ হাসিনার স্ট্যান্ডার্ডে (মান) বিচার করতাম, তাহলে এই বিচার চার থেকে পাঁচ মাসে হয়ে যেত। আমরা সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক, জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য, ২০ বছর, ৩০ বছর পরও যেন বিচার নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে এবং আইন সংশোধন করে বিচার করছি।’

জুলাই হত্যাযজ্ঞের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার শেষ হলেও তাঁকে হয়তো দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে ধারণা করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, তাঁর শেষ দিন ভারতেই কাটবে।’

৩৫ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্র

প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্রটি প্রায় ৩৫ মিনিটের। তবে এটি তৈরি করতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে পাঁচ মাস ধরে। শত শত ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড ধরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড যেখানে হয়েছে, সেখানে একই সময়ে ধারণ করা বিভিন্ন ফুটেজ ফ্রেম ধরে এবং গুলির শব্দ শুনে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এভাবে কয়েকটি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোনো সুনির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ চিত্র দাঁড় করানো হয়েছে। এমনকি কোন ভবন থেকে গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে, বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা বের করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞের মতামত।

প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরিতে ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তির পাশাপাশি আন্দোলনে যুক্ত অন্তত ৫০ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে শুধু ঘটনা বোঝার জন্য। এর বাইরে সেদিন শহীদ হওয়া ৬০ জনের প্রত্যেকের পরিবারে সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নিহত ব্যক্তিদের ঘটনাস্থলের ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান, মৃত্যুসনদ বিশ্লেষণ করে তাঁর মৃত্যুর কারণ খোঁজা হয়েছে।

প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করেছে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কনটেন্ট ক্রিয়েটর আব্দুল্লাহ আল হোসাইনের নেতৃত্বাধীন একটি দল।

আরও পড়ুনযাত্রাবাড়ী হত্যাযজ্ঞের নির্মম চিত্র২১ ঘণ্টা আগে‘একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান’

প্রদর্শনী শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, যাত্রাবাড়ী হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম আলোর প্রামাণ্যচিত্রটি সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় অনুসন্ধান। একটি গল্প কীভাবে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, এটি এমনই একটি অনুসন্ধান।

প্রামাণ্যচিত্রের একটি অংশ দেখা গেছে, কপালে পতাকা বেঁধে ঘুরছেন—এমন একজনের কপালে গুলি করা হয়েছে। সেই কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা তাঁর বক্তব্যে বলেন, এমন দৃশ্য দেখার পর কোনো কথা বের হয় না। এর চেয়ে ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে!

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা, গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ, শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, কলাম লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী সঞ্জীব দ্রং, সাইটসেভার্সের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর খোন্দকার সোহেল রানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তারিক মনজুর, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক কল্লোল মোস্তফা, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশনস আবদুল কাইয়ুম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ কর্মীরা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রথম আলোর ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, তখন তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। যখন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল, এসব তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। প্রথম আলো সাহসিকতার সঙ্গে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মৃত্যুর হিসাব রেখেছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথম আলো তা প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর চেষ্টা ছিল সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও প্রথম আলো নানা উদ্যোগ নিয়ে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে।

আরও পড়ুন৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র উঠে এল বিবিসির অনুসন্ধানে০৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ