বর্ষার রাত, শহরজুড়ে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি, আর ভেতরে বিলাসবহুল বাড়ির ঘরে ঘন অন্ধকার। এমনই এক রাতে ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহা। ক্লান্ত সোনাক্ষী সেদিন শুটিং শেষে বাড়ি ফিরে সরাসরি ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু হঠাৎ গভীর রাতে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। চোখ বন্ধ, কিন্তু মন যেন জেগে আছে– ঠিক তখনই টের পান, কিছু একটা অদৃশ্য সত্তা যেন তাঁকে জোরে চেপে ধরছে।

সোনাক্ষীর কথায়, ‘মনে হচ্ছিল, দুটো শক্ত হাত আমার গা চেপে ধরেছে। একটুও নড়তে পারছিলাম না। এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে, চোখ খুলে তাকাতেও সাহস পাইনি। নিথর হয়ে পড়েছিলাম।” আস্তে আস্তে জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের আলো ঢুকতেই সেই চাপ কমে আসে, কিন্তু আতঙ্কটা থেকে যায়। সোনাক্ষী বলেন, “আমি তখন বুঝতেই পারছিলাম না, এটা স্বপ্ন নাকি বাস্তব। কিন্তু একটা ব্যাপার নিশ্চিত– ঘরে আমি একা ছিলাম না।’

ঘটনার পর দিনও সেই ভয় তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। শুটিংয়ে গেলেও মন পড়ে ছিল আগের রাতের অভিজ্ঞতায়। রাতে ফেরার পর নিজের ঘরের দরজা খুলেই সোজা বলে ওঠেন, “কাল রাতে যেটা এসেছিলে, প্লিজ আর এসো না! যদি কিছু বলার থাকে, স্বপ্নে এসো। সামনে এসে আর ভয় দেখিয়ো না।” এরপর কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে দেন সোনাক্ষী। অনেকে বলেন, ওই ঘটনার পর থেকেই তিনি প্রাসাদোপম সেই বাড়ি ছেড়ে নতুন ঠিকানায় চলে যান।

‘নিকিতা রায়’ সিনেমার প্রচারে গিয়ে সোনাক্ষী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি আগে ভূতে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু ওই রাতটার পর থেকে আমার ধারণা পাল্টে গেছে। এটা যদি সত্যিই কোনো অশরীরী আত্মা হয়ে থাকে, তবে হয়তো বন্ধুসুলভ ছিল, কারণ এরপর আর কখনও ফিরে আসেনি।”

হীরামন্ডি-খ্যাত এই অভিনেত্রীর এই অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে ঝড়ের বেগে। অনেকেই বলেছেন, এমন অভিজ্ঞতা তারাও পেয়েছেন। কেউ কেউ তো বিশ্বাস করেন, তারকা হওয়া মানেই যেমন গ্ল্যামার, তেমনি অলৌকিক কিছু ঘটনা ঘিরেও চলতে হয় তাদের জীবন। যা-ই হোক, সোনাক্ষীর সেই এক রাতের অভিজ্ঞতা আজও তাঁর মনে গেঁথে আছে। গল্পটা যেন ঠিক হরর ফিল্মের চিত্রনাট্য। কিন্তু বাস্তবে যেটা ঘটেছে, সেটা সিনেমা থেকেও বেশি গা ছমছমে।

আর এই গল্পই প্রমাণ করে– তারকা হলেও ভয়টা সবারই থাকে, আর ভূত… সেটা বিশ্বাস না করলেও, মাঝেমধ্যে ঠিকই এসে পড়ে জীবনের মাঝখানে! সোনাক্ষীর সেই এক রাতের অভিজ্ঞতা যেন কোনো হরর সিনেমার চিত্রনাট্য। অথচ ঘটনাটি বাস্তব এবং সেই কারণেই হয়তো আরও বেশি ভয়াবহ। তারকা হলেও ভয় সবারই থাকে। আর ভূত… তারা বিশ্বাসের তোয়াক্কা না করেই মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে জীবনের মাঝখানে এসে পড়ে!

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে: শফিকুল আলম

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক খুনির বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেপে করা হবে। কেউ যেন বলতে না পারে, যে নিয়ম না মেনে অবিচার করা হয়েছে।

অতীতে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে দাবি করে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা বিদেশি কনসাল্ট্যান্ট রেখেছি, যাতে কেউ না বলতে পারে যে না উনারা এসে একটা ক্যাঙারু কোর্ট সেটআপ করেছে। আপনারা জানেন আমাদের হিস্ট্রি আছে ক্যাঙারু কোর্ট করার। কতজনকে তাঁরা ফাঁসি দিয়েছেন। আমরা চাই না বাংলাদেশে এ ধরনের ক্যাঙারু কোর্ট। সময় নিচ্ছি একটু। আপনারা ধৈর্য ধরেন, প্রত্যেক খুনির বিচার হবে। কেউ বাদ যাবে না। এটা শহীদদের সঙ্গে আমাদের ওয়াদা।’

উল্লেখ্য, ক্যাঙারু কোর্ট হলো এমন আদালত বা বিচারব্যবস্থা, যেখানে প্রচলিত আইন ও বিচারব্যবস্থার নিয়মকানুনকে উপেক্ষা করা হয় বা সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে না। সাধারণত পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে দ্রুত বিচারকাজ পরিচালনা করে।

আজ রোববার সাভারের আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানের আজ ছিল সমাপনী অনুষ্ঠান। সেখানে জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে স্মরণ করা হয়।

ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে সময় দিতে হবে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪টি বড় মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ২৭টি মামলার তদন্ত চলছে। ১৮টি মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়েছে। ন্যায়বিচার করতে হলে সত্যিকার অর্থে একটু সময় দিতে হবে। আমরা তাড়াহুড়ো করে যদি অন্যায়-অবিচার করি, তাহলে সেটি নিয়ে বাইরে কথা ওঠবে, যে উনারা জোর করে উনাকে (শেখ হাসিনা) ফাঁসি দিচ্ছেন। জোর করে ওনার প্রতি অন্যায় চাপিয়ে দিচ্ছে। আমরা এটা চাই না।’

বাংলাদেশ থেকে রাজতন্ত্রের ইতি টানতে জুলাই যোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ পরিবারের দাস-দাসী ছিলাম। সেখান থেকে আমাদেরকে মুক্ত করে একটা ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি (গণতান্ত্রিক দেশ) করার জন্য তাঁরা শহীদ হয়েছেন, আত্মদান করেছেন। আমরা সেই জায়গায় যেতে চাই।’

শফিকুল আলম বলেন, জুলাই যোদ্ধারা ভোটের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য শহীদ হয়েছেন। তিনি সবাইকে আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর হবে।

আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জুলাই যোদ্ধা আবু সাদেক কায়েম। তিনি বলেন, এক বছর পরও বিপ্লবের প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়া, কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া ধীরগতির। এখনো শহীদ পরিবারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি, পুনর্বাসন ও যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘যাঁদের রক্তে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে—এটি রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। আহত ও পঙ্গুদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’ পাশাপাশি তিনি খুনি হাসিনার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ফজলুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মতিউর রহমান আকন্দ।

জুলাই অভ্যুত্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ছাত্র শাকিল হোসেন পারভেজ ও ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ শহীদ হন। আজ শহীদ শাকিলের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে চত্বর উদ্বোধনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। চত্বরটি উদ্বোধন করেন শাকিলের বাবা বেলায়েত হোসেন। এরপর আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর নামে লাইব্রেরি উদ্বোধন করবেন তাঁর মা আসিয়া খাতুন। দুপুর পৌনে ১২টায় দুই শহীদের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ করা হয়।

১৮ জুলাই লক্ষ্মীপুরে শহীদ শাকিল হোসেন পারভেজের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে পক্ষকালব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর ছিল টাঙ্গাইলে শহীদ আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহর কবর জিয়ারত, শহীদ ও আহতদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পবিত্র কোরআন বিতরণ, জুলাই বিপ্লবে নারীদের অবদান শীর্ষক সেমিনার, পোস্টার ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচি এবং পৃথক ইন্ডোর গেমস প্রতিযোগিতা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০ বছরের ছেলেকে বিমানবন্দরে রেখেই বেড়াতে যাচ্ছিলেন বাবা-মা, এরপর
  • ‘বিদায় দেওয়ার সময় বলেছেন, দুজন গাড়িতে ঘুমাবেন, আর ফোন ধরেননি’
  • স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে গুগলের জেমিনি এআই
  • প্রেমের টানে চীনা যুবক দিনাজপুরে, মুসলিম হয়ে করলেন বিয়ে 
  • ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল, আছে ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’ও
  • শ্রেণিকক্ষে বিষমিশ্রিত পানি খেয়ে ৫ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
  • ঘর থেকে তুলে নিয়ে চুরির অপবাদে নির্যাতনের শিকার জাকিরের চোখ হারানোর শঙ্কা
  • নেই মেসি, হারল মায়ামি
  • প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণের কাছে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সের ফোন, এরপর যা ঘটল
  • ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে: শফিকুল আলম