সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগ নেতার দখলবাজি, মামলা
Published: 24th, June 2025 GMT
সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের মহজমপুর এলাকায় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কাজী শাহাজাদার বিরুদ্ধে জমিসহ দোকান দখলের অভিযোগ উঠেছে। দখলের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী।
গত সোমবার নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী ৫নং আদালতে তিনজনকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দায়ের করেন একই এলাকার কাজী কুতুবউদ্দিনের ছেলে কলেজছাত্র কাজী জুদান।
এর আগে গত ৩১মে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে বন্ধ করে দেয় অভিযুক্তরা। পরদিন তালতলা তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়ের করলেও রহস্যজনক কারনে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
জানা যায়,উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের মহজমপুর কাজীপাড়া গ্রামের কাজী কুতুবউদ্দিনের ছেলে কাজী রিদোয়ান ২ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে নামজারি করে ২০বছর ধরে দোকান নির্মাণ করে ভোগ দখল করে আসছেন।
সম্প্রতি একই গ্রামের মৃত কাজী ইউনুস মিয়ার ছেলে ও জামপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কাজী শাহাজাদা, ভাতিজির জামাই আরিফ ইসলাম ও ভাতিজি কাজী আয়েশা আক্তার ওই জায়গা নিজের দাবি করেন।
পরবর্তীতে স্থানীয়ভাবে জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ওই জমি কাজী রিদোয়ানের বলে রায় দেওয়া হয়। এ রায় অমান্য করে কাজী আয়েশা আক্তার নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় নিজেদের প্রমাণ দিতে না পারায় ২০২৫ সালের ২৯ জানুয়ারী স্ব স্ব দখলে থাকার নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালতের রায় অমান্য করে গত ৩১মে শনিবার তারা পুনরায় ওই জমিতে গড়ে উঠা দোকানে গিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ ঘটনায় কাজী রিদোয়ানের ছোট ভাই কাজী জুদান বাদি হয়ে পরদিন তালতলা তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দায়ের করেন।
ওই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরে গত সোমবার নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী ৫নং আদালতে তিনজনকে আসামী করে কলেজ ছাত্র কাজী জুদান বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মুড়াপাড়া সরকারী কলেজের ছাত্র ও মামলার বাদি কাজী জুদান জানান, এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয় দিয়ে তার সংসারসহ পাড়াশোনার খরচ চালাতে হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট করে বন্ধ করে দেওয়ায় তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। অভিযুক্তরা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে হামলা ও ভাংচুর করেছে।
অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা কাজী শাহাজাদাকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল হক বলেন, দোকান দখল ও ভাংচুরের ঘটনার অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। ভূক্তভোগীরা পুলিশকে সময় না দিয়েই আদালতে মামলা দিয়েছেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ ন র য়ণগঞ জ দ য় র কর ন তদন ত আওয় ম ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে যে কারণে মাসের পর মাস পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ
দখল-দূষণে খাল ভরাট ও অপরিকল্পিত সেচ প্রকল্প নির্মাণের ফলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পানি আটকে ভোগান্তিতে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
অল্প বৃষ্টিতে উপজেলার অগ্রণী সেচ প্রকল্প এলাকার বাসা-বাড়ি তলিয়ে যায়। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মাসের পর মাস পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয় তাদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেচ প্রকল্পের মধ্যে থাকা খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ড্রেনের মুখ খুলে দিলেও সংস্কার না হওয়া ক্যানেলগুলো বন্ধ থাকায় পানি যেতে পারে না। ত্রুটিপূর্ণ ক্যানেল দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। অগ্রণী সেচ প্রকল্পের ভেতরের বিভিন্ন এলাকায় এখন থৈ-থৈ পানি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সাত ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার অধিকাংশ জায়গার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তারাব, বরপা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল,মধ্যপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, বৌবাজার, খালপাড়, ইসলামবাগ, নতুন বাজার, কান্দাপাড়া, বলাইখা, বিজয়নগর, মদিনানগর, তেঁতলাব, কর্নগোপ, শান্তিনগর, বাগানবাড়ি, পশ্চিম কান্দাপাড়া, মাসাব, যাত্রামুড়া, রূপসী মাঝিপাড়া, সোনাব, পাঁচাইখা, ইসলামপুর, কাঞ্চন ও হাটাবসহ আশপাশের এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা।
এতে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়ির উঠোনে হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি। অনেকের বসত ঘরে ২-৩ ফুট পানি। রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে। জমির ফসল হলদে হয়ে মরে যাচ্ছে। গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। বাড়িতে পানি উঠায় কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বাঁশের মাচার ওপর বসবাস করছেন।
কয়েকটি শিল্প কারখানায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি স্থানে নৌকায় ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব।
শিল্প-কারখানার নির্গত ক্যামিকেল ও দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে দূষণ হয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। নারী ও শিশুরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
গোলাকান্দাইল এলাকার মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন বর্জ্যে খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যুগ যুগ ধরে এ সময়টাতে এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেচ প্রকল্পের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষকে জলাবদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে।’
কর্নগোপ গ্রামের গৃহবধূ শামীমা বেগম বলেন, ‘এখানকার নিচু এলাকা সব ডুবে গেছে। ঘরে হাঁটু সমান পানি। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। চুলায় আগুন জ্বালাতে পারি না। বিশুদ্ধ পানি নেই। অনেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে এ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।’
মাসাব এলাকার সার্ভেয়ার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর একই সমস্যা চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে দুর্ভোগকে মেনে নিচ্ছে। কিছু শিল্প মালিক ও প্রভাবশালীরা নিজ স্বার্থে খালগুলো ভরাটের কারণে অগ্রণী সেচ প্রকল্পের খালগুলো ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অল্প বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।’
তেঁতলাব এলাকার সুমন রানা বলেন, ‘বৃষ্টি শুরু হলে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। কোমর পানি পার হয়ে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে হয়। প্রায় প্রতি বর্ষায় পানির নিচে ডুবে থাকি।
একটু বৃষ্টি হলে রাস্তা-ঘাট, ঘরের উঠানসহ সব পানিতে তলিয়ে যায়। এ পানি রোগের উৎস হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চর্মরোগ, এলার্জি, ঘা ও চুলকানি দেখা দিচ্ছে মানুষের।’
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন ও ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা আটটি খাল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
পানি নিষ্কাশন কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য তারাব অংশে তিনটি সেচ পাম্প বসানো হয়েছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে এ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে।‘
পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জের উপ-পরিচালক রাকিবুল আলম রাজিব বলেন, ‘জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো এখানকার অধিকাংশ খাল দখল হয়ে গেছে। বিশেষ করে তারাব পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের দখলে।
ফলে পানি জমলে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। সেচ প্রকল্পে পানি নিষ্কাশন স্বাভাবিক করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।‘
পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে অবগত হই যে কিছু প্রতিষ্ঠান অগ্রণী সেচ প্রকল্পের পানি নিষ্কাশন খাল বালি ভরাটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দখল করে রেখেছে।
তদন্ত শেষে ৩০ জুলাই ১২টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠির মাধ্যমে নিজ উদ্যোগে অবৈধভাবে দখল করা খালের জমি ছাড়তে বলা হয়। অন্যথায় খুব দ্রুত আমরা একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করব।’