জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশা পূরণে ব্যাংক খাতের সংস্কারে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংস্কারে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের কথা শোনা যাচ্ছে না। রাষ্ট্র সংস্কারে ইতিপূর্বে গঠিত ছয়টি কমিশনের রিপোর্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংস্কার নিয়ে কোনো আলোচনা ছিল না, এমনকি গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত ঐকমত্য কমিশনের এজেন্ডাতেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

এ নিয়ে কোনো প্রত্যাশা বা প্রতিশ্রুতি কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিসর থেকে উচ্চারিত হচ্ছে বলেও জানা যায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্র, যেখানে রাজনীতি ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই অত্যন্ত দুর্বল, সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংস্কার তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ বিষয়ে এখনই জাতীয়ভাবে সমন্বিত সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা ও শক্তিশালী অঙ্গীকার প্রয়োজন। 

কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি

আধুনিক অর্থব্যবস্থায় মানুষের শ্রম বা উৎপাদনের পুঞ্জীভূত রূপটিই হচ্ছে টাকা। একজন শ্রমিকের মজুরি, কৃষকের উৎপাদন কিংবা চাকরিজীবীর মাইনে সাধারণত টাকাতেই রূপান্তরিত হয়। একটি কাগজের নোট আদতে মূল্যহীন। কিন্তু সেই নোট তখনই মূল্যবান এবং বিনিময়ের সর্বজনগ্রাহ্য মাধ্যম তথা টাকা হয়ে ওঠে যখন রাষ্ট্র সেটি বাজারে ছাড়ার পাশাপাশি এই নিশ্চয়তা দেয় যে নোটটির বিপরীতে সমপরিমাণ সম্পদ গচ্ছিত আছে। কাগজের নোটটি তখন সম্পদ হয়ে ওঠে এবং সবাই সেই সম্পদে আস্থা রাখে। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও জনপ্রিয় লেখক ইউভাল নোয়াহ্ হারারির ভাষায়, টাকাই মানুষের উদ্ভাবিত সবচেয়ে সর্বজনীন ও সফল পারস্পরিক বিশ্বাসব্যবস্থা, যা ধর্মের মতোই কাজ করে। সুতরাং মানুষের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই টাকা বাজারে চলে।

কিন্তু যেহেতু জনগণের সমর্থন নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল সরকার গঠনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী (পাঁচ বছর) রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ ক্ষমতা তার হাতে থাকে, সেহেতু সাময়িক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সরকার বাজেট–ঘাটতি মেটাতে সম্পদের অতিরিক্ত টাকা বাজারে ছাড়তে পারে। এই ‘মোরাল হ্যাজার্ড’ (নৈতিক ঝুঁকি) দূর করতে এবং অর্থব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা বজায় রাখতে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় টাকা ছাপানো এবং অর্থব্যবস্থার একটি বড় অংশ দেখভালের কাজ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে সঁপে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজই হলো প্রথমত দেশের অর্থনীতিতে মূল্য স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং দ্বিতীয়ত, দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা পালন করা। 

এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা ও পেশাদারত্ব অপরিহার্য, যা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত না হলে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হলে স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক স্বার্থে বা গোষ্ঠী স্বার্থে টাকার অতিমুদ্রণ, ঋণনীতি শিথিলকরণ বা আর্থিক খাতে পক্ষপাতিত্বমূলক তদারকি হতে পারে, যা মুদ্রার প্রকৃত মূল্যহ্রাস, মজুরি হ্রাস, খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানিতে সংকট, মুদ্রা পাচার, স্বজনতোষী ধনতন্ত্র (ক্রনি ক্যাপিটালিজম) তৈরি ও ঋণ কেন্দ্রীভূতকরণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ধীরে ধীরে বাজার থেকে বিতাড়িত করতে পারে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, বৈষম্য কমাতে ও দীর্ঘ মেয়াদে দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা 

বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ‘বডি করপোরেট’, যেটি শুধু অর্থবিষয়ক সংসদীয় কমিটির কাছে মুদ্রানীতি ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড বিষয়ে জবাবদিহি করে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর ও বোর্ড সদস্যদের নিয়োগ ও অব্যাহতি দেয় সরকার। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তানির্ভর সমন্বয় কাউন্সিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ রাখে। পাশাপাশি সরকার প্রয়োজন মনে করলে বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ডের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে নিজের সিদ্ধান্ত আরোপ করতে পারে এবং গভর্নরকে সরিয়ে যেকোনো সরকারি কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে। এ ছাড়া সরকার অর্থ চাইলে তা এড়ানোর জন্য কোনো আইনি রক্ষাকবচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই, এমনকি সংবিধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্তিত্বের স্বীকৃতিও নেই। 

অতএব, ‘বডি করপোরেট’ হিসেবে তাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও আদতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান। আর এ কারণেই নিকট অতীতে অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক হওয়া সত্ত্বেও সরকারের চাপে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন কায়েমি গোষ্ঠীকে একের পর এক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির লাইসেন্স দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্য হয়েছে। ভয় দেখিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যাংকের বোর্ড দখল করেছে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে শুরু করে নতুন-পুরোনো বিভিন্ন ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির অর্থ নামে-বেনামে ঋণের নামে পরিকল্পিত উপায়ে লুট হয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক তঁাদের আমানত ফিরে পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। 

এ সময় ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স খাতের বেশির ভাগ ঋণ গুটিকয়েক গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি করে দেশের বাজারব্যবস্থাকে সিন্ডিকেটে বন্দী করে ফেলা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির উল্লম্ফনের আড়ালে বিদেশে সম্পদ পাচার হয়েছে। এমনকি রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রাঋণ দেওয়ার মতো তুঘলকি কাণ্ডও ঘটেছে। গুটিকয় লুটেরা গোষ্ঠীর স্বার্থে ‘নয়-ছয়ের’ মতো বাজারবিরুদ্ধ ঋণ-আমানতের সুদসীমা আরোপ করা হয়েছে। করোনা মহামারির মতো বিপর্যয়েও এসব গোষ্ঠী বাজেট বরাদ্দ এবং ব্যাংকিং খাতের টাকা প্রণোদনার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছে। এসব প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ ছাড়া উন্নয়নের নামে টাকা ছাপিয়ে সরকারের অপরিকল্পিত ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে সহায়তা দিতে বাধ্য হয়েছে, যা বাজারে মুদ্রাস্ফীতিকে আরও বাড়িয়েছে।  

বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে পরিস্থিতি হয়তো ভিন্ন হতো, তাতে আখেরে সরকারও বিপর্যয় থেকে রেহাই পেত। তাই দেশের ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। 

আরও পড়ুনসবার আগে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কার কেন দরকার০৮ অক্টোবর ২০২৪

স্বাধীনতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে করণীয় 

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন ও কাজের স্বাধীনতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এর লক্ষ্য নির্ধারণ, লক্ষ্য পূরণে কৌশল নির্ধারণ ও নিজস্ব বাজেট নির্ধারণের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ইন্দোনেশিয়া কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান বিবেচনা করা যেতে পারে। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি।

 ১.

বাংলাদেশ ব্যাংককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্দিষ্টকরণ ও এর কাজের স্বাধীনতাকে সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চয়তা দান;

২. কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনাগত, প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান (এ ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইন, ২০২৩-এর ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে);

৩. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য মুদ্রানীতি বোর্ড এবং গভর্নিং বোর্ড নামে দুটি পৃথক বোর্ড গঠিত হতে পারে, প্রস্তাবিত ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল (এনসিসি) বা সংসদ দ্বারা নির্ধারিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি বা সরকার কর্তৃক এই বোর্ডের সদস্যদের নিয়োগ প্রদান;

৪. এনসিসি বা সংসদ কর্তৃক নিযুক্ত সার্চ কমিটির পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি বা সরকার কর্তৃক গভর্নরের নিয়োগ প্রদান; তাঁর অপসারণের প্রয়োজনে সংসদের অনুমোদন গ্রহণ; ডেপুটি গভর্নরের নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা বোর্ডের নিকট অর্পণ; দুটি সরকারের মধ্যে আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় বোর্ড সদস্য ও গভর্নরের দায়িত্বকাল ছয়-সাত বছর নির্ধারণ;

৫. প্রাইমারি মার্কেট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সরকারের বিল বন্ড ক্রয় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা;

৬. গভর্নরকে নিয়মিত বিরতিতে সংসদের নিকট জবাবদিহির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ (এ ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি, মন্দ ঋণের মাত্রা ইত্যাদির পূর্বঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা (সংসদ কর্তৃক গভর্নরের ব্যাখ্যা গৃহীত না হলে) যে তাঁর অপসারণের কারণ হতে পারে, তা আইনে উল্লেখ থাকতে পারে)। 

একটি রাষ্ট্র তখনই গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠে, যখন এর প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণমূলক হওয়ার পাশাপাশি এদের মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও এগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। রাষ্ট্রের ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ (প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য) রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

এ দেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আবশ্যক। বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে এবং এ বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করবে বলে প্রত্যাশা করি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলাপে অবিলম্বে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাও জরুরি। 

·● কামরুল ইসলাম সুশাসন, ব্যাংকিং ও রাজনৈতিক অর্থনীতি বিশ্লেষক

জিয়া হাসান অর্থনীতিবিদ

* মতামত লেখকদের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র স ব ধ নত ন শ চ ত কর র জন ত ক ব যবস থ ক সরক র সরক র র র জন য আর থ ক কর ত ক ত করত গভর ন

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিক তুহিনের মোবাইল ফোন খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ 

সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ভিডিও ধারণ ও সত্য উন্মোচন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় জড়িত আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে তার ব্যবহত মোবাইল ফোনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ তার মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি। 

ধারণা করা হচ্ছে সাংবাদিক তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা গেলে ঘটনার রহস্য আরও বেশি স্পষ্ট ও স্বচ্ছ প্রমাণিত হবে। সচেতন মহল ও সাংবাদিক সমাজ বলছে, মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে ঘটনার মোড় ঘুরে যেতে পারে। এসকল সন্ত্রাসী, তাদের মদদদাতা ও হত্যার আসল রহস্য বের হয়ে আসতো। 

নিহত সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। 

তার সহকর্মী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক তুহিন দু’টি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। তিনি চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপানা নিয়ে ভিডিও ধারণ করতেন। স্পর্শকাতর ছাড়া মোটামুটি সব ভিডিও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতেন। 

হত্যাকাণ্ড সংঘটিত এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকাতেই অধিকাংশ সময় কাটাতেন তুহিন। যার কারণে এ এলাকার মোটামুটি সব অনিয়ম ও অপরাধীরা তার পরিচিত ছিল। 

সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র ও পুলিশের ভাষ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার বাদশা নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক হতে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। এসময় আসামি গোলাপী তাকে হানিট্রাপে ফেলার চেষ্টা করে। এটি যখন বাদশা বুঝতে পারে, তখন তার থেকে ছুটতে চায় এবং কিল-ঘুষি মারে। এসময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা অন্য আসামিরা এসে একটি মুদী দোকানে বাদশাকে কোপানো শুরু করে। বাদশা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে। 

ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন নিজের পেশাগত কারণেই ভিডিও করে। আসামিরা সাংবাদিক তুহিনকে ভিডিও ডিলেট করতে বলে কিন্তু তিনি রাজি হননি। এক পর্যায়ে ওই আসামিরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে প্রথমে চান্দনা চৌরাস্তায় শাপলা ম্যানশনের সন্ত্রাসীরা বাদশা নামে লোকটার উপরে হামলা করে। ওই ঘটনার ২০-৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থলের ঠিক বিপরীত পাশে মসজিদ মার্কেটের সামনে চায়ের দোকানে সাংবাদিকের উপর হামলা করে। এই দীর্ঘ সময় সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দিতেও দেখা গেছে। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন খান বলেন, “নিহত সাংবাদিকের দু’টি মোবাইল ফোন ছিল কিন্তু এখনো তার খোঁজ আমরা পাইনি। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদেও পাওয়া যায়নি ফোন। আমরা তার নম্বর ট্রেকিং করে রেখেছি। ফোন বন্ধ থাকায় লোকেশনও সনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা ফোনটি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/রেজাউল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ