রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়ায় ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে কাজল খাতুন (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রী মারা গেছে।

গতকাল বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। কাজল স্থানীয় মান্নান হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

পারিবারিক সূত্র জানায়, কাজল তার মা–বাবার সঙ্গে কোনাপাড়ায় ছয়তলা ভবনটির চতুর্থ তলায় ভাড়া থাকত।

কাজলের মামা সুমন পাটোয়ারী আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির ছাদ বর্ধিত করার জন্য নির্মাণকাজ চলছে। গতকাল রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে গরম লাগছিল। তখন কাজল ভবনের ছাদে যায়। একটু পরে তার মা–ও ছাদে যান। একপর্যায়ে অসাবধানতাবশত ছাদ থেকে পা পিছলে নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় কাজল।

কাজলকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতাল নেওয়া হয় বলে জানান সুমন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে গতকাল রাত ১২টার দিকে কাজলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কাজল মারা যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো.

ফারুক বলেন, লাশটি মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি ডেমরা থানা-পুলিশকে জানানো হয়েছে।

কাজলদের গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা। কাজলের বাবা কামাল হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি। দুই বোনের মধ্যে কাজল বড় ছিল।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ

বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা বিতর্কিত সেই জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূল স্টিল নামে এই কারখানাটিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এ সময় কারখানার ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন হোসেন অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানে সেনা, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সহযোগিতা করেন। এর আগে জেলা প্রশাসনই বনের জায়গায় জাহাজাভাঙা কারখানা স্থাপনের জন্য দুইবার ইজারার অনুমতি দিয়েছিল। আপত্তির পর আবার ইজারা বাতিল করা হয়েছিল। কোহিনূর স্টিল নামে এই কারখানাটি স্থাপন করেছিলেন আবুল কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ‘রাজা কাসেম’ নামে পরিচিত।

ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন হোসেন অভিযানের সময় বলেন, ‘তুলাতলী মৌজায় কারখানাটি যেখানে হয়েছে, সেটি জাহাজভাঙা কারখানার অঞ্চলভুক্ত এলাকা নয়। তুলাতলী মৌজায় সরকারি খাসজমি ও বনাঞ্চল দখল করে এটি গড়ে উঠেছিল। সেটি এখন উচ্ছেদ করা হয়েছে।’

উচ্ছেদের জন্য এক্সকাভেটরের পাশাপাশি অন্তত ৩০ জন শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়। উচ্ছেদের সময় সেখানে লোকজনের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। গণমাধ্যমকর্মীদেরও ঢুকতে দেওয়া হয় সীমিত পরিসরে। ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী আবুল কাসেম কারখানার বাইরে রাস্তায় অপেক্ষা করছিলেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলে।

এ সময় আবুল কাসেম দাবি করেন, ‘২০২২ সালে সরকারি নীতিমালার আলোকে ইজারা নেওয়া হয়। বর্তমানে যে ভবনটি ভাঙা হচ্ছে, তা উত্তর সলিমপুর মৌজায় অবস্থিত। তুলাতলী মৌজাতে ছিল না। বিগত সরকারের দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করে যে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন তাতে ছিল উত্তর সলিমপুর মৌজা। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকে একটি মহল আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকতায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ অবৈধভাবে ভাঙার বিষয়ে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানান তিনি।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, তুলাতলী মৌজায় বন বিভাগের ২০ ধারায় নোটিফিকেশনকৃত বনাঞ্চল রয়েছে। ইজারা চুক্তিতে কাগজে–কলমে সলিমপুর মৌজা দেখানো হলেও মূলত তুলাতলী মৌজায় বিতর্কিত এই ইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বন বিভাগ বারবার এই ইজারায় আপত্তি জানিয়ে আসছিল। আপত্তি উপেক্ষা করে তখনকার জেলা প্রশাসকেরা একই ভূমি দুইবার রাজা কাসেমকে ইজারা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথম ৭ দশমিক ১০ একর ভূমি শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা পায় কাসেমের বিবিসি স্টিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি পদক্ষেপ নেয় এই ইজারার বিরুদ্ধে। কিন্তু তুলাতলী মৌজাটি বনাঞ্চল ঘেরা হওয়ায় উচ্চ আদালত ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ইজারা চুক্তি অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে আর ইজারা চুক্তি নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসন।

বিবিসির নামে ইজারা বাতিল হওয়ার পর কাসেম তাঁর স্ত্রী কোহিনূর আকতারের নামে নতুন করে একই জায়গায় জমি ইজারার আবেদন করেন। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় কোহিনূর স্টিল। এরপর ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কোহিনূর স্টিলের নামে সীতাকুণ্ডের উত্তর সলিমপুর মৌজা দেখিয়ে পাঁচ একর বনভূমি ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় ‘প্রথমে ব্যর্থ পরে “কৌশলে” ইজারা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৮ জুন ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদারতায় ইয়ার্ডের পেটে ৫ হাজার গাছ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসন সীতাকুণ্ডের কোহিনূর স্টিল নামের ওই জাহাজভাঙা কারখানার ইজারা বাতিল করেছিল। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে ইজারা চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন কোহিনূর স্টিলের মালিক আবুল কাসেম। ইজারা ফিরে পেয়ে কারখানাটিতে ফের জোরেশোরে কাজ শুরু করা হয়। সীতাকুণ্ডের সলিমপুর এলাকার তুলাতলী মৌজায় কোহিনূর স্টিল নামে ইয়ার্ডটির অবস্থান। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় বাতিল হওয়া ইজারা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর কাসেম আবার ওই জায়গায় কাজ শুরু করেছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই জাহাজভাঙা কারখানার কারণে আমাদের অনেক বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এখন ইয়ার্ড উচ্ছেদ হয়েছে। আমরা আবার বনাঞ্চল করব ওই জায়গায়।’

আরও পড়ুনপ্রথমে ব্যর্থ, পরে ‘কৌশলে’ ইজারা২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সীতাকুণ্ডে বনাঞ্চল কেটে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙা কারখানা উচ্ছেদ
  • অস্থায়ী কার্যালয়ে ‘মুক্তি ঐক্যদল’, দলীয় প্রধান এমপি হয়ে আবার বিয়ে করতে চান
  • কোনো দলের কার্যালয় আসলে ভাতের হোটেল, কোনোটার ট্রাভেল এজেন্সি