নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর আগের সব নবীর সঙ্গে এক গভীর আধ্যাত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। আদম (আ.) থেকে ঈসা (আ.) পর্যন্ত সব নবী একই বার্তা বহন করেছেন—এক আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ।

নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন এই পবিত্র নবুয়তের শৃঙ্খলের শেষ ও চূড়ান্ত সংযোগ। কোরআন ও নবীর জীবনীতে এই বন্ধনকে একটি সাধারণ মিশন, ভালোবাসা এবং সম্মানের বন্ধন হিসেবে বারবার জোর দেওয়া হয়েছে।

নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দীন হল ইসলাম।সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৯এক বার্তা: আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ

কোরআন স্পষ্টভাবে বলে, নবী মুহাম্মদ (সা.

)-এর বার্তা মানবজাতির জন্য নতুন কিছু নয়। কোরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘বল, আমি রসুলদের মধ্যে প্রথম নই এবং আমি জানি না আমার বা তোমাদের কী হবে। আমি কেবল যা আমার কাছে ওহি হিসেবে আসে, তা অনুসরণ করি। আমি তো একজন স্পষ্ট সতর্ককারী ছাড়া আর কিছু নই।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত: ৯)

ইমাম রাজি (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, নবী এখানে নিজেকে আগের সব নবীর মতো একজন মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের সকলের মূল বার্তা ছিল একই, এক আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ, যা আরবি ‘ইসলাম’ শব্দে প্রকাশিত। ‘ইসলাম’ শব্দের আভিধানিক অর্থ আত্মসমর্পণ বা নিজেকে সমর্পণ করা। কোরআন বলে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র দীন হল ইসলাম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯)

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে ইসলাম—অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ—হল সেই মূল মিশন, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কাছে গ্রহণ করেন। কোরআনের অন্যান্য আয়াতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, প্রত্যেক নবী এই ইসলামের বার্তা নিয়েই প্রেরিত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুননবী ইবরাহিম (আ.) ও চারটি পাখি১৭ জুন ২০২৫এক আল্লাহর উপাসনা: নবীদের সাধারণ মিশন

আল্লাহ সূরা আল-আম্বিয়ায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে বলেন, ‘আপনার আগে আমি যত রসুল প্রেরণ করেছি, তাদের প্রত্যেকের কাছে এই ওহি পাঠিয়েছি যে, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, অতএব তোমরা আমারই ইবাদত কর।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ২৫)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, আদম (আ.) থেকে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সকল নবীর মিশন ছিল এক আল্লাহর উপাসনা প্রতিষ্ঠা করা। নবীদের জীবন থেকে আমরা এই বার্তার প্রতিফলন দেখতে পাই।

আয়াত থেকে স্পষ্ট যে ইসলাম—অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ—হল সেই মূল মিশন, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কাছে গ্রহণ করেন। কোরআনের অন্যান্য আয়াতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, প্রত্যেক নবী এই ইসলামের বার্তা নিয়েই প্রেরিত হয়েছিলেন।নুহ (আ.): ইসলামের ঘোষণা

নবী নুহ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো ইলাহ নেই। আমি তোমাদের জন্য এক মহা দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৯)

তিনি নিজেকে মুসলিম হিসেবে ঘোষণা করে বলেন, ‘যদি তোমরা আমার বার্তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনি। আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর কাছে। আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে আমি মুসলিম হব।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৭২)

ইবরাহিম (আ.): নবীদের পিতা

নবীদের পিতা ইবরাহিম (আ.) ছিলেন একজন মুসলিম, যিনি এক আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কোরআন বলে, ‘ইবরাহিম ইহুদি বা খ্রিষ্টান ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত মুসলিম। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৭)

ইবরাহিম (আ.)-এর এই ইসলামের বার্তা তাঁর জীবন ও কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুননবী প্রেমের প্রতিদান কী২৭ এপ্রিল ২০২৫ইয়াকুব (আ.) ও তাঁর সন্তানরা

ইয়াকুব (আ.) তাঁর মৃত্যুর সময় তাঁর সন্তানদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমরা আমার পরে কার ইবাদত করবে?’ তারা বলল, ‘আমরা আপনার ইলাহ এবং আপনার পূর্বপুরুষ ইবরাহিম, ইসমাইল ও ইসহাকের ইলাহ, এক আল্লাহর ইবাদত করব এবং তাঁর কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করেছি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৩৩)

এই আয়াতে স্পষ্ট যে ইয়াকুব (আ.) ও তাঁর সন্তানরা ইসলামের পথে ছিলেন এবং এক আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

মুসা (আ.) ও ঈসা (আ.)

নবী মুসা (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাকো, তবে তাঁর উপর ভরসা করো, যদি তোমরা সত্যিকারের মুসলিম হও।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৮৪)

একইভাবে, নবী ঈসা (আ.) যখন দেখলেন যে বনি ইসরাইলের অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনছে না, তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী কে হবে?’ তাঁর হাওয়ারিরা বললেন, ‘আমরা আল্লাহর পথে আপনার সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিম।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫২)

এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, মুসা (আ.) ও ইসা (আ.)-সহ সকল নবী ইসলামের বার্তা—এক আল্লাহর উপাসনা ও আত্মসমর্পণ—বহন করেছিলেন।

ইবরাহিম ইহুদি বা খ্রিষ্টান ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত মুসলিম। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৭নবুওয়াতের বন্ধন: এক সাধারণ মিশন

নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং পূর্ববর্তী নবীদের মধ্যে বন্ধন ছিল একটি সাধারণ মিশনের—আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং কেবল তাঁরই ইবাদত করতে হবে। এই বার্তা ছিল সকল নবীর দাওয়াতের মূল। নবী মুহাম্মদ (সা.) এই শৃঙ্খলের শেষ নবী হিসেবে এই বার্তাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বজনীন করে তুলেছেন। তিনি বলেছেন:

‘সকল নবী ভাই ভাই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪৪৩)

এই হাদিসে নবী সকল নবীর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছেন। তাঁরা সকলেই এক আল্লাহর বার্তাবাহক ছিলেন এবং তাঁদের মিশন ছিল মানুষকে তাওহিদের পথে আহ্বান করা।

আরও পড়ুনএক বৃদ্ধ নবী যেভাবে বাবা হলেন০৪ জুন ২০২৫মুসলিম হিসেবে নবীদের পরিচয়

কোরআনের আলোকে দেখা যায়, পূর্ববর্তী নবীরা নিজেদের ‘মুসলিম’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন, কারণ তাঁরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ‘মুসলিম’ শব্দটি কোনো নির্দিষ্ট সময় বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি এক আল্লাহর প্রতি নিজেকে সমর্পণ করেন। এই অর্থে, আদম, নূহ, ইবরাহিম, মূসা, ঈসা (আ.)—সকল নবীই মুসলিম ছিলেন। তাঁদের বার্তা ছিল একই: তাওহিদ, ইবাদত এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য।

নবী মুহাম্মদ (সা.) এই বার্তাকে সর্বজনীন করে সমগ্র মানবজাতির জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। তিনি শুধু পূর্ববর্তী নবীদের বার্তার উত্তরাধিকারীই ছিলেন না, বরং তাঁদের সঙ্গে এক গভীর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন।

নবুওয়াতের বন্ধন একটি পবিত্র শৃঙ্খল, যা আদম (আ.) থেকে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত বিস্তৃত। ইসলাম বা আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ—এই একই বার্তা নিয়ে সব নবী এসেছেন।

নুহ, ইবরাহিম, মুসা, ঈসা (আ.) এবং অন্যান্য নবী নিজেদের মুসলিম হিসেবে ঘোষণা করেছেন, কারণ তাঁরা এক আল্লাহর উপাসনায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। নবী মুহাম্মদ (সা.) এই বার্তাকে চূড়ান্ত রূপ দিয়ে মানবজাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।

আরও পড়ুননবী (সা.) যুগের ঐতিহাসিক ইবাদতগাহ০২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম র ব র ত প র ববর ত কর ছ ল ন ম হ ম মদ এই ব র ত ইবর হ ম র জ বন ছ ল এক কর ছ ন ইমর ন আপন র ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো

মাত্র ২৫ বছর বয়সেই গায়িকা হিসেবে তুমুল সাড়া জাগিয়েছিলেন মৈথিলী ঠাকুর। সেই গায়িকা পেশার সঙ্গে এবার যোগ হলো নতুন পরিচয়। এখন তিনি পুরো দস্তুর শুধু গায়িকাই নন, একজন রাজনীতিক। সম্প্রতি ভারতের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। এত অল্প বয়সে কীভাবে তিনি আলোচিত হলেন, সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে।
২০১৭ সালের কথা। সেবার রাইজিং স্টার প্রতিযোগিতায় শীর্ষ ৪–এ জায়গা পান। সেই থেকেই মৈথিলীকে আগামীর তারকা ধরা হয়। তারপর আর থেমে থাকেননি। একের পর এক গান দিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন। বিহারের আলোচিত এই গায়িকা ২০২১ সালের দিকে বিহারের ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করতে থাকেন। যে কারণে সেই বছর তিনি বিহারের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান যুব পুরস্কারে ভূষিত হন।

মৈথিলী মূলত ভারতীয় ধ্রুপদি এবং লোকসংগীতের ওপর বেশি দক্ষতা। বিহারের ভাষা ছাড়াও তিনি হিন্দি, ভোজপুরিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় গান করতে পারেন। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লোকসংগীতের গান দিয়ে। যে কারণে অল্প সময়েই তিনি ভারতের আলোচিত তরুণ সংগীতশিল্পীদের একজন হয়ে ওঠেন।

মৈথিলী ঠাকুর। শিল্পীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘১৫ হাজার সেফটিপিন শাড়িতে লাগালেও, তারা খুঁত বের করবে’
  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • জামিন পেলেন অভিনেত্রী মেহজাবীন
  • আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মেহজাবীন
  • আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মেহজাবীন চৌধুরী