‘কাঁটা লাগা গার্ল’খ্যাত বলিউড অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালার মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। মাত্র ৪২ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমানোর ঘটনায় তার ভক্ত-অনুরাগী, সহকর্মীরা যেমন বিস্মিত, তেমনি সন্দেহ প্রকাশ করছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম নানা তথ্য প্রকাশ করছেন। এবার তার মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য পাওয়া গেল।

পুলিশের বরাত দিয়ে নিউজ১৮ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে অন্যান্য দিনের মতোই কিছু ওষুধ খেয়েছিলেন শেফালি। সন্ধ্যায় একটি ইঞ্জেকশন নেন তিনি। এই অ্যান্টি এজিং ড্রাগ বা বয়স কমানোর ওষুধটি গত কয়েক বছর ধরেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো নিতেন শেফালি। রাতে শেফালির ব্লাড প্রেসার হঠাৎ অনেকটা কমে যায়; কাঁপতে শুরু করেন তিনি। পর শেফালির পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

শেফালির বাড়িতে গিয়ে ওই সমস্ত ওষুধ, ইঞ্জেকশনের নমুনা সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, ওই দিন বাড়িতে একটি পূজা থাকার কারণে উপোস করেছিলেন শেফালি। খালিপেটে ওষুধ খাওয়ার কারণেই শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হয়েছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ আপাতত, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে।

আরো পড়ুন:

৯ দিনে কত আয় করল আমিরের সিনেমা?

ভয় দেখাবেন, রোমাঞ্চিতও করবেন সোনাক্ষী

১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সমাধি’ সিনেমার জন‌্য ‘কাটা লাগা’ গানে কণ্ঠ দেন লতা মঙ্গেশকর। ২০০২ সালে এ গানের রিমেক হয়। মাত্র ১৯ বছর বয়সে সেই গানের মডেল হিসেবে প্রথম সবার নজর কাড়েন ভারতীয় মডেল-অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা।

২০০৪ সালে ডেভিড ধাওয়ান পরিচালিত ‘মুঝসে শাদি করোগি’ সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। সালমান খান, অক্ষয় কুমার এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত এই সিনেমায় ক্যামিও চরিত্রেও অভিনয় করেন শেফালি। সালমান, অক্ষয় এবং প্রিয়াঙ্কার মতো তারকার সঙ্গে তার ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা। কিন্তু তারপর আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি শেফালিকে। কারণ অসুস্থতা তাকে চেপে ধরে। এক সাক্ষাৎকারে শেফালি জানিয়েছিলেন, ১৫ বছর বয়সে মৃগী রোগে আক্রান্ত হন শেফালি।

সংকটময় সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে শেফালি বলেছিলেন, “প্রায় এক দশক এই রোগ বয়ে নিয়ে চলা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ঘন ঘন মেজাজ বদল, উদ্বেগজনিত সমস্যা আমার স্কুলজীবন এবং সামাজিক মেলামেশার উপর প্রভাব ফেলেছিল। সমস্ত আশা ফুরিয়ে গিয়েছিল। আত্মবিশ্বাসও খুব কমে গিয়েছিল।”

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন শেফালি। এ অভিনেত্রীর ভাষায়— “যখন-তখন যেকোনো জায়গায় মৃগী রোগ আমার মাথায় চেপে বসত। বিশেষ করে ‘কাটা লাগা’ গানের পর যখন আমি মঞ্চে পারফর্ম করতাম, বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ঘুরতে হতো, তখন এই রোগ আমাকে চেপে ধরত।”

ধীরে ধীরে মৃগী রোগ থেকে মুক্তি পান শেফালি। এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, “চিকিৎসকদের সহায়তা এবং ইতিবাচক মনোভাব আমাকে সেরে উঠতে সাহায্য করে। মানসিকভাবে আমি শক্তিশালী হয়েছি, শারীরিকভাবেও ফিট হয়েছি।”

১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর গুজরাটের আমদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন শেফালি। বাবা-মা এব‌ং বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর গুজরাটের একটি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেন। কলেজে পড়াকালীন ‘কাটা লাগা’ গানের ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান শেফালি। নিজেকে টিভি পর্দায় দেখতে চেয়েছিলেন। তাই মিউজিক ভিডিওতে কাজ করতে আগ্রহী হন। কিন্তু তার বাবা-মা রাজি ছিলেন না।

এক সাক্ষাৎকারে শেফালি বলেছিলেন, “আমার বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি যেন পড়াশোনা শেষ করে অভিনয় শুরু করি। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে আমাকে সাত হাজার রুপি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। প্রথমে মাকে রাজি করাই। তারপর মাকে নিয়ে বাবার কাছে যাই। আমি আর মা দু’জনে মিলে বাবাকে রাজি করাই।”

‘কাটা লাগা’ গানের ভিডিও মুক্তির পর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন শেফালি। এ প্রসঙ্গে শেফালি বলেছিলেন, “ভিডিও মুক্তি পাওয়ার পর যেন এক নিমেষে সব বদলে গেল। আমার মনে হতো আমি যেন রূপকথায় বাঁচছি।”

২০০২ সালে ‘কাভি আর কাভি পার’ শিরোনামে একটি রিমেক গানের ভিডিওতে অভিনয় করেন শেফালি। ২০০৪ সালে আরো একটি মিউজিক ভিডিওতে দেখা যায় এই অভিনেত্রীকে। ২০০৪ সালে বড় পর্দায় অভিনয়ের প্রস্তাব পান শেফালি। ‘মুঝসে শাদি করোগি’ সিনেমায় ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। তারপর আর কোনো হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেননি শেফালি। ২০১১ সালে ‘হুদুগারু’ নামের কন্নড় ভাষার একটি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।

এরই মাঝে সংগীত পরিচালক হরমিত সিংহের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান শেফালি। ২০০৪ সালে হরমিতের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন এই অভিনেত্রী। কিন্তু এ সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। ২০০৯ সালে হরমিতের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় শেফালির। অভিনেত্রীর দাবি— তাকে শারীরিক-মানসিক অত্যাচার করতেন হরমিত।

বিবাহবিচ্ছেদের পর হিন্দি ধারাবাহিকের অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শেফালি। কিন্তু এ সম্পর্কেরও ইতি টানেন তিনি। এরপর টেলিভিশনের খ্যাতনামা তারকা পরাগ ত্যাগীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান শেফালি। ২০১২ সালে নাচের একটি রিয়েলিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসেবে জুটি বেঁধে অংশগ্রহণ করেন এই দুই তারকা। দীর্ঘদিন সম্পর্কে থাকার পর ২০১৪ সালে পরাগের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন শেফালি।

২০১৬ সালে বোনের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন শেফালি। দুবাইয়ে দুই বোন মিলে একটি কোচিং চালু করেন। ২০১৯ সালে রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এ অংশগ্রহণ করেন শেফালি। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছানোর আগেই শো থেকে বেরিয়ে যান এই অভিনেত্রী। ২০১৮ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া ‘বেবি কাম না’ নামে ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেন শেফালি। এই সিরিজে আরো অভিনয় করেন শ্রেয়স তালপাড়ে এবং চাঙ্কি পান্ডের মতো বলিউড অভিনেতারা।

২০১৯ সালে আবারো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যায় শেফালিকে। ‘বু সব কি ফাটেগি’ নামে একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেন তিনি। এতে আরো অভিনয় করেন তুষার কাপুর, মল্লিকা শেরাওয়াত, কৃষ্ণ অভিষেক প্রমুখ। এক বছরের ব্যবধানে দু’টি ওয়েব সিরিজে শেফালিকে অভিনয় করতে দেখা গেলেও প্রচারে আসেননি এই অভিনেত্রী।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ন শ ফ ল ২০০৪ স ল বল ছ ল ন কর ন ত হরম ত

এছাড়াও পড়ুন:

মৌসুমের শেষে বাজারে আসে রুমা অধিকারীর বাগানের ভিন্ন জাতের আম, লাভও বেশি

এক একর জমির ওপর করা আমবাগানে গাছ আছে ৩০০টি। তবে কোনোটিই প্রচলিত জাতের নয়। বেশির ভাগ ভিনদেশি। কিং অব চাকাপাত, চ্যাংমাই, ডকমাই, কাটিমন, ব্যানানা, রেড পালমার, শ্রাবণী, হানি ডিউ, ফোর কেজি—এমন বাহারি নামের আম ঝুলছে বাগানের গাছে গাছে।

নীলফামারী জেলা সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামে এই বাগান গড়ে তুলেছেন রুমা অধিকারী নামের এক নারী। ইউটিউব দেখে এসব উন্নত জাত সম্পর্কে ধারণা নিয়ে চারা সংগ্রহের মাধ্যমে বাগানটি করেছেন তিনি। আমের পাশাপাশি মাল্টা, ড্রাগন, জাম্বুরা, কমলা ও সুপারির গাছও রয়েছে বাগানে।

এসব জাতের আমগাছে মার্চ মাসে মুকুল আসতে শুরু করে। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পরিপক্ব হয়। দেশি আমের মৌসুমের শেষে এসব আম বাজারজাত হয়। এ কারণে বাজার দরও ভালো পাওয়া যায়। ফলে লাভের অঙ্কটাও একটু বেশি।

গত রোববার বাগান ঘুরে দেখার সময় নিজের গল্প জানালেন রুমা অধিকারী। তিনি ২০০৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এর পর থেকে তিনি কৃষিতে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রায় ২০ বছর পর এসে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।

২০০৪ সালে নীলফামারী সদর উপজেলার উত্তর বালাপাড়া গ্রামের দুলাল অধিকারীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী পুলিশের উপপরিদর্শক। রুমার বাবা রমনী মোহন রায়ও ছিলেন পুলিশে। বিয়ের পর স্বামীর চাকরির সুবাদে দীর্ঘ সময় কেটেছে রংপুরে।

এরপর ২০২৩ সালে একাই (রুমা) গ্রামের বাড়িতে ফিরে স্বামীর পৈতৃক এক একর জমিতে রোপণ করেন বিভিন্ন প্রজাতির ৩০০টি আমের চারা। একই জমিতে আমের সঙ্গে রোপণ করেছেন বিখ্যাত দার্জিলিং কমলার চারা। বাগানের চারদিক ঘিরে রয়েছে ড্রাগন, জাম্বুরা, মাল্টা ও সুপারির গাছ। এতে তাঁর খরচ হয়েছে তিন লক্ষাধিক টাকা।

রুমা অধিকারী জানান, ২০২৪ সালে প্রথম আমের ফলন আসে। তাতে আয় হয় দেড় লক্ষাধিক টাকা। এবার ৩০০ গাছে আমের ফলন পেয়েছেন। বাগানে পরিপক্ব আম জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। তাতে পাঁচ লাখ টাকার ওপরে আয়ের আশা করছেন তিনি। ইতিমধ্যে দুই লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রি করেছেন। বাগানটির নাম দিয়েছেন ‘বৃন্দাবন অর্গানিক অ্যাগ্রো ফার্ম’। বাগানে আমের সঙ্গে কমলা, ড্রাগন, মাল্টা ও সুপারির ফল নামলে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।

পরিবেশবান্ধব কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থেকে ভিন্ন জাতের আমের বাগান গড়ে তুলেছেন রুমা অধিকারী। গত রোববার নীলফামারী সদর উপজেলার উত্তর বালাপাড়া গ্রামে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌসুমের শেষে বাজারে আসে রুমা অধিকারীর বাগানের ভিন্ন জাতের আম, লাভও বেশি