মহাসড়কে ভারী যান চলাচলে ঝুঁকিতে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ
Published: 29th, June 2025 GMT
লবণাক্ততা, ছত্রাকের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছে ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদসহ বিশ্ব ঐতিহ্যের নানা স্মারক। ঝড়ঝঞ্ঝাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট কারণেও ঝুঁকি বাড়ছে বাগেরহাটের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর। ষাটগম্বুজ ও সিঙ্গাইর মসজিদ লাগোয়া বরিশাল-বাগেরহাট-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে নিয়মিত ভারী যান চলাচলে সৃষ্ট কম্পনে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম দুই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্থায়িত্ব কমছে।
রোববার বাগেরহাট জাদুঘরের সভাকক্ষে আয়োজিত ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত বাগেরহাটের পুরাকীর্তির নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় স্থানীয় জনসাধারণের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা উঠে আসে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো.
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে লেখক ও প্রত্ন–গবেষক মোহা. মোশাররফ হোসেন, বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মুস্তাফিজুর রহমান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস, কাস্টডিয়ান মো. যায়েদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভায় আলোচকেরা তুলে ধরেন, লবণাক্ততার কারণে ষাটগম্বুজ মসজিদের মূল মিহরাবটি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। অনেক কিছুই করা হচ্ছে, যা প্রত্ন আইন ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখানে কোর জোন, বাফার জোন মানা হচ্ছে না। যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে সৌন্দর্য বিনষ্ট করা হচ্ছে। হোটেল, পদচারী–সেতুসহ নানা স্থাপনা করে ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। মহাসড়কে ভারী যান চলার সময় ষাটগম্বুজ মসজিদ কেঁপে ওঠে। অবৈধভাবে খালগুলো আটকে মাছ চাষে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, যাতে স্থাপনাগুলো ডুবে যাচ্ছে। দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঐতিহ্যের স্মারক থেকে বঞ্চিত হবে।
বাগেরহাটের প্রাচীন নাম ছিল ‘খলিফাতাবাদ’। ১৯৮৫ সালে প্রাচীন শহরটি ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ৩২১ নম্বর ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ইউনেসকো। ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বা মসজিদের শহর বাগেরহাট বলতে মূলত ১৫ শতকে ইসলাম ধর্মপ্রচারক ‘খান উল আযম উলুঘ খান ই জাহানে’র হাত ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভৈরব নদের তীরে গোড়াপত্তন হওয়া তৎকালীন নগরী বা শহরকে বোঝায়। খলিফাতাবাদ নামের তৎকালীন শহরটি বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীতে প্রকাশিত বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া ১৫টি ঐতিহাসিক নগরীর অন্যতম। কালের বিবর্তনে যা এখন বাগেরহাট।
প্রাচীন এই শহরের ঐতিহ্যবাহী ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ, সিঙ্গাইর মসজিদ, উলুঘ খান জাহানের সমাধিসৌধ, ৯ গম্বুজ মসজিদ, খানজাহানের নির্মিত প্রাচীন রাস্তা, জিন্দাপীর মসজিদ, বিবি বেগনী মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, রণবিজয়পুর মসজিদ, সাবেকডাঙ্গা পুরাকীর্তি, চিল্লাখানা প্রভৃতি। সমৃদ্ধ প্রাচীন খলিফাতাবাদ শহরের এমন অসংখ্য স্থাপনা সময়ের সঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে।
ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার হিসেবে এগুলো সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় স্থানীয় লোকজনের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ জোরালো করার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, দেশে প্রত্নস্থানগুলো সুরক্ষা-সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। তবে বিশ্বের বহু দেশে সুরক্ষা কার্যক্রমের জন্য আলাদা বিভাগ আছে। বাংলাদেশেও তেমন ব্যবস্থা জরুরি। পাশাপাশি পাঠ্যক্রমে ঐতিহ্যের গুরুত্ব ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট র র মসজ দ মসজ দ র স রক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
জামনগরে মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়েই কি সর্বনাশ করল ভারতের
ভারতের গুজরাট রাজ্যের বৃহৎ শহর জামনগর। কচ্ছ উপসাগরের তটে রৌদ্রোজ্জ্বল শহরটি মূলত একটি শিল্পাঞ্চল। শহরটি গত বছর অনেক মার্কিন নাগরিকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। আর এর কারণ ছিল হলিউডের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রিয়ানা।
জামনগরে ২০২৪ সালের মার্চে এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির প্রাক্–বিবাহ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেছিলেন রিয়ানা। দর্শকসারিতে ছিলেন বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, ইভাঙ্কা ট্রাম্পসহ নামীদামি অনেক অতিথি।
নামজাদা এসব অতিথি জামনগরে ছিলেন, যেখানে নেই কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কিংবা বেশির ভাগ অতিথির থাকার উপযোগী হোটেল। কারণ, শহরটির বন্দর ও তেল শোধনাগার আম্বানি সাম্রাজ্য এবং তাঁর ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সম্পদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে এই জামনগর। এর কারণ, শহরের জ্বালানি তেলশিল্প। এসব জ্বালানি তেলের একটি অংশ আসে রাশিয়া থেকে। আর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাসের পর মাস ধরে ওয়াশিংটন আর নয়াদিল্লির মধ্যে চলা বাণিজ্যিক আলোচনা গত জুলাইয়ের শেষ দিকে ভেঙে পড়ে। দেশ দুটির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেও ফাটল ধরে। গত ৩০ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটাক্ষ করে লেখেন, মার্কিন কোম্পানিগুলো হয়তো শিগগিরই ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে তেল খনন শুরু করবে। ‘কে জানে, হয়তো একদিন তারা ভারতের কাছেই তেল বিক্রি করবে!’
এর ঠিক এক সপ্তাহ পর, ট্রাম্প আরও কড়া একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি কার্যত ভারতের রপ্তানিকারকদের জন্য বিপদের দুয়ার খুলে দেন। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেল বাণিজ্য থেকে মুনাফা তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে দেশটির সরকার। এর মধ্য দিয়ে দেশটি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টা সহায়তা করছে।
ট্রাম্প কোনো কোম্পানির নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু ঘুরেফিরে সব সূত্র মুকেশ আম্বানি এবং তাঁর কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে মিলে যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটের জামনগরে কোম্পানিটির প্রধান তেল শোধনাগার অবস্থিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শোধনাগার। জামনগর ও পুরো ভারতে রিলায়েন্স গ্রুপের বিনিয়োগ পরিকল্পনা হয়েছে মোদি ও অন্যান্য রাজনীতিবিদদের পরামর্শে।
ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ ও নিতা আম্বানি