শ্রেণিকক্ষে সিলেবাসভিত্তিক পাঠদান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু এর মধ্যে শিশুদের আবদ্ধ করে ফেললে তাদের জীবন একঘেয়ে, ক্লান্তিকর ও নিরানন্দ হয়ে ওঠে। বিদ্যালয় ও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির হার বৃদ্ধির এটি অন্যতম কারণ। সিলেবাসের পড়াশোনার পাশাপাশি চিরায়ত সাহিত্যের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটানো জরুরি। বাংলা সাহিত্য ও বিশ্বসাহিত্যের সেরা বইগুলো তারা পড়লে তাদের মধ্যে উন্নত চিন্তা-চেতনা তৈরি হবে। তাদের এমন প্রতিভা পরিচর্যার উপযুক্ত ক্ষেত্র হতে পারে দেয়ালিকা। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে দেয়ালিকার চর্চা থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ চর্চা নেই বললেই চলে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুকুমারবৃত্তি প্রবল। আমার কর্মস্থল লক্ষ্মীপুরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত দেয়ালিকা প্রদর্শনীতে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় অংশগ্রহণ করেছিল। রং- রেখা, আঁকা ও লেখায় দ্যুতিময় হয়ে উঠেছিল সে প্রদর্শনী। শিশুদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে বোঝা যায়, সুযোগ পেলে তারা সৃজনশীলতার চমৎকার উদাহরণ তৈরি করতে পারে। যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বছরে অন্তত একবার দেয়ালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেয়, তবে শিশুদের সৃজনশীলতা প্রকাশের চমৎকার ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই শুদ্ধ ও সাবলীল উচ্চারণে কথা বলতে পারে না। পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেছি, বহু শিক্ষার্থী শুদ্ধ উচ্চারণ জানে না; রিডিং পড়তে পারে না। শিক্ষার মানোন্নয়নে এটি অন্যতম প্রতিবন্ধক। এ সমস্যা দূর হতে পারে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিতর্কচর্চা শুরু করলে।
বিতর্ক একটি বহুমাত্রিক শিল্প। এর মধ্য দিয়ে জ্ঞানচর্চা বাড়ে; যুক্তিবাদিতার চর্চা হয়; শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে শুদ্ধ ও সাবলীল উচ্চারণে কথা বলতে পারে। এটি রিডিং পড়ার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সহায়ক। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ডিবেটিং ক্লাব গঠন অত্যন্ত জরুরি।
এর সূচনা হতে পারে ‘উপস্থিত বক্তৃতা’ বা ‘নির্ধারিত বক্তৃতা’ প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘চারু ও কারুকলা’ বইয়ে ছবি আঁকা ও শিল্পকর্ম তৈরি সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। এটি একটি সৃজনশীল উদ্যোগ। আমাদের দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো সুগঠিত লাইব্রেরি নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বই রয়েছে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে থাকে। একটি নির্দিষ্ট কক্ষে যদি লাইব্রেরি বা লাইব্রেরি কর্নার থাকে, তবে তা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বড় সম্পদ বলে বিবেচিত হবে। শিশুমন উপযোগী মানসম্পন্ন বই থাকবে এসব লাইব্রেরিতে। এ বয়সে শিক্ষার্থীরা যেন নির্মল আনন্দ ও নৈতিক মূল্যবোধ অর্জন করতে পারে, এমন বই বাছাই করতে হবে। শিশু বয়স থেকে যদি তাদের মধ্যে পাঠাভ্যাসের প্রবণতা গড়ে তোলা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে জাতি উপকৃত হবে।
সহপাঠ্যক্রমিক কর্মসূচির অন্যতম উপাদান সংস্কৃতিচর্চা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সরকার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রতিবছর জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা (ক্রীড়া, সংস্কৃতি, কবিতা ও বিষয়ভিত্তিক কুইজ) অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের প্রতিভার পরিচয় দিতে সমর্থ হয়। সম্প্রতি এ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার প্রদানের সময় শিশুদের বহুমাত্রিক প্রতিভা দেখে আশাবাদী হয়েছি। এ ধরনের চর্চার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে গুণী শিল্পী-সাহিত্যিক ও ক্রীড়াবিদের আবির্ভাব ঘটবে।
সহপাঠ্যক্রমিক কর্মসূচির সঙ্গে শিশুদের সম্পৃক্ততা তাদের চরিত্র গঠনে মূল্যবান ভূমিকা পালন করে। বিদ্যালয়ের ক্লান্তিকর ও একঘেয়ে পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে সংস্কৃতিচর্চা সহায়ক। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দলীয় সংহতি গড়ে ওঠে। এভাবে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি হয়। শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি করা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম সে উদ্দেশ্য পূরণে বহুলাংশে সহায়ক।
রাজীব কুমার সরকার: প্রাবন্ধিক
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে সাবেক ভ্যাট কর্মকর্তার ৫ তলা বাড়ি ক্রোকের আদেশ
চট্টগ্রাম নগরীর কাতালগঞ্জে সাবেক আবগারী ও ভ্যাটের সহকারি কমিশনার নাসির উদ্দিন ও তার স্ত্রী তাসমিন জাহান চৌধুরীর মালিকানাধীন পাঁচতলা বাড়ি ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম আদালতের নাজিরকে ওই বাড়ির রিসিভার নিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ হাসানুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামি নাসির উদ্দিন দম্পতির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে তাদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করা পাঁচতলা বাড়ি ক্রোক করতে আদালতে আবেদন করা হয়। দুদকের আবেদন গ্রহণ করে আদালত বাড়িটি ক্রোক করে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন তারা আর এসব সম্পদ অন্যত্র বিক্রি করতে পারবেন না।
আসামি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। তিনি সর্বশেষ মৌলভীবাজারের সাবেক সহকারী কমিশনার ও বিভাগীয় কর্মকর্তা আবগারী ও ভ্যাট বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২৮ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৩৬ লাখ ১৭ হাজার ৭১৭ টাকার সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রাখার অপরাধে দুর্নীতি মামলাটি করা হয়। তিনি বর্তমানে নগরীর কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার ৩ রোড এলাকায় বসবাস করেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়ায়।