কুমিল্লায় নারীকে ধর্ষণ ও নিগ্রহের প্রতিবাদে জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 29th, June 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে ধর্ষণ ও নিগ্রহের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে প্রতিবাদে মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ ঘুরে একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার বোন ধর্ষিতা কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই’, ‘অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচার কর’, ‘জানমালের নিরাপত্তা দাও, নইলে গদি ছেড়ে দাও’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। প্রতিবাদ মিছিল শেষে একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বরের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শামসুল আলম মারুফ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মাধ্যমে ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকার ক্ষমতায় বসল। কিন্তু এরপর আমরা দেখতে পেলাম নারীদের ওপর একাধিক নিপীড়ন, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনসহ বিগত কয়েক মাসে ঘটিত শত শত মব ভায়োলেন্সের ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।’
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘সরকারের এমন আচরণ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা, পুলিশের কাঠামোগত সংস্কার না করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম জুলাই–আগস্টের শহীদদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, ‘প্রতিদিন এই ধর্ষণের ঘটনাগুলো সংবাদের শিরোনামে দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি বললেও এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রতিদিন হাটে-ঘাটে চলতে গিয়ে আমরাও সবাই অনেকখানি অনিরাপদ বোধ করছি। এটা হওয়ার কথা ছিল না। জুলাই অভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল হাসিনার আমলের সকল দুঃশাসন কাটিয়ে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ একই রকম সংস্কৃতি এখনো বিদ্যমান।’
তাহসীব আরও বলেন, ‘আমরা বিচারের কথা বলি, যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পর আর কেউ এমন ঘৃণ্য কাজ করতে সাহস না পায়। যাতে এই সংস্কৃতি বন্ধ হয়। মুরাদনগরের সেই ধর্ষিতার চাচা বলেছিলেন কাল তাঁর ঘরের কারও সাথে এমনটা হবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়? আমরা সেই নিশ্চয়তার দাবিতে আজ দাঁড়িয়েছি। যতক্ষণ না সেটা নিশ্চিত হচ্ছে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তারা তোমার অশ্রুর যোগ্য ছিল না, আনাস!
‘যাবতীয় যন্ত্রণার মধ্যে ছিল আমার বসবাস এবং বারবার সম্মুখীন হয়েছি বেদনা ও শোকের। তা সত্ত্বেও, সত্যকে বিকৃত বা মিথ্যাচার ছাড়াই তুলে ধরতে আমি কখনো দ্বিধা করিনি। যারা আমাদের ওপর চালানো হত্যাকাণ্ড দেখে নীরব ছিল এবং যারা আমাদের নিশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে, যাদের হৃদয় আমাদের নারী ও শিশুদের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখেও বিচলিত হয়নি এবং যারা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের জনগণের ওপর চলা এই গণহত্যা থামাতে কিছুই করেনি, আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী থাকুন।’
আনাস আল-শরিফ এ কথাগুলো লিখেছিল তার অসিয়তনামা হিসেবে, শহীদ হওয়ার চার মাস আগে। সে নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি পোস্ট করা হয়। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে মিডিয়ার একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় আনাস, সাংবাদিক মোহাম্মদ কোরইকেহ, ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোমেন আলিওয়া শহীদ হয়।
আনাস আল-শরিফ গাজার একজন বীর, সে নিঃসন্দেহে আমাদের সবার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের একজন সাংবাদিক ছিল।
গাজার মানুষ সাধারণত গণমাধ্যমকে ঘৃণা করে। তারা সাংবাদিকদের দুটি ভূমিকায় দেখে: হয় তারা আমাদের অতিরঞ্জিতভাবে এমনভাবে তুলে ধরে—যেন আমরা অতিমানব, যারা অবিরাম বোমা হামলা, খাদ্য ও পানির অভাব এবং প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে; অথবা তারা আমাদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিত্রিত করে, যা আমাদের পরিবারের হত্যাকাণ্ড এবং আমাদের বাড়িঘর ধ্বংসের ন্যায্যতা দেয়।
আনাস ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। সে সত্যকে বিকৃত করেনি। সে ছিল আমাদেরই একজন। আমাদের শরণার্থীশিবিরেই তার বেড়ে ওঠা। বোমার নিচে ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমাদের সঙ্গে কষ্ট ভোগ করে, প্রিয়জনদের জন্য শোক করে এবং নিজ সম্প্রদায়কে ছেড়ে না গিয়ে সে বেড়ে উঠেছে। সে গাজাতেই থেকে গেছে, জলপাইগাছের মতো দৃঢ়ভাবে, একজন সত্যিকারের ফিলিস্তিনির জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে।
গণহত্যা শুরুর পর আনাস আল-শরিফ আল–জাজিরার জন্য রিপোর্টিং শুরু করে এবং দ্রুতই সে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে। ক্রমাগত হুমকির মুখেও সে ও ইসমাইল আল-ঘুল উত্তর গাজা থেকে সম্প্রচার বন্ধ করেনি। তাদের উষ্ণ বন্ধুত্ব, আনন্দ ও দুঃখের মুহূর্তগুলো দুজনকে আমাদের কাছে আরও বেশি আপন করে তুলেছিল।
গাজায় ধ্বংসস্তূপের সামনে আনাস আল–শরিফ