প্রধান আসামির দলীয় পরিচয় নিয়ে ঠেলাঠেলি, ‘নোংরা রাজনীতি’ বলছেন সুধীজনেরা
Published: 30th, June 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে আলোচিত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে একধরনের ‘ঠেলাঠেলি’ শুরু হয়েছে। ঘটনার পর থেকে কেউ তাঁকে আওয়ামী লীগ আবার কেউ তাঁকে বিএনপির লোক বলে অভিহিত করছেন। তবে কোনো দলেই তাঁর পদ থাকার তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও এলাকায় সুবিধাবাদী হিসেবে পরিচিত ফজর আলীর দুই দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেই অংশ নেওয়ার বেশ কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কুমিল্লার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, একজন ধর্ষণকারী বা অপরাধীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। ফজর আলীর দলীয় পরিচয় নিয়ে যেভাবে টানাহেঁচড়া শুরু হয়েছে, তা নোংরা রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মুরাদনগর উপজেলার একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ফজর আলীর বিরুদ্ধে। ধর্ষণের বিষয়টি টের পেয়ে আশপাশ থেকে কিছু লোক এসে ফজর আলীকে পেটাতে থাকেন। এ সময় ওই নারীকেও বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই মধ্যে ধর্ষণ এবং বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হাত-পা ভেঙে ফেলার কারণে ফজর আলী বর্তমানে পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সরেজমিনে এলাকায় ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় জানার চেষ্টা করা হলে কোনো দলে পদ-পদবি থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগপর্যন্ত ফজর আলী এলাকা দাবড়ে বেড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের লোক হিসেবে। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীর সঙ্গে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের তাঁর অসংখ্য ছবি রয়েছে। ৫ আগস্টের পর ভোল পাল্টে নিজেকে বিএনপির লোক হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন তিনি। যেতেন বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও। গেল বছরের ১৪ ডিসেম্বর রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবিতেও তাঁকে দেখা গেছে।
ফজর আলী.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন ত ক ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
নিপীড়নের ভিডিও ছড়ানো আরেক দফা নির্যাতনের শামিল
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় নারীকে ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ছড়ানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। বিবৃতি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি, মানসিক ও স্বাস্থ্য সহায়তার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন রোববার এক বিবৃতিতে ঘটনার দ্রুত বিচার এবং আসামিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, নিপীড়নের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া নারীর প্রতি আরেক দফা নির্যাতনের শামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটি ভুক্তভোগীর সামাজিক ও মানসিক স্থিতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতি
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক বিবৃতিতে বলেছেন, মুরাদনগরের ঘটনা প্রমাণ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। অভিযুক্ত ধর্ষক ও ভিডিও ছড়ানো ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের নারীবান্ধব বললেও নারীর প্রতি অবমাননাকর ঘটনায় সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে মব সন্ত্রাস, সংখ্যালঘুসহ সমাজের দুর্বল বিপন্ন অংশের বিপন্নতা মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স পৃথক বিবৃতিতে বলেন, বিভিন্ন স্থানে নারীদের বিরুদ্ধে মব তৈরি, অনলাইনসহ নানাভাবে নিপীড়ন ও হেনস্তা করা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনকে এসব ঘটনা প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেন, নারীর ওপর ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে নিপীড়ন চলছে। বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বিবৃতিতে বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনাটি শুধু একটি ভয়াবহ অপরাধ নয়, বরং নারীর প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও বিদ্বেষের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। নারীমুক্তি কেন্দ্রের বিবৃতিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়ানোর প্রতিবাদ এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। রোববার কুমিল্লা নগরীর রাণীর বাজার রামঠাকুরের আশ্রম থেকে সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার আয়োজনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এদিন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির নেতারা বলেন, মুরাদনগরের ঘটনার দায়ভার রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।
মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার রাতে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আরেকটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। রোববার সন্ধ্যায় বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে মশাল মিছিল হয়েছে। এদিকে রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ফোরামের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো ও প্রতিনিধি)