চাকসুর নাম ‘জোবরা ভাতঘর অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টার’
Published: 30th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নাম পরিবর্তন করে ‘জোবরা ভাতঘর অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টার’ নামকরণ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুর ১২টায় চাকসু ভবনে এ নাম টানিয়ে দেন চবি সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চাকসু ভবনের প্রধান ফটকের উপরে লেখা নামের উপর ‘জোবরা ভাতঘর অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টার’ লেখা ব্যানার টানিয়ে দিচ্ছেন দুইজন শিক্ষার্থী। ব্যানারে ‘জোবরা ভাতঘর অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টার’ নামের নিচে ছোট করে লেখা ‘এখানে মুলার তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়া যায়’।
আরো পড়ুন:
কুবিতে র্যাগিং রোধে প্রক্টর অফিসের জরুরি নির্দেশনা
ইবির সেই শিক্ষককে অপসারণ
এ বিষয়ে চবি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির আহ্বায়ক ও রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাঈন উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান চাকসু। কিন্তু বিগত ৩৬ বছর ধরে সেটি অচল অবস্থায় রয়েছে।”
তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে চবি সংস্কার আন্দোলন ব্যানারে প্রায় প্রতিটি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন একত্রে ও পৃথকভাবে প্রশাসনকে চাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য তাগিদ দিয়ে এসেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেসবে কর্ণপাত না করে চাকসু নির্বাচন দেওয়ার এখনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি।”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান চাকসুকে দীর্ঘদিন ধরে শুধু ভাত-তরকারির হোটেল আর বিয়ের অনুষ্ঠানের কেন্দ্র বানিয়ে রাখা হয়েছে। সেজন্য আমরা প্রতিবাদের একটা ভাষা হিসেবে চাকসু ভবনের এই ব্যতিক্রমী নামকরণ করেছি। আমাদের সিদ্ধান্ত, যেদিন চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, সেদিনই আমরা এই স্টিকার তুলে নেব।”
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, “বিগত ৩৬ বছরে চাকসু ভবন তার আসল নামে ফিরে এসেছে। যে ক্যাম্পাসে ৩৬ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না, সেখানে চাকসু ভবন নামে কোনো ভবন থাকার যোগ্যতা থাকে না।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
লালভাঙার লাল ফুল
জেমস লি (১৭১৫-১৭৯৫) আর লুইস কেনেডি (১৭২১-১৭৮২) ছিলেন দুটি পরিবারের দুজন স্কটিশ নার্সারিকর্মী। তাঁরা দুজন মিলে লন্ডনের হ্যামারস্মিথে আঠারো শতকের প্রথম দিকে একটি নার্সারি গড়ে তুলেছিলেন, যার নাম ছিল ভাইনইয়ার্ড নার্সারি। ধারণা করা হয়, সেটি বিশ্বের প্রথম দিকের নার্সারিগুলোর একটি।
বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক নার্সারিটি ছিল লিনিয়ান বোটানিক গার্ডেন অ্যান্ড নার্সারি। রবার্ট প্রিন্স ১৭৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সেটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভাইনইয়ার্ড নার্সারি ছিল সেটির সমসাময়িক। লি ও কেনেডি বংশের সন্তানেরা তিন প্রজন্ম ধরে একই সঙ্গে সেই নার্সারিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন।
নার্সারি কাজের পাশাপাশি জেমস লি ছিলেন একজন উদ্ভিদ সংগ্রাহকও। জেমস লি ১৭৮৭ সালে লন্ডনে প্রথম চীনা গোলাপ প্রবর্তন করেছিলেন। কালক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন উদ্ভিদের দ্বিপদী নামকরণের জনক কার্ল লিনিয়াসের একজন সহযোগী। জেমস লি ১৭৬০ সালে প্রকাশিত লিনিয়ান পদ্ধতির একটি সংকলন তৈরি করেন। অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু বোটানি নামের সংকলনটির সে সময় পাঁচটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। লিনিয়াস নার্সারি কর্মী জেমস লির নামে একটি উদ্ভিদ গণের নামকরণ করেন। Leea নামের সে গণের সারা বিশ্বে ২০২৩ সালের ১২ জুলাই পর্যন্ত ৪৫টি গ্রহণযোগ্য প্রজাতি প্লান্টস অব দ্য ওয়ার্ল্ড অনলাইনে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে আছে এ গণের অন্তত ১০টি প্রজাতি। কুকুরজিব বা বনচালিতা, কাকজংলা, ডানাজংলা, কুকুরা, ঢোলসমুদ্র, লালভাঙা ইত্যাদি এ গণের উদ্ভিদ।
ঢাকায় আহসান মঞ্জিলে রয়েছে একটি ঢোলসমুদ্রগাছ, চন্দ্রিমা উদ্যানে পুকুরপাড়ে দেখেছিলাম কুকুরজিবগাছ আর এবার আষাঢ় মাসে বলধা উদ্যানের সিবিলি অংশে গিয়ে দেখা পেলাম লালভাঙাগাছের। লালভাঙা বা red leea গাছের প্রজাতিগত নাম Leea rubra ও পরিবার ভিটেসি। অর্থাৎ গবেষকেরা এ গাছকে আঙুরের গোত্রে ফেলেছেন। আগে এ গাছের গোত্র ছিল লিয়েসি। প্রজাতিগত নামের শেষাংশ রুব্রা অর্থ লাল।
বলধা উদ্যানে দেখলাম লালভাঙাগাছে কয়েকটা থোকায় লাল টকটকে ফুল ফুটেছে। ফুল এত ক্ষুদ্র যে খুব খেয়াল করে না দেখলে তা সহজে চোখে পড়ে না। গাছটার ডালপালা লালচে সবুজ, গিঁটগুলো ফোলা ফোলা, দেখে মনে হয়, চাপ দিলেই বোধ হয় ওখান থেকে মটাৎ করে ডালটা ভেঙে যাবে। আসলে তা হয় না, কাণ্ড বেশ শক্ত। শাখাপ্রশাখা নিয়ে গুল্ম প্রকৃতির গাছটার উচ্চতা ৬ থেকে ৭ ফুটের বেশি উঁচু হয়ে সেখানে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। ডালপালা ও পাতার সন্ধিস্থলে রয়েছে বড় খোঁপার মতো পুষ্পমঞ্জরি। ফোটা ফুলের চেয়ে বুটের দানার মতো কুঁড়িগুলোই যেন বেশি সুন্দর।
লালভাঙা একটি বহুবর্ষজীবী ছোট আকারের গুল্ম প্রকৃতির গাছ। উচ্চতা ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। কাণ্ডের রং লালচে, পাতা সবুজ। পাতা উপবৃত্তাকার, অগ্রভাগ সুচালো, কিনারা অগভীরভাবে খাঁজকাটা, পাতা দেখতে অনেকটা চালতা পাতার মতো, তবে চালতাপাতার চেয়ে আকার ছোট। শাখা-প্রশাখায় পাতাগুলো বিপরীতমুখী হয়ে একান্তরক্রমিকভাবে জন্মে। পাতা খসখসে ও প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একে আমরা পাতা বলছি, আসলে সেগুলো পত্রক বা লিফলেট। কেননা পত্রদণ্ডের দুধারে পত্রকগুলো সাজানো থাকে। পুষ্পমঞ্জরি, কুঁড়ি ও ফুল উজ্জ্বল লাল। ফুলের পাপড়ির রং উজ্জ্বল লাল, গোলাপি বা ঘিয়ে হতে পারে।
ফোটা ফুলগুলো এতই ক্ষুদ্র যে পুষ্পমঞ্জরিতে ফোটার পর সেগুলো ঘিয়ে রঙের বিন্দুর মতো দেখায়। ফুলের পাঁচটি পাপড়ি তারার মতো মেলে থাকে, মাঝখানে থাকে ঘিয়ে রঙের জননাঙ্গগুলো। ক্ষুদ্র নাকফুলের মতো ফুল। আষাঢ় মাস থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়, ফল ধরা শেষ হয় অগ্রহায়ণ মাসে। ফলের রং প্রথমে লাল থাকলেও পরে হয় বেগুনি ও পাকার পর কালো হয়ে যায়। ফল বেরি প্রকৃতির, বড় মটর দানার মতো, ব্যাস মাত্র ১১ মিলিমিটার, ফলের ভেতরে ৪ থেকে ৬টি বীজ থাকে। বীজ থেকে চারা হয়। তবে শাখা কেটে কলম করে ও শাখায় গুটিকলম করে এ গাছের চারা তৈরি করা যায়। বয়স্ক গাছ থেকে কলম করে তা টবে বা বাগানে লাগালে সেসব গাছে দ্রুত ফুল ফোটে। এ গাছের কিছু ঔষধি গুণ আছে। পাতা ক্ষত সারানোয় ব্যবহৃত হয়। আমাশয় সারানোয় এর ফল খাওয়া হয়। এ দেশে বুনো গাছ হলেও কেউ কেউ বাহারি গাছ হিসেবে বাগানে লাগান। ফুল ফোটা গাছ দেখতে সুন্দর। এ গাছের আদি নিবাস বাংলাদেশ, আসাম, মিয়ানমার হলেও লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে এ গাছ দেখা যায়।