শিক্ষককে খুঁটিতে বেঁধে মারধর, গ্রেপ্তার ২
Published: 30th, June 2025 GMT
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে খুঁটিতে বেঁধে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- আবদুল হান্নান ও আবু বক্কর। তারা কেঁওচিয়া ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মৃত শামসুল ইসলামের ছেলে।
ভুক্তভোগীর নাম আবদুর রহমান। তিনি বান্দরবান সদর উপজেলার ভাগ্যকুল কদুখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মারধরে গুরুতর আহত হয়ে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী রোকসানা আক্তার রোববার রাতে ছয়জনকে এজাহারভুক্ত এবং ছয়-সাতজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা করেন। এজাহারভুক্ত অপর আসামিরা হলেন– আবু বক্করের ছেলে মুসলিম উদ্দিন হিরু, ভাই মো.
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আবদুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে আসামিদের জমি-সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। আবদুর রহমানের ভাইবোন বিবাদীদের পরিবারকে কিছু জায়গা বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু আবদুর রহমান তাঁর অংশ বিক্রি করেননি। এর জেরে শুক্রবার রাতে আসামিরা আবদুর রহমানকে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের দস্তিদার বাজারে এক মুদি দোকানে ডেকে নিয়ে মারধর করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি রক্ষা পান। এ ঘটনার পরদিন আবদুর রহমানকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
আবদুর রহমান জানান, আসামিরা তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করছিল। তিনি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করার ভয় দেখায়। পরে তারা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে তাঁকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত ও কিল-ঘুসি মেরে গুরুতর আহত করে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আসামি মুসলিম উদ্দিন হিরু বলেন, আবদুর রহমানরা ১২ ভাইবোন। তাদের মধ্যে ১০ জন তাদের কাছে জমি বিক্রি করেছেন। আবদুর রহমান ওই জায়গায় তার অংশটুকু বিক্রি করেননি। তবে তিনি তাঁর মূল জমি থেকে কয়েক গুণ দখল করে রেখেছেন। এ বিষয়ে তাঁকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তিনি শুনছিলেন না। ঘটনার দিন তাঁর সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সাতকানিয়ার ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, জায়গায় বিরোধ থাকলে সেটা আইনগতভাবে অথবা বৈঠকে বসে সমাধান করা যেত। একজন শিক্ষককে এভাবে প্রকাশ্যে গাছের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর ও হেনস্তা করা মোটেই উচিত হয়নি।
সাতকানিয়া থানার ওসি মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার দুই আসামিকে সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম রধর আবদ র রহম ন আস ম র ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ সফরে আসছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার প্রধান
বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনার জন্য তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুন ৮ জুলাই ঢাকায় আসছেন। এক দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
তুরস্ক থেকে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র সোমবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনীর মাঝে সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ, গবেষণা, কেনাকাটা, বিনিয়োগ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অধ্যাপক হালুক গরগুন আলোচনা করতে পারেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অধীনে সরাসরি কাজ করে প্রতিরক্ষাশিল্প সংস্থা (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এজেন্সি–এসএসবি)। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক—বিশেষ করে প্রশিক্ষণ, গবেষণার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর বিকাশ ও বিবর্তনের বিষয়ে এসএসবি মূল ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুরস্কের সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং বিনিয়োগের দেখভাল করে এসএসবি।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রাজনৈতিক দিকটি দেখভাল করেন। আর তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কৌশলগত বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন হালুক গরগুন। কারণ, এসএসবি প্রতিরক্ষাশিল্প নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্য প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি সমরাস্ত্রের নকশা ও উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়।
বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, সম্প্রতি ঢাকা–আঙ্কারা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে তুরস্ক নানা ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিয়ে থাকে। গত সাত বছরে বারাক্তার টিবি–২ ড্রোনসহ অন্তত ১৫ ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ।
মূলত ২০১৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সমরাস্ত্র কেনাকাটা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির আরও কিছু সমরাস্ত্র কেনাকাটা, বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়েও আলোচনা চলছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দীর্ঘ মেয়াদে আরও শক্তিশালী হওয়ার নানা ইঙ্গিত আছে বলে মনে করেন ঢাকার কূটনীতিকেরা।
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ওমের বোলাত। সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষাশিল্প স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
উত্তরে ওমের বোলাত বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্ক টেক্সটাইল শিল্প ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৈচিত্র্যময় করতে পারে। প্রতিরক্ষাশিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধশিল্প এবং কৃষিযন্ত্র খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।
সমরাস্ত্রবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে আঙ্কারার কাছ থেকে কোবরা আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ঢাকা।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় তুরস্ক নির্মিত মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান, সাঁজোয়া যান এবং বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত কামানের গোলা বিক্রির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের কাছে সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রিতে আগ্রহী তুরস্ক। তুরস্কের একটি কোম্পানি বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে শেল বানানোর প্রযুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল নৌযান তৈরির জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমরাস্ত্র কিনেছে। ওই বছর গ্রাউন্ডেড সার্ভিলেন্স রাডার, কৌশলগত সাঁজোয়া যান কোবরা ২-সহ কয়েক ধরনের সাঁজোয়া যান ও বহনযোগ্য জ্যামার কেনা হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে অফশোর ক্রেন, সাঁজোয়া যান এবং অ্যাম্বুলেন্স, মিসাইল লঞ্চিং সিস্টেম, ওরলিকন স্কাই গার্ড রাডার সিস্টেমসহ নানা ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হয়েছে।
আরও পড়ুনতুরস্ক থেকে সমরাস্ত্র কেনা বেড়েছে২৭ ডিসেম্বর ২০২৩