সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে এক পক্ষের সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকেরা। এতে অন্তত ১৫ আহত হয়েছেন।

আবুল কাশেম ও আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন পক্ষের সাংবাদিকেরা বলছেন, আবু সাঈদ ও আবদুল বারীর নেতৃত্বে আলীপুর থেকে ভাড়াটে লোকজন নিয়ে এসে এই হামলা চালানো হয়। হামলায় ডিবিসি টিভির সাংবাদিক বেলাল হোসাইন, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমানসহ ১৫ জন আহত হয়।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের একটি কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে প্রেসক্লাবে যাচ্ছিলেন। প্রেসক্লাবে ঢোকার আগমুহূর্তে আবু সাঈদ ও আবদুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় তিনিসহ তাঁদের ১৫ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

আবুল কাশেম আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আবদুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন। তাঁদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়। যাঁরা সাংবাদিকতা ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদেরও ফ্যাসিস্ট ট্যাগ লাগিয়ে নাজেহাল করার চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতাদের ওপর বহিরাগতদের দিয়ে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার প্রতিবাদ ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার মানববন্ধন করা হবে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রেসক্লাবের আরেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী বলেন, তাঁদের নেতৃত্বে প্রেসক্লাবে একটি কমিটি রয়েছে। কিছুদিন আগে আবুল কাশেম ও আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। আজ সোমবার দুপুরে তারা বহিরাগতদের নিয়ে প্রেসক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করে। বাধার মুখে তারা চলে যেতে বাধ্য হয়। ঘটনার তিনি তীব্র নিন্দা জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ব র দ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

চিরকুট: ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’

রাজশাহীর পবার একটি ঘরে শুক্রবার সকালে চার মরদেহের সঙ্গে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যার শব্দ-বাক্যে জীবন-সংসারে অভাব ও ঋণের চরম অভিঘাতের কথা লেখা রয়েছে। তার মধ্যে দুটি বাক্য এমন- “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না।”

দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা একটি পরিবারের কর্তা ব্যক্তির বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে স্ত্রী, তারপর ছেলে-মেয়ের প্রাণ নিয়ে নিজেও শেষ হয়ে গেছেন। তবে এই চিরকুট যে তারই লেখা, সেটি তদন্তের আগে নির্ধারণ করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য পুলিশের।

পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড়ে শুক্রবার সকাল এল চারজনের জীবনাবসনের শোকের ছায়া নিয়ে। বৃহস্পতিবার রাত দ্বিপ্রহরে একই ঘরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

আরো পড়ুন:

পদ্মায় গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই ছাত্রের লাশ উদ্ধার

কুমিল্লায় মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার

৩৫ বছর বয়সি মিনারুল ইসলামের সংসার ছিল স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলাকে নিয়ে। তারা এখন বামনশিকড়ের অভাবে-ঋণে হারিয়ে যাওয়া একটি শোকগাথা।

মতিহার থানার ওসি আবদুল মালেকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিনারুলের ঘরে তাদের লাশের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে বেশ কিছু কথা লেখা আছে। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

দুই পাতার চিরকুটের ছবি রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে এসেছে, যেখানে অভাব-ঋণ, বাবা-ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া কষ্টের কথা লেখা রয়েছে।  

চিরকুটের এক পাতায় লেখা আছে, “আমি মিনারুল নিচের যে সব লেখা লেখবো। সব আমার নিজের কথা লিখে যাচ্ছি। কারণ, আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাবো। এই মৃত্যুর জন্য কারো কোনো দোষ নেই। আমি মিনারুল প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিমকে (ছেলে) মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে (মেয়ে) মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।”

চিরকুটে আরো লেখা আছে, “আমাদের চারজনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার স্ত্রী-সন্তান না দেখে এবং বাপের বড় ছেলে যেন জানাজায় না আসে। আমাদের চার জনকে কাফন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা যেন টাকা না দেয়। এটা আমার কসম।”

চিরকুটের দ্বিতীয় পাতায় লেখা আছে, “আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম, কারণ আমি একা যদি মরে যাই তাহলে, আমার স্ত্রী-সন্তানরা কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না।”

এরপরের বাক্যগুলো হুবহু এমন, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমারা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভাল হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্যে কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য অনেক মানুষের কাছে ছোট হয়েছে, আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন।”

শেষে লেখা, “ধন্যবাদ।”

ঢাকা/কেয়া/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ