সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাথরপ্রতিমা ব্লকের গোপালনগর গ্রাম। গ্রাম জুড়ে বাঘের আতঙ্ক। একজন নয়, একাধিক গ্রামবাসীর দাবি গ্রামে বাঘ দেখেছেন তারা। লোকমুখে বাঘ নিয়ে নানা কথায় আতঙ্ক ছড়ায় বহুগুণ।

অঘটন কিছু ঘটার আগেই বাঘ ধরতে গ্রামে ছুটে আসে বনদপ্তর। গ্রামের বিভিন্ন অংশে পাতা হয় ফাঁদ। নিরাপত্তার খাতিরে ছুটে আসে পুলিশ। একসময় বনকর্মী ও গ্রামবাসীদের যৌথ সমন্বয়ে ধরা পড়ে আতঙ্কের বাঘ! বাঘ দেখতে উপচে পড়ে গ্রামবাসীদের ভিড়। কিন্তু একি! এতো বাঘ নয়, বাঘরোল! ইংরেজি নাম ফিশিং ক্যাট।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উত্তর গোপালনগর এলাকার রাস্তায় মঙ্গলবার রাতে বাঘ ভেবে আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকে পথচারীরা। খবর জানাজানি হতে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর দেয়া হয় রামগঙ্গা বনদপ্তরকে, রেঞ্জার সাহেবের নেতৃত্বে বনদপ্তরে কর্মীরা ছুটে আসেন। এদিকে মানুষের ভয়ে আতঙ্কের বাঘ নিজেই আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার পাশের ধানক্ষেতে। ফলে আতঙ্ক ছড়ায় গ্রামজুড়ে।

আরো পড়ুন:

তামিলনাড়ুতে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ৬

ভারতে রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২

এদিকে বাঘ ধরতে খাঁচা পাতে বনদপ্তর, নেট দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় ধানক্ষেত। একসময় ধরা দেয় বাঘ। বাঘের চেহারা দেখেই বনকর্মীরা জানিয়ে দেয় এই বাঘ সেই বাঘ নয়। এই বাঘ বাঘরোল, অনেকে বলেন মেছোবাঘ। বিড়ালগোত্রীয় প্রাণী যার চেহারা ও আকার ও গায়ে ছোপ ছোপ দাগের কারণে অনেকেই চিতা বাঘভেবে ভুল করেন। 

মেছোবাঘ সাধারণত জলাভূমি এবং ম্যানগ্রোফ এলাকায় বাস করে। এদের উপস্থিতি সেখানকার জলাভূমির অবস্থার ভালো-মন্দ নির্ধারণে সাহায্য করে। এরা সাঁতারে পারদর্শী হওয়ায় এধরনের পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। তবে বেড়ে চলা জনবসতি, কৃষিজমি রূপান্তরসহ নানা কারণে বাঘরোলের আবাসস্থল জলাভূমিগুলো দিন দিন সংকুচিত ও হ্রাস পাচ্ছে। ফলে অনেক সময় জঙ্গল ছেড়ে খাবারের সন্ধানে গ্রামের দিকে পা বাড়াচ্ছে এই বনবিড়াল জাতীয় বিরাট আকারের প্রাণীটি। 

মঙ্গলবার প্রাণীটিকে উদ্ধারের পর বন দপ্তর জানায়, প্রাণীটি সম্ভবত জঙ্গলের ধারে সড়কে কোনো যানবাহনের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ফলে প্রাণীটিকে পাকড়াও করার পর তড়িঘড়ি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। গ্রামবাসীদের জন্য আতঙ্কের কোনো কারণ নেই । প্রাণীটি সুস্থ হলেই তাকে ফের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে। এদিকে বাঘরোল ধরা পড়ার এমন খবর চাউর হতেই বাঘের আতঙ্ক মিলিয়ে যায় হাসিতে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র মব স ব ঘর ল আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার

উগান্ডার মধ্যাঞ্চলে প্রায় ২৭ বর্গমাইল (৭০ বর্গকিলোমিটার) এলাকায় বিস্তৃত জিওয়া র‍্যাঞ্চ নামে খামারে রয়েছে প্রচুর সবুজ ঘাস, জলাভূমি, বনাঞ্চল। সেই খামারে সাত হাজার গরু ঘুরে বেড়াত। এখন আর সেখানে গরু নেই। এর জায়গায় ঘাস খায় গন্ডার। উগান্ডায় এখন কেবল এখানেই রয়েছে গন্ডার। নিজেদের প্রাকৃতিক আবাসে বসবাস করছে এসব বন্য প্রাণী।

আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় ৪০ বছর আগে গন্ডার একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে একজন খামারির হাত ধরে আবার দেশটিতে ফিরে এসেছে বন্য এ প্রাণী। সেখানকার বেসরকারি খামার জিওয়া র‍্যাঞ্চে এখন গন্ডার আছে প্রায় অর্ধশত। কীভাবে গন্ডারদের সেই দেশে ফিরিয়ে আনা হলো, বলা যাক সেই গল্প।

একসময় ধূসর ও সাদা গন্ডারের আবাসস্থল ছিল উগান্ডা। ১৯৮০-এর দশকে শিকার, চোরাচালান ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশটি থেকে গন্ডার সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। একসময় সেখানে প্রায় ৭০০টি গন্ডার থাকলেও সে সংখ্যা শূন্যে নেমে আসে।

এর এক দশক পর জিওয়া র‍্যাঞ্চের মালিক ক্যাপ্টেন জোসেফ চার্লস রয়ের কাছে গন্ডার ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেয় ‘রাইনো ফান্ড উগান্ডা’। জোসেফ এ প্রস্তাবে সম্মত হন এবং ২০০৫-০৬ সালে কেনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে ছয়টি গন্ডার নিয়ে আসেন। খামারটিতে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে সেই গন্ডারের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৪৮–এ।

৪৮টি গন্ডারের মধ্যে জিওয়া র‍্যাঞ্চে গত তিন মাসে জন্মেছে পাঁচটি শাবক। খামারের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা এই সাফল্যের মূল কারণ বলে ধরা হয়। সেখানে কর্তব্যরত রেঞ্জাররা প্রতিটি ‘গন্ডার পরিবারকে’ সার্বক্ষণিক নজরে রাখেন। গন্ডারগুলো যাতে চোরাচালানের শিকার না হয়, সে জন্য রয়েছে নিশ্ছিদ্র সীমানা পাহারার ব্যবস্থা।

জিওয়া র‍্যাঞ্চে যেসব ব্যক্তি রেঞ্জার হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের একজন শরিফ নসুবাগা। তিনি খামারটিতে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন।

শরিফ নসুবাগা বলেন, প্রতি ঘণ্টায় তাঁরা গন্ডারদের কার্যকলাপ এবং তাদের আচরণ, যেমন খাওয়া, মলমূত্র ত্যাগ, বিশ্রাম নেওয়া রেকর্ড করেন। তিনি বলেন, এই কাজ করতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে গন্ডারদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কোন গন্ডারের আচরণ কেমন, কোনটি শান্ত আর কোনটি আক্রমণাত্মক, তা তাঁরা জেনে গেছেন।

জিওয়া র‍্যাঞ্চে গন্ডারের বাইরে চিতাবাঘ, জিরাফ, জেব্রাসহ ৩০০টির বেশি প্রজাতির পাখি দেখা যায়। পর্যটকেরা এখানে এসে বন্য প্রাণীগুলো দেখতে পারেন। পর্যটকদের থেকে পাওয়া অর্থ প্রাণীগুলোর সংরক্ষণে ব্যয় হয়।

জিওয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, র‍্যাঞ্চের মূল লক্ষ্য হলো পর্যাপ্ত গন্ডার প্রজনন করে তাদের উগান্ডার জাতীয় উদ্যানগুলোতে স্থানান্তর করা। এ খামারে ৮০টি পর্যন্ত গন্ডার রাখা যেতে পারে। গন্ডারের প্রজাতিতে বৈচিত্র্য আনতে আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকে শিগগিরই আরও আটটি গন্ডার আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জিওয়া কর্তৃপক্ষ।

সার্বিক বিষয়ে উগান্ডায় গরিলা সংরক্ষণে বিপ্লব ঘটানো প্রাণিচিকিৎসক গ্ল্যাডিস কালেমা-জিকুসোকা বলেন, জাতীয় উদ্যানগুলোতে গন্ডার স্থানান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এ জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও পর্যাপ্ত রেঞ্জার অপরিহার্য।

জিকুসোকা বলেন, ইদি আমিনের শাসনামলে উগান্ডা থেকে গন্ডার সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই গন্ডার ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে, উগান্ডা আবার স্থিতিশীল হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার