মাদক কারবারের অভিযোগে মুরাদনগরে মা, ছেলে ও মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা
Published: 3rd, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে গণপিটুনিতে একই পরিবারের ৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাঙ্গুরা বাজার থানার আকবপুর ইউনিয়নের কড়াইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গণপিটুনিতে নিহতরা হচ্ছেন- রোকসানা আক্তার রুবি, তার ছেলে রাসেল মিয়া ও মেয়ে জোনাকি। আরেক মেয়ে রুমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, নিহতরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। আমরা ঘটনা তদন্ত করছি। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে তাদের হত্যা করেছেন।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে ‘ট্রাফিক সহায়ক গ্রুপ’ ভেঙে নতুন পথে শিক্ষার্থীদের একাংশ
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর সড়ক নিয়ন্ত্রণে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিতে তাঁদের দায়িত্বশীল ভূমিকা তখন প্রশংসিত হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই গত বছরের ১৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় ট্রাফিক সহায়ক গ্রুপ (ট্যাগ)। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও সম্মানীর ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই সংগঠনকে তখন সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর আশার আলো হিসেবে দেখা হয়েছিল।
কিন্তু এক বছরের মাথায় ট্যাগ ঘিরে নানা অভিযোগ জমতে শুরু করেছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েছে। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ট্যাগের একাংশ নতুন সংগঠন ট্রান্সপোর্ট সাপোর্ট ফোর্স (টিএসএফ) গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, ট্যাগ কার্যকর নয়। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তাঁরা এখন টিএসএফ নামে নতুন কাঠামোতে কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে কাজ করবে রিফর্ম বাংলাদেশ–সবার জন্য বুদ্ধিদীপ্ত ও নিরাপদ চলাচল (আরবি–আইএসএমএ)।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ট্যাগের অ্যাডমিন হিসেবে দায়িত্বে থাকা বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী দাইয়ান নাফিস প্রধান চাঁদা আদায় করেছেন, ডিএমপির বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সমালোচনাকারীদের বাদ দিয়েছেন।
নাফিস প্রধানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আরমানা হকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মিথ্যা প্ররোচনা দিয়ে জিডি করিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, অধ্যাপক আরমানা হক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের তথ্য পাঠাতেন। অথচ এটিকে ‘ডেটার অপব্যবহার (মিসইউজ)’ আখ্যা দিয়ে আরমানা হকের বিরুদ্ধে ১২ থানায় জিডি করান দাইয়ান নাফিস।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শহীদের রক্ত শুকানোর আগেই কেউ কেউ নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। এসব অনিয়ম চলতে থাকলে আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ বার্তা যাবে। তাঁদের মতে, সঠিক নীতিমালা ও কাঠামো থাকলে এসব অপরাধ প্রতিরোধ করা যেত।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, টিএসএফ পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। তবে তা পরিচালনা করবে একটি স্বতন্ত্র গভর্নিং বডি। এতে পুলিশ, স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও আট বিভাগ থেকে আটজন ট্যাগ সদস্য যুক্ত থাকবেন।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবের মধ্যে নিয়োগ সম্পূর্ণ সরকারি তত্ত্বাবধানে হতে হবে, ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি পাস, বয়স ১৮ বছর, ছেলেদের উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি, মেয়েদের উচ্চতা ৫ ফুট, পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক নিয়ম অন্তর্ভুক্তি, মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ ইত্যাদি অন্যতম।
এক মাসের মধ্যে এসব প্রস্তাব কার্যকর না হলে শিক্ষার্থীরা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ট্যাগের সদস্য জাবেদ মুনতাসির রনি বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে দায়িত্বে যোগ দেওয়ার পর প্রতিশ্রুত ৫৬০ টাকার বদলে হাতে পেয়েছেন ৪০৫ টাকা। বাকি টাকা উৎসে করের অজুহাতে কেটে রাখা হয়। কয়েক মাস পর বকেয়া কিছু অর্থ মেটানো হলেও পুরো প্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ। এ ছাড়া কর্মীদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে কোনো লিখিত নোটিশও দেওয়া হয়নি।
ট্র্যাফিক বিভাগে কর্মরত নুসরাত জাহান নামের আরেক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যাডমিন দাইয়ান নাফিস প্রধান বিসিটিএন নামে একটি সংগঠন তৈরি করে প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ এবং ট্যাগধারীদের কাছ থেকে মাসে ১০০ টাকা ফান্ড হিসেবে আদায় করতেন। তবে এই ফান্ডের কোনো হিসাব কখনো দেওয়া হয়নি।’
আরেক সদস্য তৌকিতুর রহমান অভিযোগ করেন, দাইয়ানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁকে ট্যাগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিলের শিক্ষার্থী ও পরিবেশ গবেষক মাহেরা আফরোজ বলেন, ‘আমি কখনোই চাইনি চাকরি করি। এর মধ্যে দাইয়ানের সিন্ডিকেটে পড়ে গেলাম। সে স্বার্থসিদ্ধি করে বিভিন্ন কর্ম করে গেছে, যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক সময় হেনস্তা-লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে।’
শিক্ষার্থী মোহাম্মদ দিদার আলম অভিযোগ করেন, ৩২ বছরের বেশি বয়সী সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রশিক্ষণকালীন সময়ে তাঁদের যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল।
অভিযোগের বিষয়ে দাইয়ান নাফিস প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করার জন্য এই ট্যাগ সিস্টেম শুরু করা হয়। আমি এটির অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করেছি। এ জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) ট্রাফিক অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ অফিসে অফিস করতাম। আমি অফিশিয়াল ট্যাগ নীতিমালা চেয়েছি। সেটি এখনো ডিএমপি করতে পারেনি।’
চাঁদা তোলার অভিযোগের বিষয়ে নাফিস প্রধান বলেন, শিক্ষার্থীদের জরুরি চিকিৎসা খরচ মেটাতে ফান্ড তৈরি করা হয়েছিল। তাঁর ভাষায়, ‘কোনো শিক্ষার্থী দুর্ঘটনায় পড়লে তাৎক্ষণিক কয়েক হাজার টাকার দরকার হয়। তখন যাতে টাকা জোগাড় করা যায়, এ জন্য আমরা একটা কমন ফান্ড চালু করেছিলাম। এটা ৩০ জুন পর্যন্ত চলার কথা ছিল। পরে অবশিষ্ট টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়মও ঠিক করা হয়েছিল।’
এই ফান্ডের জন্য নেওয়া টাকার সব হিসাব আছে বলে জানান নাফিস। তিনি বলেন, ‘কার চিকিৎসার জন্য কখন কত টাকা খরচ হয়েছে, তা লিখিতভাবে সংরক্ষিত আছে।’