অব্যাহত ‘মব সন্ত্রাস’ করে বিচার-সংস্কার ও নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চলছে: বাম গণতান্ত্রিক জোট
Published: 4th, July 2025 GMT
অব্যাহত ‘মব সন্ত্রাস’ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চলছে বলে মনে করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। শুক্রবার জোটের এক যৌথ বিবৃতিতে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের পটিয়া, কুমিল্লার মুরাদনগর, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, ফরিদপুরসহ সারা দেশে অব্যাহত মব সন্ত্রাস, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা ও নীরবতায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানিয়ে এই বিবৃতি দেওয়া হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী এই যৌথ বিবৃতি দেন।
নির্বাচনে যত বিলম্ব হবে, সংকট তত বাড়বে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হতে চলেছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা গণ–অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচন করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু অব্যাহত মব সন্ত্রাস করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চলছে। নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, সংকট তত বাড়তে থাকবে।’
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, অভ্যুত্থানের পরে মাজার ভাঙা, বাউল আখড়া, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর হামলা, আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন, নারীদের পোশাক নিয়ে মোরাল পুলিশিং ও সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, ভাস্কর্য, ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে, যা খুবই উৎকণ্ঠার বিষয়।
বিবৃতিতে বাম নেতারা বলেন, শুধু মব সন্ত্রাস নয়, কোনো কোনো দল ও নেতৃবৃন্দের বক্তব্য–বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান দিয়ে প্রতিস্থাপনের কথাও বলা হচ্ছে,Ñযা দেশকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেবে এবং যা চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।
সরকার মবকে প্রশ্রয় দিচ্ছে কি না—এমন প্রশ্ন তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের প্রেস সচিব যেভাবে মবকে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তথ্য উপদেষ্টা কর্তৃক মবকে গণ–আদালত, গণজাগরণ মঞ্চসহ অন্যান্য গণ–আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেছেন, এতে জনমনে প্রশ্ন হতে পারে যে তাহলে সরকার কি মবকে প্রশ্রয় দিচ্ছে?’
বিবৃতিতে সারা দেশে মব সন্ত্রাস বন্ধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা ও নীরবতার কঠোর সমালোচনা করে অবিলম্বে মব বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং মব সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ম গণত ন ত র ক জ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।