বিএনপি নেতার চড় খেয়ে লিখিত অভিযোগ নারীর
Published: 13th, July 2025 GMT
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে মনমতো চিকিৎসা পাননি বিএনপির এক নেতা। এ জন্য নাজেহাল করেন চিকিৎসককে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন এক নারী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে চড়থাপ্পড়ও মারেন ওই নেতা। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টুর বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গৃহবধূ বীথি আক্তার।
শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে যান বদিউজ্জামান মিন্টু। তিনি মেডিকেল অফিসার প্লাবন হালদারকে বলেন, তিন দিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পা কেটে গেছে। এ সময় চিকিৎসক প্লাবন তাঁকে টিটেনাস ইনজেকশন নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরামর্শ পছন্দ না হওয়ায় মিন্টু ব্যবস্থাপত্রটি ছিঁড়ে চিকিৎসকের টেবিলে ছুড়ে বের হচ্ছিলেন। এ সময় প্লাবন হালদার স্বগতোক্তির স্বরে বলেন, ‘এসব লোক কোথা থেকে আসে!’ এ কথা শুনে মিন্টু তাঁর দিকে তেড়ে আসেন। প্লাবন সরে গেলে তাঁকে গালাগাল করেন মিন্টু। এ সময় সামনে থাকা বীথি আক্তার প্রতিবাদ করলে তাঁকে কয়েকটি থাপ্পড় দেন এই বিএনপি নেতা।
বীথি আক্তারের বাড়ি হাসপাতালের কাছেই। তিনি বলেন, “বড় বোন ও মায়ের চিকিৎসার বিষয়ে পরামর্শ নিতে জরুরি বিভাগে গিয়েছিলাম। বিএনপি নেতা মিন্টুকে চিনতাম না। তাঁর অশ্লীল গালাগাল ও আচরণ দেখে আমি শুধু বলেছি, ‘একজন ডাক্তারের সঙ্গে এমন আচরণ করা ঠিক না, ভাইয়া।’ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমার ওপর হামলা চালান।”
এ ঘটনার বিচার চেয়ে শুক্রবার রাতে গৌরনদী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বীথি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো.
এদিকে চিকিৎসককে হেনস্তার ঘটনায় গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল প ল বন ব এনপ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’