জাকেরের প্রাপ্তির খাতায় কেবল ‘উইনিং নক’
Published: 23rd, July 2025 GMT
গুণে গুণে ৫ ছক্কা। দৃঢ়চেতা ইনিংসে যতটুকু পাওয়ার ছিল জাকের আলীর ততটুকু পেয়ে গেছেন ততক্ষণে। একার লড়াইয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় দলের চাহিদা পূরণ করে ফেলেছেন। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন আরেকটি ছক্কার। তাহলে টার্গেট পূরণ।
মিরপুর শের-ই-বাংলায় গতকাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং পায় বাংলাদেশ। শুরুর ব্যাটিং ধসে বাংলাদেশ বড় স্কোরের আশা ছেড়ে দেয়। উইকেট, কন্ডিশন বিবেচনায় ১৪০ এর আশেপাশে পুঁজির টার্গেট করে দল। জাকেরের একার ব্যাটিংয়ে সেদিকেই এগিয়ে যায়। ইনিংসের শেষ বলে একটি ছক্কা হলেই বাংলাদেশের পুঁজি হয়ে যেত ১৩৯!
জাকের টাইমিং মেলাতে পারেননি আগের ৫ ছক্কার মতো। বল যায় ফিল্ডারের হাতে। জাকেরের ৫৫ রানের ইনিংসে ভর করে ১৩৩ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। এরপর বোলারদের নৈপূণ্যে ৮ রানে ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা।
ম্যাচের শেষ দিকে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল। একটু এদিক-সেদিক হলেই ফল ভিন্ন হতে পারত। কত রান নিরাপদ হতে পারত সেই ধারনা খুব একটা ছিল না জাকেরেরও। ১৫০-১৬০ হওয়া সম্ভব ছিল বলে বিশ্বাস করেন তিনি, ‘‘আমরা তো জানি, এখানে হাই স্কোরিং ম্যাচ হয় না। তাই আমরা ওইরকম পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছিলাম। ১৫৫-১৬০ হওয়া সম্ভব ছিল। যদি আমরা আদর্শ ব্যাটিং করতে পারতাম। তবে আমি ব্যাটিংয়ে যাওয়ার আগে অধিনায়ক বলে দিয়েছিলেন, যেহেতু আমরা দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলেছি, ১৪০ রানের জন্য যেন যাই। আজকের পরিস্থিতির চাহিদা এটিই ছিল। এর ওপরে যেতে পারলে আরও ভালো হতো।”
২৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরে ১৩৩ রানে নিয়ে যাওয়ার কাজটা সহজ ছিল না। ৩৩ রান করে জাকেরকে সঙ্গ দেন মাহেদী। এরপর চার ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। লেজের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে ব্যাটিং করা জাকেরের পুরোনো অভ্যাস এবং এতে পুরোপুরি অভ্যস্ত। বয়সভিত্তিক দলেও একই কাজ করে এসেছেন। সতীর্থদের ভাবনা, ম্যাচের পরিস্থিতি, দলের চাহিদা সবটুকু জানা থাকায় ইনিংস মেরামতের কাজে সুবিধা হয় তার।
নিজের ব্যাটিং নিয়ে আদ্যোপান্ত বলেছেন জাকের, ‘‘লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে আমি বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই ব্যাটিং করি। বয়সভিত্তিকে আমি ৭ নম্বরে খেলতাম। অনূর্ধ্ব-১৭তে আমার একটা একশ আছে। লেজের (ব্যাটসম্যানদের) সঙ্গে ৭১ রানের জুটি গড়ে একশটা করেছিলাম। এগুলো আমার অভ্যাস আছে। এগুলো নিয়ে চিন্তাই করি না। চেষ্টা থাকে, আমার সঙ্গে যে থাকে, তাকে ব্যাটসম্যান হিসেবে একটু নিরাপদ রেখে, দুই দিক থেকেই যেন রানটা হয়, সেই চেষ্টা করি।”
৩২ টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে জাকের দ্বিতীয়বার পেলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অপরাজিত ৭২ রান করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন। এছাড়া আরো একটি ফিফটিসহ উল্লেখযোগ্য ইনিংস রয়েছে তার। তবে সেসব তাকে টানে না। তার মাথায় কেবল ‘‘উইনিং নক।’’
“ম্যাচ জেতানো ইনিংস খুব জরুরি। আমি শুধু ম্যাচ জেতানো ইনিংসগুলোই কাউন্ট করি। এছাড়া আর কোনো কিছু কাউন্ট করি না। যদি ভালো খেলি আর দল না জেতে, আমি কাউন্ট করি না। আজকে অবদান রাখতে পেরেছি, আজকে কাউন্ট হবে।”
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক উন ট য টসম
এছাড়াও পড়ুন:
গিল-সুন্দর-জাদেজার সেঞ্চুরিতে ভারতের জয়ের সমান এক ড্র
ম্যান্ডেটরি শেষ এক ঘণ্টার খেলা যখন শুরু হবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস এগিয়ে গেলেন ভারতীয় দুই ব্যাটসম্যানের দিকে। উদ্দেশ্য ড্র মেনে নিয়ে করমর্দন করা। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর ফিরিয়ে দিলেন স্টোকসকে। না, ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট জয়ের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না জাদেজা-সুন্দরের ভারতের। ৮৯ ও ৮০ রানে দাঁড়ানো দুই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির এত কাছে থেকে ফিরতে চাননি বলেই ফিরিয়ে দিয়েছেন স্টোকসের প্রস্তাব।
এরপর যা হলো সেটিকে হাস্যকর বলাই ভালো। প্রায় অন্ধকার হয়ে আসা মাঠে বল করলেন হ্যারি ব্রুক ও জো রুটের মতো অনিয়মিত স্পিনাররা। আর জাদেজা ও সুন্দর মেরেকেটে দ্রুতই তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। প্রথমে সেঞ্চুরিতে পৌঁছালেন জাদেজাই। ব্রুককে ছক্কা মেরেই পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিলেন।
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা সুন্দর তিন অঙ্ক ছুঁলেন ১৫ বল পর ব্রুকের বলেই ২ রান নিয়ে। এরপরই দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাত মিলিয়ে ড্র মেনে মাঠ ছাড়েন। আর তাতে ওভালে সিরিজের শেষ ম্যাচটাই হয়ে গেল সিরিজ নির্ধারণী। চার ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।
শেষটা অদ্ভুতুড়ে হলেও জাদেজা ও সুন্দরের অবশ্য সেঞ্চুরি পাওনা হয়েই গিয়েছিল। সকালে লোকেশ রাহুল ও শুবমান গিলের বিদায়ের পর শেষ দুই সেশনে কী প্রতিরোধটাই গড়েছেন দুজন। ইনিংস হারের শঙ্কা উড়িয়ে ম্যাচটা ড্র করে ভারতকে সিরিজে টিকিয়ে রাখার পুরস্কারই তো সেঞ্চুরিতে পেলেন দুজন।
ম্যাচটা যখন শেষ হলো ভারতের স্কোর ৪২৫/৪। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে চেয়ে দলটি এগিয়ে গিয়েছিল ১১৪ রানে। স্টোকস যখন প্রথমবার ড্রর প্রস্তাব দিলেন তখন দলটি এগিয়ে ছিল ৭৫ রানে। পঞ্চম উইকেটে ২০৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া জাদেজা ১৮৫ বলে ১০৭ ও সুন্দর ২০৬ বলে ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
আজ শেষ দিনটা ভারত শুরু করে ২ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে। ৩১১ রানের ঘাটতি নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা দলটি গতকাল শূন্য রানেই প্রথম ২ উইকেট হারিয়ে ইনিংস ব্যবধানে হারার শঙ্কায় পড়ে। তবে গিল-রাহুল সেদিন আর উইকেট পড়তে দেননি। দলটি তৃতীয় উইকেট হারায় ১৮৮ রানে। ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুলকে এলবিডব্লু করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরির পাননি রাহুল। তবে ১৮৮ রানের জুটিতে তাঁর সঙ্গী শুবমান গিল সেঞ্চুরি তুলেই ফিরেছেন, করেছেন ১০৩ রান। এই সিরিজে যা ভারত অধিনায়কের চতুর্থ সেঞ্চুরি। তাতে এক সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে দুই কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও সুনীল গাভাস্কারের পাশে বসেছেন গিল।
গিল ফেরেন ২২২ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ভারত তখন পিছিয়ে ৮৯ রানে। এরপর আর উইকেট হারায়নি ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোরভারত: ৩৫৮ ও ১৪৩ ওভারে ৪২৫/৪ (গিল ১০৩, জাদেজা ১০৭*, সুন্দর ১০১, রাহুল ৯০; ওকস ২/৬৭, স্টোকস ১/৩৩, আর্চার ১/৭৮)।ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৬৯।
ফল: ড্র
সিরিজ: ৫-ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-১-এ এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বেন স্টোকস।