আমরা এমন একটি বনের গল্প বলতে যাচ্ছি, যেখানে এখন মাত্র একটি শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) গাছ অবশিষ্ট আছে। অনেকে হয়তো ভাববেন, এক গাছে কি বন হয়? নিশ্চয়ই হয় না। একসময় এই বনেই হাজারো প্রজাতির গাছ, লতাগুল্ম ও পশুপাখির সমাহার ছিল। এর আয়তন ছিল ৩০ বর্গকিলোমিটারের বেশি। সাগর-সংলগ্ন হওয়ায় জোয়ার-ভাটার পানিতে বনের নিম্নাঞ্চল ভেসে যেত, যেখানে সাগরের নানা জাতের মাছ পাওয়া যেত। বন ও স্থানীয় মানুষের মধ্যে ছিল নিবিড় সম্পর্ক।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ফাঁসিয়াখালীর নতুন মসজিদ এলাকায় দুটি সুন্দরী গাছ দেখা যায়। এটি আসলে একটি। কারণ, গাছ দুটির শিকড় একটি। এখান থেকে ২০ ফুট দূরত্বে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। আশপাশে তেমন জনবসতি নেই।
সম্প্রতি এক দুপুরে গাছটির কাছে গিয়ে দেখা যায়, এর ডালে পাখির কোলাহল নেই। শুধু দাঁড়িয়ে আছে একটি গাছ, যা হারিয়ে যাওয়া বনের সাক্ষ্য বহন করে। এখানেই দেখা হলো স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল লতিফের সঙ্গে। চকরিয়াকে তিনি সুন্দরবন নামেই চিনতেন। কীভাবে বনটি ‘নাই’ হয়ে গেল, তা নিজের চোখে দেখেছেন। লতিফ থাকেন চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ছগিরশাহকাটা এলাকায়, আদিনিবাস বদরখালীতে।
আবদুল লতিফ বলেন, ‘আঁরা ছোডো হালে সুন্দরবনত যাই মাছ ধজ্জি। এড়ে গোলপাতা আইনত্তু যাইতাম। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া, ধুন্দল, গোলপাতা গাছ আছিল। ইন ছাড়াও বাঘ, হরিণ, বানর, হনুমান, বনবিড়াল, কুমির, সাপ—হত কিছু দেইতাম। এহন বেয়াগ্গিন শেষ অইগেঐ। মাছর ঘোনা আর নুনর মাঠ ছাড়া কিছু নাই। এহন উদু উগ্গো সুন্দরীগাছ আছে। ইবে চাইবার লাই হত মানুষ আইয়্যে।’ (আমরা ছোটকালে সুন্দরবনে গিয়ে মাছ ধরতাম। সেখানে গোলপাতা আনতে যেতাম। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া, ধুন্দল, গোলপাতা গাছ ছিল। এ ছাড়া বাঘ, হরিণ, বানর, হনুমান, বনবিড়াল, কুমির, সাপ—কত কিছু দেখতাম। এখন সব শেষ হয়ে গেছে। মাছের ঘের আর লবণ মাঠ ছাড়া কিছু নেই। এখন শুধু একটা সুন্দরীগাছ আছে। এটা দেখতে কত মানুষ আসে।)
এভাবে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে কেবল একটি বনই উধাও হয়নি; এতে স্থানীয় মানুষের জ্বালানির উৎস বিপন্ন হয়েছে, প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ নিঃশেষ হয়েছে, বননির্ভর মানুষ পেশা হারিয়েছে, জলাভূমি নষ্ট হয়েছে, মাটির লবণাক্ততা বেড়েছে, জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস রোধের প্রাকৃতিক বর্ম ধ্বংস হয়েছে। এর আর্থিক ক্ষতিও বিশাল।
অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুজাতিক সংস্থার প্রশ্রয়ে রাষ্ট্রীয় কথিত উন্নয়ন প্রকল্প কীভাবে একটি প্রাকৃতিক মহাসম্ভার ধ্বংস করে, তা দেখা যায় চকরিয়ায়। এর সঙ্গে মিশে আছে ভুল উন্নয়ন দর্শন, ঋণদাতা গোষ্ঠীর ভ্রান্ত পরিকল্পনা আর রাষ্ট্রের সুবিধাবাদী শ্রেণির লোভ। চকরিয়ার বন ধ্বংসের ফল আমরা পাচ্ছি। আরও দীর্ঘ সময় ধরেই এর প্রভাব থাকবে।’
চকরিয়া সুন্দরবনের অবস্থান
উপমহাদেশের প্রাচীন ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বনের একটি ছিল চকরিয়া সুন্দরবন। বাংলাদেশে তিন ধরনের সুন্দরবন রয়েছে: বিশ্বের বৃহত্তম খুলনা অঞ্চলের সুন্দরবন, দ্বিতীয় বৃহত্তম চকরিয়ার সুন্দরবন (যা এখন বিলুপ্ত) এবং তৃতীয়টি হলো বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলের সৃজিত সুন্দরবন। চকরিয়া সুন্দরবন চারদিক জলরাশি পরিবেষ্টিত ছিল।
এক সময়ের ঘন সুন্দরবন চকরিয়ার চতুর্দিক ছিল মোটামুটি এমন: পূর্বদিকে আরাকান সড়ক, উত্তর-পূর্ব দিকে জনবসতি, কৃষিভূমি, লবণ মাঠ, সোজা দক্ষিণ দিকে মহেশখালী চ্যানেল। মাতামুহুরী নদীর পশ্চিম পাশের সুন্দরবন রামপুর এলাকা নামে পরিচিত ছিল এবং পূর্ব পাশে ছিল চরণ-দ্বীপ।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার শহরে যাওয়ার পথে চকরিয়া উপজেলা শহর। চকরিয়ার দুই পাশে অসংখ্য দোকানপাট। রাস্তার ডান পাশ দিয়ে বদরখালী সড়ক। এ সড়ক ধরে বদরখালী যাওয়ার সময় দুই পাশে যত দূর পশ্চিমে যাওয়া যায়, শুধু লবণের ঘের।
চকরিয়া সদর ছেড়ে পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের বহদ্দারকাটা এলাকায় রাস্তার পাশেই দেখা হলো একদল শ্রমিকের সঙ্গে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে লবণের ঘের। ঘের থেকে লবণ এনে সড়কের পাশেই স্তূপ করে রাখছেন শ্রমিকেরা। এসব শ্রমিকের একজন জহুরুল ইসলাম (৪২) জানান, তিনি ছোটবেলায় বনের কিছু অংশ দেখেছেন, এখন সেসব স্মৃতি।
১৯৫৪ সালে প্রকাশিত ‘কক্সবাজার ওয়ার্কিং প্ল্যান ফর দ্য পিরিয়ড ফ্রম ১৯৫০ টু ১৯৬৯-৭০’ শীর্ষক এক সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, চকরিয়া সুন্দরবন ১৯০৩ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটি উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ম্যানগ্রোভ বন। কৃষিজমি সম্প্রসারণ, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, মাছ ধরা ইত্যাদির জন্য বনটি নানাভাবে মানব হস্তক্ষেপের শিকার হয়। চকরিয়া সুন্দরবন প্রায় ২১ হাজার ১০২ একর এলাকাজুড়ে ছিল পঞ্চাশের দশকে। পরবর্তী সময়ে ১৮ হাজার ৫০৮ একর জমিকে সংরক্ষিত বন এবং বাকি অংশকে রক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘বন উজাড় করে চিংড়ির ঘের, তারপর সেই চিংড়ি চাষে ধস, অতঃপর লবণের ঘের—এই হলো চকরিয়া সুন্দরবনের ইতিহাস। এখন সাবেক বনভূমি লবণের চাষ করতে করতে যে অবস্থায় গেছে, তাতে মাটি তার প্রায় সমস্ত সক্ষমতা হারিয়েছে। বন পুরো উজাড় হওয়ার শুরুটা গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে।
যেভাবে বন বিনাশ হলো
চকরিয়ার বনে মানুষের বসতি স্থাপন অনেক আগে থেকেই হয়েছিল। বন কেটে স্থানীয় মানুষের একটি অংশের জন্য সেখানে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। তার পরও সত্তর দশকের শুরুতে চকরিয়ায় চমৎকার বন ছিল।
বসতি স্থাপনকারীরা সমুদ্রের পানি থেকে লবণ উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। লবণ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য তাঁরা বনের কাঠের ওপর নির্ভর করতেন। এই কার্যকলাপ বন ধ্বংসে এক ধরনের ভূমিকা রেখেছিল; কিন্তু তা ভয়ংকর ছিল না।
‘ডিমাইজ অব চকরিয়া সুন্দরবন: হু ইজ টু ব্লেম’ নামের একটি গবেষণায় বন বিনাশের চিত্র তুলে ধরেছেন লস্কর মুকসেদুর রহমান ও নিখিল চাকমা। তাঁরা বন ধ্বংসের শুরুর কথা লিখেছেন, ১৯৭৭ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় একটি সরকারি আদেশের মাধ্যমে চকরিয়া সুন্দরবনের রামপুর ব্লকের বদরখালী ঘোনা মৌজায় ৫৬৩ একর সংরক্ষিত বন এক বছরের জন্য ইজারা দেয় ‘শ্রিম্প অ্যান্ড ডাকারি ফার্ম’কে। এই খামার ছিল স্থানীয় প্রভাবশালী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর মালিকানাধীন। ইজারার উদ্দেশ্য ছিল চিংড়ি চাষ, হাঁস পালন ও অ্যাগ্রোফিশারি কার্যক্রম। এটিই ছিল চকরিয়া সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনভূমি চিংড়ি চাষের জন্য সরকারের প্রথম ইজারা উদ্যোগ, যা পরে এই বনাঞ্চল ধ্বংসের পথ খুলে দেয়।
চকরিয়া সুন্দরবনের বড় ধ্বংস শুরু হয় যখন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংক ওই এলাকায় চিংড়ি চাষে বিনিয়োগ শুরু করে।
ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এডিবি ১৯৮২ সালে চিংড়ি চাষে অর্থায়ন শুরু করে। এর আওতায় শতাধিক চিংড়ি খামার (প্রতিটি ১১ একর করে) চালু এবং একটি ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এডিবির অ্যাকুয়া কালচার প্রকল্পের নামে চিংড়ি চাষের প্রকল্প শুরু হয়। দ্বিতীয়বারের মতো কৃষি মন্ত্রণালয় সংরক্ষিত বনভূমির আরও ২ হাজার একর জমি মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তরের জন্য আদেশ দেয়। চকরিয়ায় গাছ কাটার ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয় আশির দশকেই।
বদরখালীর মগনামাপাড়া এলাকার প্রান্ত দিয়ে চলে গেছে মহেশখালী চ্যানেল। এর কাছেই ছিল ঘন সুন্দরবন। এখন সেটি শুধুই স্মৃতি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন র র স ন দরবন চকর য় র বদরখ ল র জন য লবণ র এখন স র একট র দশক
এছাড়াও পড়ুন:
এক দশকে ১ লাখ হেক্টর বনভূমি কমেছে
দেশে এক দশকে বনভূমি হ্রাস পেয়েছে ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর, যা ঢাকা শহরের আয়তনের প্রায় সাড়ে তিন গুণ। গত এক দশকে দেশ থেকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির গাছ।
সারা দেশে বনাঞ্চলে যে পরিমাণ গাছ আছে, গ্রামাঞ্চলে গাছের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। তবে গ্রামে গাছের ঘনত্ব কম। আর বন উজাড় বেশি হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলে। সেখানে একমুখী প্রজাতির ফসল চাষের প্রসার ও সড়ক সম্প্রসারণের কারণে বন উজাড় হচ্ছে।
বনের সার্বিক চিত্র জানতে ২০২৪ সালে বন অধিদপ্তরের করা জাতীয় বন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়২০১৫ সালে জাতীয় বন জরিপে বন আচ্ছাদনের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সেটি এখন কিছুটা হ্রাস পেয়ে ১২ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বন জরিপে দেশে বনভূমি আছে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর। আগের বন জরিপে যেটির পরিমাণ ১৮ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর।
জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।’
‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা, অবক্ষয়িত বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা’র আহ্বান জানিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৭২ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবসের মর্যাদা দেয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে বন উজাড়ীকরণের হার ১ দশমিক ১ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে সেটি ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
বন অধিদপ্তরের ২০টি দল মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করে ২০২৪ সালের মার্চে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাদের তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়। উপকূলীয় বন, শালবন, সুন্দরবন, পার্বত্যাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকায় মোট ১ হাজার ৮৫৮টি নমুনা প্লটের ভিত্তিতে এ জরিপের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।
জরিপে দেশে প্রতি হেক্টরে গাছের ঘনত্ব পাওয়া গেছে ১১৭টি। সবচেয়ে বেশি গাছের ঘনত্ব আছে সুন্দরবনে। এখানে গাছের ঘনত্ব প্রতি হেক্টরে ৭০২টি। বনাঞ্চলের চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় গাছের ঘনত্ব কম হলেও মোট গাছের পরিমাণ বেশি। গ্রামীণ এলাকায় মোট গাছের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি।
২০১৫ সালের বন জরিপে গাছের সংখ্যা ছিল ১৬৯ কোটি। সাম্প্রতিক জরিপে সেটা কিছুটা কমে হয়েছে ১৫৭ কোটি। গত এক দশকে হ্রাস পাওয়া গাছের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। জরিপে সারা দেশে ৩২৬টি গাছের প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪২টি প্রজাতি পাওয়া গেছে পার্বত্যাঞ্চলে। সুন্দরবনে পাওয়া গেছে ২২ প্রজাতির গাছ। এর আগে বন জরিপে (২০১৫) ৩৯০ প্রজাতির গাছ শনাক্ত করেছিল বন অধিদপ্তর। গত এক দশকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির বৃক্ষ।
কেন কমছে পার্বত্যাঞ্চলের বন
২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় পার্বত্যাঞ্চল বাংলাদেশের মোট বন আচ্ছাদনের ৪০ শতাংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দ্রুত প্রসার ঘটছে অর্থকরি ফলের চাষ (হর্টিকালচার) ও একমুখী প্রজাতির বনায়ন (মনোকালচার), যেমন রাবারবাগান।
জানতে চাইলে জাতীয় বন জরিপের সঙ্গে যুক্ত থাকা বন অধিদপ্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত) জহির ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বৈধ ও অবৈধভাবে বন উজাড় হয়ে আসছে। এখানে একদিকে বন উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে বনায়ন করা যায় না। যার কারণে এখানে বনভূমি হ্রাস পাওয়ার পরিমাণ বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কামাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বন বিভাগ কিছু করতে পারে না। পাহাড়িরা কিছু গামার আর সেগুনগাছের বাগান করেন। পুরো পার্বত্য অঞ্চলে সড়ক সম্প্রসারণ হয়েছে গত কয়েক দশকে। যেমন সীমান্ত রোড হয়েছে।
কামাল হোসাইন বলেন, এ ছাড়া এখানে বিনোদনকেন্দ্র ও রিসোর্টের সংখ্যা বাড়ছে। এটা একটা দিক। অন্যদিকে অনেক প্রভাবশালী এখন ড্রাগন, কাজু ও আমের চাষ করছেন প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে। এ অঞ্চলের বনের ওপর বহুমুখী চাপের কারণে এখানে বনাঞ্চল হ্রাস পাওয়ার হার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি।
কামাল হোসাইন আক্ষেপ করে বলেন, ‘কেউ বনকে ভালোবাসে না। মানুষের লোভের শিকার হয়েছে এখানকার প্রাকৃতিক বন। এটাই আমাদের সর্বনাশ করেছে।’