কুয়েতে বসে সিসিটিভিতে দেখলেন বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা, যেভাবে ডাকাত তাড়ালেন প্রবাসী যুবক
Published: 24th, July 2025 GMT
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের পূর্ব কাবিলপুর গ্রাম। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ওই গ্রামেরই কামাল পাটোয়ারির বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাত দল হানা দেয়। কামাল পাটোয়ারির ছেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে থাকেন। সেখানে বসেই তিনি মুঠোফোনে সিসিটিভিতে দেখতে পান, বাড়ির প্রধান ফটক ভাঙার চেষ্টা করছে ডাকাতের দল। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি প্রতিবেশীদের জানান তিনি। প্রতিবেশী ও আশপাশের মানুষের চিৎকারে চারদিক থেকে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। আর এসব দেখে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।
সম্প্রতি নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গতকাল রাতে কেবল সেনবাগের কাবিলপুর ইউনিয়নেরই দুটি গ্রামের তিনটি বাড়িতে ডাকাতেরা হানা দেয়। দুটি বাড়িতে সফলভাবে লুটপাট করতে পারলেও সিসিটিভির কারণে কামাল পাটোয়ারির বাড়িতে ঢুকতে পারেনি ডাকাত দল।
কাবিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, কয়েক মাস আগে বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন কামাল পাটোয়ারি। গতকাল রাতে যখন ডাকাতেরা বাড়ির প্রধান ফটক ভাঙার চেষ্টা করছিল, তখন ওয়াই–ফাই ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদেশে থাকা কামাল পাটোয়ারির ছেলে আবদুল হাই মুঠোফোন সেটে পুরো ঘটনাই দেখতে পান। তখন তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের ফোন করে বিষয়টি জানান। এরপর বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা অনেকেই ডাকাত, ডাকাত বলে চিৎকার করলে ডাকাতেরা পালিয়ে যায়।
এর আগে গতকাল দিবাগত রাতে উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের মইজদীপুর ও কাবিলপুর গ্রামে দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র ডাকাতেরা দুই বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, সোনার গয়নাসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সেনবাগ থানার পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে ৮-১০ জন মুখোশ পরা ডাকাত কাবিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের মইজদীপুর গ্রামের বাড়িতে হানা দেয়। তারা বাড়ির বসতঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে থাকা পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৮ ভরি সোনার গয়না লুট করে নিয়ে যায়। এরপর ডাকাতেরা সিরাজুলের বড় ভাই আবদুল খালেকের তালাবদ্ধ ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মালামাল তছনছ করে। তবে সেখান থেকে কিছু লুট হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
এ ঘটনার পর রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে দিকে একই ইউনিয়নের পূর্ব কাবিলপুর গ্রামের তফাদার বাড়ির বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হুমায়ুন কবিরের নতুন বাড়িতে হানা দেয়। তারা বসতঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে আনুমানিক ১০ ভরি সোনার গয়না, নগদ ১ লাখ ২১ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
ডাকাতির খবর পেয়ে বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম ইমরান খান, সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ তিনটি বাড়ি পরিদর্শন করেছে। ওসি এস এম মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে ডাকাতির সত্যতা পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগপ্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।