আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪০ মিনিট, দুই হাত পেছনে নিয়ে পরানো হয় হাতকড়া
Published: 24th, July 2025 GMT
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত আটটা। একটা নীল রঙের প্রিজন ভ্যান হুইসেল বাজিয়ে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের প্রধান ফটকে প্রবেশ করে।
প্রিজন ভ্যান ঢুকতে দেখে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের শাস্তি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। প্রিজন ভ্যানটি দ্রুতগতিতে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানার ভেতরে ঢুকে যায়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যখন আদালতের হাজতখানায়, তখন হাজতখানার সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা তাঁর শাস্তির দাবিতে মিছিল করতে থাকেন।
তখন ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের প্রধান উপকমিশনার (ডিসি) তারেক জুবায়ের সিএমএম আদালতের প্রধান ফটক দিয়ে ওপরে ওঠেন। পুলিশ সদস্যদের কড়া নির্দেশনা দেন, কেউ যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে। আদালতে প্রবেশের সবগুলো ফটক বন্ধ করা হয়।
আদালতের সামনে অবস্থান নেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তখন হাজতখানার ভেতর থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে বের করা হয়। তাঁকে আদালতের সামনের সড়ক দিয়ে না নিয়ে আদালতের ভেতরের একটি রাস্তা দিয়ে আদালতের সিঁড়ির কাছে নিয়ে আসা হয়।
তখন দেখা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের দুই হাত পেছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হয়েছে হাতকড়া। বুকে পুলিশের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। তাঁর পরনে ছিল সাদা শার্ট আর কালো রঙের প্যান্ট। পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল। নিচতলা থেকে দুই পুলিশ সদস্য তাঁর দুই বাহু ধরে রাখেন। পরে দুই পুলিশ সদস্যের বাহুর ওপর ভর দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে হেঁটে তিনি আদালতের তিনতলায় ওঠেন। পরে তাঁকে নেওয়া হয় আসামির কাঠগড়ায়। তিনি যখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁর দুই হাত পেছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হাতকড়া খোলার উদ্যোগ নেন একজন পুলিশ সদস্য। সাবেক প্রধান বিচারপতি মাথা নিচু করে ছিলেন। তখন একজন পুলিশ সদস্য তাঁর হাতকড়া খুলে দেন। এ সময় সাবেক প্রধান বিচারপতির ডান হাতে ঝুলছিল হাতকড়া। তিনি কাঠগড়ার মাঝখানে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অন্তত এক শ নেতা-কর্মী। আর ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
তখন সময় রাত ৮টা ১০ মিনিট। ঢাকার সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মো.
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হককে আজ সকালে গ্রেপ্তার করা হয় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে। পরে তাঁকে নেওয়া হয়েছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে।
‘আওয়ামী লীগের একজন কর্মীর মতো আচরণ করেছেন’বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গত বছরের ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে নিহত হন যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার আসামিদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক খালেদ হাসান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। খালিদ হাসান লিখিতভাবে আদালতকে বলেন, ২০১১ সাল থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি থাকাকালে আসামি এ বি এম খায়রুল হক বিভিন্ন সময়ে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন, জাল–জালিয়াতি করেছেন। জালিয়াতি করে প্রকৃত রায় হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় মামলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানাতেও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি থাকাকালে শপথ ভঙ্গের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে তাঁকে হাজতখানায় নেওয়া হয়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য হ জতখ ন র ল হকক আইনজ ব কর ছ ন হ তকড় ক ঠগড
এছাড়াও পড়ুন:
এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে রিটের শুনানি মুলতবি
এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য জারি করা অধ্যাদেশটির বৈধতা নিয়ে রিটের শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামের নতুন দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠায় গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ ১৭ মে রিটটি করেন। আজ রিটটি শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ৭৯ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী জুয়েল আজাদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী ও আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হলে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। আগামী সপ্তাহে রিটটি শুনানির জন্য আসবে।
‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ শিরোনামের ওই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ ও কর আদায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। রাজস্ব সংগ্রহের মূল কাজ করবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
আরও পড়ুনএনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশের বৈধতা নিয়ে রিট১৭ মে ২০২৫রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, সংবিধানের ২৬, ৩১ ও ২৯(১) অনুচ্ছেদের আলোকে ওই অধ্যাদেশটি কেন সাংঘর্ষিক এবং আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ে অংশীজনদের (দলগত) প্রস্তাব প্রকাশ করতে বিবাদীদের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রুল বিচারাধীন অবস্থায় ওই অধ্যাদেশের কার্যক্রমও স্থগিত চাওয়া হয়েছে রিটে। আইনসচিব ও অর্থসচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।