পুলিশকে ছুরিকাঘাতের পর দৌড়ে পুকুরে লাফ দেন যুবক: ব্রিফিংয়ে পুলিশ
Published: 25th, July 2025 GMT
গাইবান্ধায় সাঘাটা থানায় ঢুকে পুলিশের ওপর হামলা করা যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ব্রিফ করেছে পুলিশ। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে সাঘাটা থানা চত্বরে ব্রিফ করেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুন্ডু।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এক যুবক থানায় এসে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশের এক কনস্টেবলের বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের অন্য সদস্যরা বাধা দিলে এক এএসআইকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান তিনি। পরে আজ সকালে থানার পাশে একটি পুকুর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তির নাম সিজু মিয়া (২৫)। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাগুরিয়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর দুলাল মিয়ার ছেলে।
পুলিশ কর্মকর্তা বিদ্রোহ কুমার কুন্ডু জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ওই যুবক সাঘাটা থানায় আসেন। তিনি একটি মুঠোফোন হারিয়ে গেছে মর্মে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চান। দায়িত্বরত কর্মকর্তা (ডিউটি অফিসার) তাঁর কাছে মুঠোফোন নম্বর, আইএমইআই নম্বর এবং কবে, কখন, কোথায় হারিয়ে গেছে, তা জানতে চান। সিজু মিয়া ১৫ থেকে ২০ মিনিট পুলিশে ওই কর্মকর্তার সামনে থাকলেও এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এরপর রাত ৯টার দিকে তিনি থানা থেকে বের হয়ে যান।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, পরে রাত ৯টা ৫৬ মিনিটের দিকে একটি ছুরি হাতে সিজু মিয়া আবার থানায় আসেন। এরপর তিনি দায়িত্বরত কনস্টেবল সিরাজুল ইসলামকে আঘাত করেন ও তাঁর কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁরা দুজনে হাতাহাতি করা অবস্থায় দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করেন। সিজু মিয়া হাতে থাকা ছুরি দিয়ে পুলিশকে এলোপাতাড়ি আক্রমণ করার চেষ্টা করেন। এ সময় একজন এএসআই আহত হন। এ সময় আরও কয়েকজনকে আঘাত করতে উদ্যত হন সিজু মিয়া। রাত ৯টা ৫৭ মিনিটের দিকে তিনি দৌড়ে পাশের একটি পুকুরে লাফ দেন। থানার পুলিশ ও এলাকাবাসী সেখানে তাঁকে খুঁজতে চেষ্টা করে। বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকেও জানানো হয়। পুকুরের গভীরতা বেশি থাকায় রাতে উদ্ধারকাজ শুরু করা যায়নি।
পুলিশ কর্মকর্তা বিদ্রোহ কুমার কুন্ডু বলেন, আজ সকালে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ শুরু করলে পুকুর থেকে সিজু মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁর নাম, ঠিকানা ও পরিচয় জানা যায়।
এদিকে ভাগনের মৃত্যুর খবর লোকমুখে শুনে সাঘাটা থানায় ছুটে যান বাগুরিয়া গ্রামের চা–দোকানি শাহ আলম (৪৫)। তিনি বলেন, সিজুর বাড়ি কয়েক কিলোমিটার দূরে, তারপরও কী কারণে তিনি সাঘাটা থানায় যায়, তাঁরা জানেন না। থানায় যাওয়ার আগে মা–বাবাকেও বলেননি। আজ সকালে তাঁরা তাঁর মৃত্যুর খবর পান। তিনি বলেন, সিজু এইচএসসি পাস করেছেন। গাইবান্ধায় কম্পিউটারের কাজ শিখছেন। তিনি ভদ্র ছেলে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চান।
এদিকে বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম মুঠোফোনে বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ জানা যাবে না। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুনগাইবান্ধায় থানায় ঢুকে পুলিশকে ছুরিকাঘাত করা যুবকের লাশ মিলল পাশের পুকুরে২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ঘ ত কর তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
গিল-সুন্দর-জাদেজার সেঞ্চুরিতে ভারতের জয়ের সমান এক ড্র
ম্যান্ডেটরি শেষ এক ঘণ্টার খেলা যখন শুরু হবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস এগিয়ে গেলেন ভারতীয় দুই ব্যাটসম্যানের দিকে। উদ্দেশ্য ড্র মেনে নিয়ে করমর্দন করা। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর ফিরিয়ে দিলেন স্টোকসকে। না, ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট জয়ের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না জাদেজা-সুন্দরের ভারতের। ৮৯ ও ৮০ রানে দাঁড়ানো দুই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির এত কাছে থেকে ফিরতে চাননি বলেই ফিরিয়ে দিয়েছেন স্টোকসের প্রস্তাব।
এরপর যা হলো সেটিকে হাস্যকর বলাই ভালো। প্রায় অন্ধকার হয়ে আসা মাঠে বল করলেন হ্যারি ব্রুক ও জো রুটের মতো অনিয়মিত স্পিনাররা। আর জাদেজা ও সুন্দর মেরেকেটে দ্রুতই তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। প্রথমে সেঞ্চুরিতে পৌঁছালেন জাদেজাই। ব্রুককে ছক্কা মেরেই পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিলেন।
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা সুন্দর তিন অঙ্ক ছুঁলেন ১৫ বল পর ব্রুকের বলেই ২ রান নিয়ে। এরপরই দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাত মিলিয়ে ড্র মেনে মাঠ ছাড়েন। আর তাতে ওভালে সিরিজের শেষ ম্যাচটাই হয়ে গেল সিরিজ নির্ধারণী। চার ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।
শেষটা অদ্ভুতুড়ে হলেও জাদেজা ও সুন্দরের অবশ্য সেঞ্চুরি পাওনা হয়েই গিয়েছিল। সকালে লোকেশ রাহুল ও শুবমান গিলের বিদায়ের পর শেষ দুই সেশনে কী প্রতিরোধটাই গড়েছেন দুজন। ইনিংস হারের শঙ্কা উড়িয়ে ম্যাচটা ড্র করে ভারতকে সিরিজে টিকিয়ে রাখার পুরস্কারই তো সেঞ্চুরিতে পেলেন দুজন।
ম্যাচটা যখন শেষ হলো ভারতের স্কোর ৪২৫/৪। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে চেয়ে দলটি এগিয়ে গিয়েছিল ১১৪ রানে। স্টোকস যখন প্রথমবার ড্রর প্রস্তাব দিলেন তখন দলটি এগিয়ে ছিল ৭৫ রানে। পঞ্চম উইকেটে ২০৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া জাদেজা ১৮৫ বলে ১০৭ ও সুন্দর ২০৬ বলে ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
আজ শেষ দিনটা ভারত শুরু করে ২ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে। ৩১১ রানের ঘাটতি নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা দলটি গতকাল শূন্য রানেই প্রথম ২ উইকেট হারিয়ে ইনিংস ব্যবধানে হারার শঙ্কায় পড়ে। তবে গিল-রাহুল সেদিন আর উইকেট পড়তে দেননি। দলটি তৃতীয় উইকেট হারায় ১৮৮ রানে। ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুলকে এলবিডব্লু করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরির পাননি রাহুল। তবে ১৮৮ রানের জুটিতে তাঁর সঙ্গী শুবমান গিল সেঞ্চুরি তুলেই ফিরেছেন, করেছেন ১০৩ রান। এই সিরিজে যা ভারত অধিনায়কের চতুর্থ সেঞ্চুরি। তাতে এক সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে দুই কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও সুনীল গাভাস্কারের পাশে বসেছেন গিল।
গিল ফেরেন ২২২ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ভারত তখন পিছিয়ে ৮৯ রানে। এরপর আর উইকেট হারায়নি ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোরভারত: ৩৫৮ ও ১৪৩ ওভারে ৪২৫/৪ (গিল ১০৩, জাদেজা ১০৭*, সুন্দর ১০১, রাহুল ৯০; ওকস ২/৬৭, স্টোকস ১/৩৩, আর্চার ১/৭৮)।ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৬৯।
ফল: ড্র
সিরিজ: ৫-ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-১-এ এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বেন স্টোকস।