নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানি না হন, সে জন্য মামলার তদন্তে সময় লাগছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 26th, July 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মামলাগুলোয় ২০ জন আসামি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেখা গেছে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ জন্য তদন্তে সময় বেশি লাগছে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কোনো অবস্থায়ই শাস্তির আওতায় না আসেন। অনেকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করেছেন। প্রকৃত আসামিদের নাম দেওয়া হলে তদন্তে এত সময় লাগত না।
আজ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনসে পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা, সত্য ঘটনা আপনাদের তুলে ধরার আহ্বান জানাই। লুকোচুরি করার কিছু নেই। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তো থাকবেই, তারা জনগণের সঙ্গে পুলিশের বিভেদ তৈরির চেষ্টা চালাবেই।’ যেসব রাজনৈতিক দল পুলিশের সঙ্গে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের বিভেদ দূর করবেন। পুলিশের সঙ্গে বিভেদ থাকার কথা নয়। আপনাদের কাজ হচ্ছে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট আদায় করা, আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণ যাতে সুখে–শান্তিতে থাকতে পারে, সেটার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয়, তা রক্ষা করা। আর আপনাদের (সাংবাদিক) কাজ হচ্ছে সত্যি সংবাদ তুলে ধরা।’
গত বছরের ৫ আগস্ট সারা দেশে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সব অস্ত্র উদ্ধার করতে পারিনি। তবে নির্বাচনের আগে আরও অনেক অস্ত্র উদ্ধার হয়ে যাবে। আপনাদের সহযোগিতায়, জনগণের সহযোগিতায় অস্ত্রগুলো উদ্ধারের অবশ্যই চেষ্টা করব।’ তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো স্টেক (অংশীজন) নয়, এখানে সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার যারা রাজনৈতিক দল বা যারা ইনডিপেনডেন্টভাবে নির্বাচন করবেন। তারা যদি সহযোগিতা করে, আমাদের পক্ষে নির্বাচন করা সহজ হবে। আমাদের সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে।’
আদমজীতে র্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা বাংলাদেশি নাগরিক ওখানে (ভারতে) আছেন, তাঁদের হয়তো আমাদের নিতে হবে। তাঁরা ১০ বছর হোক বা ২০ বছর হোক, তাঁরা বাংলাদেশি হলে আমাদের নিতে হবে। কিন্তু যারা রোহিঙ্গা, তাদের আমরা গ্রহণ করছি না, রোহিঙ্গাদের আমরা ফেরত পাঠাচ্ছি। যদি কোনো বাংলাদেশি নাগরিক গিয়ে থাকেন, তাঁদের প্রপার চ্যানেলে পাঠানোর নিয়ম আছে। আমরা পাঠালেও প্রপার চ্যানেলে পাঠাই। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, তারা প্রপার চ্যানেলে না পাঠিয়ে জঙ্গলে, নদীর পাড়ে ফেলে দিচ্ছে। এটা কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন। আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি, প্রতিবাদে কিছু কাজ হচ্ছে, এখন তা কিছুটা কমে আসছে।’
এ সময় র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) তাসমিন আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহয গ ত আপন দ র আম দ র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনে যারা আছেন, তারা নিজেদের কাজে ফিরে যান: খসরু
ঐকমত্য কমিশনে যারা আছেন, তারা আগে যে কাজ করতেন, তাদেরকে সে কাজে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিভাগের ব্যবসায়ীদের এক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ জানান।
ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলে আমীর খসরু বলেন, “জোর করে আরেকটি দলের অথবা দুটি দলের বা তিনটি দলের মতামত বাকি দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা একটা রাজনৈতিক দল, তারাও একটি রাজনৈতিক দল। এখানে ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে তাদের দাবি আমাদের ওপর চাপাতে চাচ্ছে, জনগণের ওপর চাপাতে চাচ্ছে। অথচ, ঐকমত্য কমিশন করার উদ্দেশ্য ছিল, ঐকমত্য যতটুকু হবে, সেটা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “ঐকমত্য হয়েছে, সই হয়েছে, তার বাইরে গিয়ে এখন নতুন নতুন দাবি নিয়ে আসছে। তাদের দাবি মানতে হবে, না মানলে এটা হবে, সেটা হবে...। আবার তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে ঐকমত্যের কিছু লোকজন। তাদেরও আবার মতামত আছে। রাজনীতিবিদদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে তারা তাদেরটা চাপাতে চাচ্ছে। আবার ঐকমত্য কমিশনেরও একটা নিজস্ব মতামত আছে। ঐকমত্য কমিশনের মতামতের জন্য তো তাদেরকে সেখানে রাখা হয়নি। এখন তাদেরও মতামত আছে এবং ওটা আমাদেরকে মানতে হবে।”
দেশের মানুষকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “ঐকমত্য কমিশনে যারা আছেন, যাদের দাবি রাজনীতিবিদদের ওপর চাপাতে চান, জনগণের ওপর চাপাতে চান; তাদের প্রতি আমার অনুরোধ- আপনারা যে যেই কাজ করতেন আগে, ওই জায়গায় ফিরে যান। বাংলাদেশের মানুষকে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেন। আমি অনুরোধ করছি, আপনারা স্ব স্ব কাজে ফিরে যান। বাংলাদেশের মানুষকে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দয়া করে তাদের ওপরেই ছেড়ে দেন। আপনাদেরকে এই দায়িত্ব কেউ দেয় নাই।”
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আগামী নির্বাচনে তাদের সিদ্ধান্ত দেবে। যেসব দল তাদের দাবি-দাওয়া চায়, তাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে তো। জনগণের মতামত নিতে হবে তো। জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে তো। মতামত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।”
নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে, অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, “ব্যবসায়ীরা আমাকে প্রতিনিয়ত বলছেন, ফেব্রুয়ারি নয়; পারলে এখনই নির্বাচন করে আমাদেরকে একটু মুক্ত করেন। আমাদের ব্যবসা ধ্বংস হওয়ার উপক্রম। আমরা কোনো বিনিয়োগ করতে পারছি না। বিদেশিরা কোনো বিনিয়োগ করছে না। সুতরাং, এই নির্বাচনকে যারা বিলম্বিত করতে চায় তাদের স্বার্থের জন্য, এখানে ব্যবসায়ীদেরকে সোচ্চার হতে হবে। দ্রুতই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।”
রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই বিভাগীয় ব্যবসায়ী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরাম এর আয়োজন করে। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনুসহ রাজশাহী বিভাগের আট জেলার ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি লুৎফর রহমান।
ঢাকা/কেয়া/রফিক