শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
Published: 27th, July 2025 GMT
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদনের দাবিতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহজাদপুরের বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে রাস্তায় বসে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ‘ভাড়া না ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস চাই’, ‘সবার আছে নিজস্ব ক্যাম্পাস, আমরা কেন বঞ্চিত’—এমন নানা স্লোগানে তারা মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এর আগে সকাল ১০টায় একই দাবিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম হাসান তালুকদার, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন, যা চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ডিপিপির অনুমোদন ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা হতাশাজনক। বারবার সংশোধনের পরও প্রকল্পটি একনেক সভায় উত্থাপিত হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হোসেন বলেন, ‘নয় বছর ধরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া ভবনে চলছে—এটা শুধু আমাদের নয়, পুরো দেশের জন্যই লজ্জার। এর আগেও আমরা আন্দোলন করেছি। এবার স্থায়ী সমাধান ছাড়া রাজপথ ছাড়ব না।’ বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন বলেন, ‘পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করেছেন, প্রতিবেদনও দিয়েছেন। কিন্তু একনেক সভায় আমাদের ডিপিপি এজেন্ডাভুক্ত হচ্ছে না। কেন? এটা আমাদের বোধগম্য নয়।’
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুর আজিজ বলেন, ‘আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরতে চাই, তবে তা স্থায়ী ক্যাম্পাসের আশ্বাস ছাড়া নয়। সরকার যেন আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা না নেয়।’
এর আগে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচিও শিক্ষার্থীরা বয়কট করে কালো ব্যাজ ধারণ ও মানববন্ধন করেন। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চলমান নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রকল্পটি প্রস্তাবিত হয় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। এরপর সাতবার সংশোধনের পর সর্বশেষ ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকায় নেমে আসে। প্রকল্প মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে ২০২৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ প রকল প আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ভুক্তভোগী নারী, হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিবেশী কয়েকজনের মারধর ও জখমের শিকার হন নীলা রানী (৪৪)। এতে তাঁর চোখের ভ্রুর ওপর পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে, ভেঙে গেছে একটি দাঁত। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের ব্যথায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন ওই নারী।
গত বুধবার মারধরের ঘটনার পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন সন্ধ্যায় নীলা রানীর ছেলে বাদী হয়ে বোচাগঞ্জ থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। পুলিশ একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় লোকজন। ভুক্তভোগী নীলা রানী বোচাগঞ্জ উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের প্রয়াত অনিত্র চন্দ্র রায়ের স্ত্রী।
মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল ইসলাম (৫৫), শরিফুল ইসলাম (৪০), তরিকুল ইসলাম (৪২) ও মুন্না ইসলাম। ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ আসামি বাবুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। পরদিন শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নীলা রানী ও আসামিরা পরস্পরের প্রতিবেশী। পূর্বশত্রুতার জেরে ঝগড়া লেগেই থাকে। বুধবার সন্ধ্যায় আসামিরা বাড়ির পাশে মনিপুর মসজিদের সামনে নীলার পথ রোধ করে তাঁকে মারধর করেন। পরে নীলাকে সঙ্গে নিয়ে ছেলে এনাফ চন্দ্র থানায় অভিযোগ করার উদ্দেশে রওনা করেন। এ সময় দ্বিতীয় দফায় আসামিরা তাঁদের ওপরে লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। আসামিদের আঘাতে নীলা রানীর বাঁ চোখের ভ্রুর ওপরে গুরুতর জখম হয়। পরে তাঁকে প্রথমে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের পাশে বসে বড় ছেলে হৃদয় চন্দ্র বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী শেফালী রানীর সঙ্গে পাওনা টাকা নিয়ে তাঁর মায়ের ঝগড়া চলছিল। পরে সামান্য বিষয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে শেফালীর কথা–কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এ নিয়ে শেফালী রানী বিচার দেন সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল ইসলামের কাছে। পরে সালিস ডাকেন বাবুল ইসলাম। কিন্তু সেখানে কোনো ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য উপস্থিত না থাকায় তাঁরা উপস্থিত হননি। তখন বাবুল তাঁদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এর জেরে সন্ধ্যায় তাঁর মায়ের পথ রোধ করেন তাঁরা। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে হামলা করে গুরুতর জখম করেন। তিনি বলেন, পুলিশ আসামি ধরার পর ছাড়া পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত।
বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান জাহিদ সরকার বলেন, ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩০৭ ধারাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়। আসামির জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ হাসান বলেন, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছেন। দ্রুত থানা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন। আসামি গ্রেপ্তারও হন। শুনেছেন তিনি পরে জামিন পেয়েছেন। ঘটনা যেহেতু জমিসংক্রান্ত, তাই সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধননীলা রানীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ দুপুরে বোচাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধনে বিধান দত্ত, বিপ্লব কুমার সিংহ, উত্তম কুমার, শ্রীকান্ত রায়সহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নীলা রানীর ওপর দেশি অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করা হয়। বর্তমান তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলেও তিনি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। বর্তমানে নীলার পরিবারকে এলাকা ছাড়ার কথাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা তদন্তসাপেক্ষে আসামিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।