বিতর্কমুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা না হলে গণতন্ত্র আবার হুমকিতে পড়বে: এবি পার্টি
Published: 29th, July 2025 GMT
বিতর্কমুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন ও এর চর্চা করতে না পারলে গণতন্ত্র আবার হুমকিতে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের এই বৈঠক হয়। আলোচনায় এবি পার্টির পক্ষ থেকে আরও অংশ নেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক।
মজিবুর রহমান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে কমিশনের প্রস্তাবে বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর প্রত্যাবর্তনের প্রাথমিক ধাপ আকারে রূপ নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতির প্রবর্তন হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
সানী আবদুল হক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে একটি সুস্পষ্ট ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। এটিকে যদি সংসদে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পাঠানো হয় তাহলে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে ঐকান্তিক প্রয়াস চলছে, তা অর্থহীন হয়ে পড়বে, যা কাম্য নয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছে: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘সে খসড়ায় জাতীয় সনদের পটভূমি, গঠনপ্রক্রিয়া, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং জাতীয় সনদ তৈরি প্রক্রিয়ার বিষয়ে যে বর্ণনা আমরা সেটা রেখেছি।’
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২০তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ। সনদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো আমরা অন্তর্ভুক্ত করিনি। কারণ হচ্ছে এগুলো এখন পর্যন্ত আলোচনা হচ্ছে। যদিও প্রথম পর্যায়ে অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, কিন্তু সে বিষয়গুলোর সঙ্গে এখন যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, সেগুলো জড়িত থাকার ফলে এই মুহূর্তে আমরা একমত হওয়া বিষয়গুলোকেও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাচ্ছি না। আমরা মনে করছি, সমন্বিতভাবে দিলে কাজের জন্য সুবিধাজনক হবে।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি ৩০ জুলাই বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের যদি কোনো সুপারিশ থাকে, পরামর্শ থাকে, পরিবর্তনের কথা তারা বলতে চায় সেগুলো আমাদেরকে জানানোর জন্য। আমরা আশা করছি, পরামর্শগুলোকে সমন্বিত করে সনদের টেক্সটা ওই দিনই তৈরি করতে পারব। ইতিমধ্যে আলোচনায় যেহেতু অগ্রগতি হচ্ছে, যেসব বিষয়ে মতৈক্য হবে, সেগুলো তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এই সনদের ব্যাপারে অঙ্গীকারের বিষয়গুলোকে উল্লেখ করেছি। যদি রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকারের সঙ্গে আর কিছু যোগ করতে চায়, পরামর্শ দেয়, সেটি নিয়ে কাজ করা হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সংলাপে সোমবারের বৈঠকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রক্রিয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
আজকের আলোচনা দুটি নির্ধারিত বিষয়ের ওপর ছিল বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, একটি হলো সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ন্যায়পাল নিয়োগ; অন্যটি সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব—যদিও দ্বিতীয় বিষয়ে আলোচনা শুরু করা সম্ভব হয়নি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সরকারি কর্ম কমিশনের নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সংবিধানের ১৩৭ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে বিএনপি ও কয়েকটি দল নিয়োগবিধান আইনের মাধ্যমে নির্ধারণের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিয়োগপ্রক্রিয়া কীভাবে নির্ধারিত হবে, সে বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও পিএসসিকে স্বাধীন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার ব্যাপারে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে।’
দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রস্তাবকে বেশির ভাগ দল সমর্থন করলেও বিএনপি ও কয়েকটি দল ভিন্নমত দেয়। তবে সংশোধনীসহ আলোচনা এগোচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী বলেন, ‘সেখানে কেবল ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ে একমত হওয়া গেছে, সেগুলো রাখা হয়েছে। এখনো আলোচনাধীন বিষয়গুলো পরবর্তী সময়ে সমন্বিতভাবে সংযোজন করা হবে।’
বৈঠকের একপর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে হঠাৎ ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে, ফলে কিছু সময়ের জন্য আলোচনা স্থগিত রাখতে হয়। এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একাডেমির দায়িত্ব ছিল। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টরের সঙ্গে বৈঠক করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। রেক্টর ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং প্রতিবেদন শিগগিরই দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
সন্ধ্যার দিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগসংক্রান্ত একটি নতুন প্রস্তাব মৌখিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। তারা ‘র্যাংক চয়েস’ (বাছাই কমিটির সুপারিশকৃতদের ক্রম অনুসারে) পদ্ধতি মেনে নিতে আগ্রহ দেখালেও সেটি গোপন ব্যালটের পরিবর্তে ওপেন ব্যালটে করার প্রস্তাব দেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত। তবে নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে।’ তিনি আরও জানান, বিএনপি এখনো এই প্রস্তাব পুরোপুরি মেনে নেয়নি। তবে কমিশন আশাবাদী যে আগামীকাল সকালের মধ্যেই এ বিষয়ে একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
আজকের বৈঠকে সময়স্বল্পতার কারণে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা করা যায়নি। তবে আগামী দুই দিনের মধ্যে এ বিষয়েও আলোচনা হবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আজকের আলোচনা শেষে প্রতিদিনকার মতো সাংবাদিকদের ব্রিফ না করে বেরিয়ে যায় বিএনপি। এর আগে সকালে আলোচনা শুরুর কিছুক্ষণ পর বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করে দলটি। অবশ্য কিছুক্ষণ পর আবার সংলাপে অংশ নেয় তারা।