সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
Published: 31st, July 2025 GMT
বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি বাতিলের অভিযোগ তুলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা বর্জন করেছে বাম দলগুলো। দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাসদ, বাংলাদেশ বাসদ, বাসদ মার্ক্সবাদী।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের ২৩তম দিন তথা শেষ দিনের আলোচনার শেষ সময়ে এসে সভা বর্জন করে বাম দলগুলো।
আলোচনায় সংবিধানের মূলনীতি প্রসঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হচ্ছে, সংবিধানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতির কথা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির অংশ হিসেবে উল্লেখ থাকবে।’
এ সময় বাম রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার অভিযোগ করে সভা বর্জন করে। পরে নেতারা গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের চারটি মূলনীতি হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে এমন একটি প্রস্তাব পাস করানোর চেষ্টা থেকেই কমিশনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে যায়। আগে অনেকে বলেছিলেন, সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুন করে লিখতে হবে, আজ তারই প্রতিচ্ছবি আমরা দেখলাম।’
রুহিন হোসেন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ আমরা যাঁরা আছি, বৈঠক বর্জন করে বেরিয়ে এসেছি। এখন পুরো ঐকমত্য সনদে স্বাক্ষর করব কি না, তা নিজ নিজ দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের সমর্থক ও দেশবাসীর মতামত নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব, থাকব নাকি সরে যাব।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলছি, এই বর্জনের পরও যদি তারা উপলব্ধি না করে এবং জোর করে আগায়, তাহলে ঐকমত্য সনদের সঙ্গে থাকা আর সম্ভব হবে না।’
বাসদ মার্ক্সবাদীর নেতা মাসুদ রানা বলেন, ‘সংবিধানে বিদ্যমান মূলনীতি বহাল রেখে কমিশনের প্রস্তাবিত বিষয়গুলো যুক্ত করার কথা বলেছি। এগুলোর সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধ যুক্ত। এগুলোকে বাদ দেওয়া মানে আমাদের ইতিহাসকে অস্বীকার করা।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘১৯৭১ সালে যারা পরাজিত হয়েছিল, এরা সে গ্লানি এখনো ভুলতে পারিনি। তারাই মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাচ্ছে।’
বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশতাক হোসেন বলেন, ‘আমরা আলোচনায় শুরু থেকে বলে আসছি, কমিশন যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেটিকে যদি “নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি)” দিয়ে মেনে নিই, তাহলে শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নয়, বর্তমান প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। আমরা সেটার অংশীদার হতে প্রস্তুত নই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ঐকমত য দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নিম্নকক্ষে পিআর দাবি ইসলামী আন্দোলনের
ঐকমত্য কমিশনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বলেছে, দেশ থেকে স্বৈরতন্ত্রকে চিরস্থায়ী উৎখাত করার নিমিত্তে জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা তা নিশ্চিত করতে উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন-ই একমাত্র সমাধান। উচ্চকক্ষের মত নিম্নকক্ষেও পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ শুক্রবার (১ আগস্ট) দলের এক বৈঠকে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “পিআর নিয়ে গণমানুষের মধ্যে সাধারণ ঐক্য তৈরি হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২০০৮ সাল থেকে পিআর নিয়ে কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিক পিআর নিয়ে জনমত গড়ে তুলেছে, রাজনৈতিক যুথবদ্ধতা গড়ে তুলেছে।ঐকমত্য কমিশনের সাথে একক আলোচনায় পিআরের পক্ষে জোরাল অবস্থান জানিয়েছে।লিখিতভাবে পিআর নিয়ে আলোচনার দাবি জানানো হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিরা ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বারংবার এটাকে এনেছেন।কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনার এজেন্ডাতে নিম্নকক্ষে নির্বাচন পদ্ধতি বিষয়টিই অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই। গতকাল আমাদের প্রেসিডিয়াম সদস্য বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত করার দাবি জানালেও রুঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নিম্নকক্ষে পিআরের আলোচনাকে এজেন্ডাভুক্ত না করে বরং আলোচনা তুলতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আচরণের নিন্দা জানাচ্ছি।”
বাদ জুমআ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পল্টনে জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে পর্যালেচনা বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন দলের মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের সব মানুষের ভোটের মূল্যায়ন করতে, দেশকে ভোট নিয়ে অরাজকতা, হানাহানি, সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করতে পিআর পদ্ধতির কোনো বিকল্প নাই। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে পিআরই সর্বোত্তম পন্থা। আমরা উভয়কক্ষেই পিআর চেয়েছি এবং সংসদের নিম্নকক্ষই যেহেতু জনপ্রতিনিধিত্ব, আইন প্রণয়ন ও জবাবদিহিতার প্রধান কেন্দ্র সেহেতু নিম্নকক্ষে পিআর বেশি জরুরি।”
“নিম্নকক্ষে পিআর না হলে দেশে স্বৈরতন্ত্রের প্রলম্বিত অপচ্ছায়া থেকেই যাবে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার কারণে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবীদের মতামতকে এত নগ্ন ও বেপরোয়াভাবে উপেক্ষা করা প্রকারান্তরে জুলাইয়ের রক্তকে উপেক্ষা করা। আমরা এটা প্রত্যাশা করি নাই।”
আতাউর রহমান বলেন, “আমরা ইতিবাচক রাজনীতি করি। সর্বদা সম্ভাবনাকে স্বাগত জানাই, আলীঙ্গন করি। সেই কারণেই উচ্চকক্ষে পিআরের সিদ্ধান্তকে আমাদের আমিরের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে।ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনকে বলব, নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতির আলোচনা এজেন্ডায় আনুন। আলোচনা হোক। যদি আলোচনায় এই ব্যাপারে ঐকমত্যে না পৌঁছানোও যায় তাহলেও এর রেকর্ড থাকুক। ইতিহাস জানবে, কে বা কারা দেশের কল্যাণের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে।কাদের কারণে স্বৈরতন্ত্রকে চিরস্থায়ী উৎখাত করা যায় নাই। আর ঐকমত্য কমিশন যদি এটাকে এজেন্ডাতেই না আনেন তাহলে এর দায়ভার আপনাদেরকেই বহন করতে হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ