নাটোরের সিংড়ায় ভ্যানচালক মো. জিহাদ (২০) নামে এক তরুণকে হত্যার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এর রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাব। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তারও করেছে তারা। গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত এবং ছিনতাই হওয়া ভ্যান।

শনিবার (২ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহীতে র‌্যাব-৫ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামের মো.

সাগর প্রামাণিক (১৮) এবং মো. সুলতান প্রামাণিক (১৯)। তারা বন্ধু। নিহত জিহাদও তাদের বন্ধু ছিলেন।

আরো পড়ুন:

স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মসমর্পণ

রাজধানীতে বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, আটক ৫

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ জানান, গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় সিংড়ার ইটালি ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার চলনবিল থেকে এক তরুণের মুখ বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও র‌্যাব। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

পরিচয় শনাক্তের পর জানা যায়, নিহত তরুণের নাম জিহাদ, তিনি ভ্যানচালক। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে র‌্যাব-৫-এর গোয়েন্দা দল তদন্তে নামে। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জড়িতদের শনাক্ত করে তারা। শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় চৌগ্রাম ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাগর ও সুলতানকে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তারা জানান, চার মাস আগে জিহাদের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এরপর থেকে তারা প্রায়ই একসঙ্গে ঘোরাঘুরি ও মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়েন।

সাগর জানান, তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে তিনি চরম আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন। সুলতানও দীর্ঘদিন ধরে বেকার ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এই পরিস্থিতিতে তারা জিহাদের ব্যাটারিচালিত ভ্যান ছিনিয়ে নিতে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় চৌগ্রাম বাজারে দেখা করেন তারা। আড্ডার ছলে সিংড়া বাজার থেকে কিছু ঘুমের ওষুধ সংগ্রহ করে তা একটি কোমল পানীয়র বোতলে মিশিয়ে রাখেন। পরে ঘোরাঘুরির কথা বলে জিহাদকে তার ভ্যানে উঠিয়ে চলনবিলের দিকে নিয়ে যান। পথে কোমল পানীয় পান করান জিহাদকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জিহাদ অচেতন হয়ে পড়েন।

রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে ইটালি ইউনিয়নের সাতপুকুরিয়া বাজারসংলগ্ন একটি নির্জন জায়গায় তারা ভ্যান থামান। সেখানে অচেতন জিহাদকে গলা টিউব পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে গামছা দিয়ে মুখ শক্ত করে বেঁধে তাকে বন্যার পানিতে ফেলে দেন।

হত্যাকাণ্ডের পর সুলতান নিহতের মোবাইল ফোন নিজের কাছে রেখে দেন। সাগর ভ্যানটি বিক্রির জন্য ইটালি গ্রামের এক মেকারের বাসায় রেখে আসেন।

র‌্যাব-৫ গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভ্যান, মোবাইল ফোন এবং হত্যায় ব্যবহৃত টিউব উদ্ধার করে।

র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ জানান, গ্রেপ্তার দুইজনকে সিংড়া থানায় হস্তান্তর করা হবে। পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাবে।

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য হত য ক ণ ড হত য র

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় বিবাদমান দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এক যুবদল নেতাসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা জানায়, জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের চেরাগ আলী বেপারিকান্দি এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নাসির বেপারী এবং তাজুল ছৈয়ালের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষের লোকজন হাতবোমা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে বেশ কয়েকটি বসতবাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। হাতবোমার আঘাতে যুবদল নেতা সালাউদ্দিন বেপারী, কামাল বেপারীসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। আহত দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে। 

আরো পড়ুন:

ড্যাফোডিল-সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘর্ষ: শিক্ষার্থীদের আসামি করে পাল্টাপাল্টি মামলা

শিশুদের ঝগড়া থেকে বড়দের সংঘর্ষ, আহত ৫০

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। দুইজনকে আটক করা হয়েছে।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘যারা এই নাশকতা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ 

ইউপি সদস্য নাসির বেপারীর স্ত্রী সাবিনা আক্তার বলেন, ‘‘আমরা বাড়িতে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। বোমার শব্দে ঘুমে ভেঙে যায়। উঠে দেখি আমাদের বাড়িতে বোমা হামলা হচ্ছে। জানালার গ্লাস ভেঙে ধোঁয়ার রুম ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের প্রতিপক্ষের লোকজন তাজুল ছৈয়াল, মমতাজ বেপারী, মন্নাপ বেপারী, সুজন, রনি ভূঁইয়া, টিপু মাদবর হামলা চালিয়েছে।’’ তিনি দোষীদের বিচারের দাবি জানান। 

আহত সালাউদ্দিনের স্ত্রী সুমি বলেন, ‘‘আমার স্বামী ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। বোমার শব্দে জানালার কাছে গেলে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। পরিকল্পিতভাবে এই হামলা হয়েছে।’’ তিনি জীবনের নিরাপত্তার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি চান। 

উল্টো অভিযোগ করেছেন চম্পা আক্তার নামের এক নারী। তিনি বলেন, ‘‘সালাউদ্দিন বেপারী, নাসির বেপারী, ইব্রাহিম বেপারীরা আমাদের বাড়িঘরে বোমা হামলা করেছে। তারা আমাদের হুমকি দিয়েছে, বাড়িঘরে থাকতে দেবে না। আমরা এলাকায় শান্তি চাই।’’ যারা হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। 

তাজুল ছৈয়ালের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরটি তালাবদ্ধ ছিল। 

ঢাকা/আকাশ/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শরীয়তপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ