নিরস্ত্রীকরণে সম্মতির খবর নাকচ: হামাস বলল, দখলদারির মোকাবিলা জাতীয় ও আইনি অধিকার
Published: 3rd, August 2025 GMT
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা চলাকালে অস্ত্রত্যাগের বিষয়ে সম্মতি জানানোর খবরের বিরোধিতা করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারি মোকাবিলার জাতীয় ও আইনি অধিকার তাদের রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের স্বজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে উইটকফ তাঁদের বলেন, হামাস জানিয়েছে, তারা ‘নিরস্ত্রীকরণে প্রস্তুত’। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এটা ফলাও করে প্রচার করেছে।
মার্কিন দূতের এমন মন্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পর গতকাল শনিবার এর তীব্র বিরোধিতা করে হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, যতক্ষণ (ইসরায়েলি) দখলদারি বহাল থাকবে, ততক্ষণ তা প্রতিরোধ করা এবং সেটার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা তাদের জাতীয় ও আইনি অধিকার।
‘(ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড) পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত (দখলদারির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা) আমাদের পূর্ণ জাতীয় অধিকার। এর মধ্যে প্রধান হলো, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি সম্পূর্ণ সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এ অধিকার ত্যাগ করা যাবে না’, বলেছে হামাস।
স্টিভ উইটকফ গতকাল ইসরায়েলের তেল আবিবে জিম্মিদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন। এর এক দিন আগে তিনি গাজায় গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত ‘বিতর্কিত’ সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ সরবরাহ কেন্দ্র ঘুরে দেখেন।
আরও পড়ুনস্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস০১ আগস্ট ২০২৫গাজার এখনকার অপুষ্টিজনিত সংকটময় পরিস্থিতিতে স্টিভ উইটকফের এ সফরকে ‘সাজানো অনুষ্ঠান’ বলে সমালোচনা করেছে হামাস।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত মে মাসে জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্র পরিচালনা শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০–এর বেশি ফিলিস্তিনি ত্রাণ নিতে গিয়ে হামলায় নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনভাইরাল হওয়া ছবিটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ-বিতর্ক, পেছনের সত্যটা কী১৮ ঘণ্টা আগেগাজায় হত্যাকাণ্ড আর জিএইচএফের কার্যক্রমের ক্রমবর্ধমান সমালোচনা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন দৃঢ়ভাবে এ সংস্থার পাশে দাঁড়িয়েছে। গত জুনে ওয়াশিংটন জিএইচএফের জন্য ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) ডলার তহবিল অনুমোদনের কথা জানিয়েছে।
একদিকে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি, অন্যদিকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে ওই মন্তব্য করেছেন স্টিভ উইটকফ।
আরও পড়ুনগাজার নাসের হাসপাতালে পাঁচ দিনে কী কী দেখলেন রয়টার্সের সাংবাদিকেরা৩১ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনগাজায় নৃশংসতা চালিয়ে ইসরায়েল কি পশ্চিমা বিশ্বেও একঘরে হয়ে যাচ্ছে০১ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ট ভ উইটকফ জ এইচএফ ইসর য় ল দখলদ র
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা খুবই অমানবিক। যে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের ঘরবাড়ি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই উচ্ছেদ কার্যক্রমে আইনি আদেশ পালন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানবিকতার প্রতিটি শর্তকে এক্সকাভেটরের আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের জন্য তাদের জমি বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগ ওঠে, সেই প্রক্রিয়া এড়াতে দখলদার চক্র জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। উচ্ছেদের শিকার কোল পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই জমির আসল মালিক ছিলেন তাঁদেরই ‘জাত-ভাই’। অথচ তাঁদের হিন্দু সাজিয়ে জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে এই জমির মালিকানা হাতিয়ে নিয়েছে ভূমি দখলদার চক্র। এরপর গরিব কোল পরিবারগুলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারায় আদালতের একতরফা রায় যায় দখলদার চক্রের পক্ষে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারগুলোকে গত সোমবার উচ্ছেদ করা হয়।
কয়েক দশক ধরে বসবাস করে আসা পরিবারগুলো ভিটা ছাড়তে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় চেয়েও পায়নি। কিন্তু উচ্ছেদকারী দল, আদালতের প্রতিনিধি ও পুলিশের উপস্থিতিতে সেই মানবিক আবেদন উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে গরু বিক্রির অর্থ, আসবাব, এমনকি রান্না করা খাবারও চাপা পড়েছে মাটির নিচে। পরবর্তী সময়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে পরিবারগুলো বাঁশঝাড়ের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
আদালত প্রতিনিধির বক্তব্য অনুযায়ী, বাদীপক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়নি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে উচ্ছেদকারী দলের নৈতিক দায়িত্ব ছিল কেবল দখল বুঝিয়ে দেওয়া নয়, বরং মানবিক বিপর্যয় এড়ানো। একটি গরিব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারকে অভুক্ত অবস্থায় মশার কামড় খেতে বাঁশঝাড়ের নিচে ফেলে আসা কোনোভাবেই সভ্য সমাজের আইন প্রয়োগ হতে পারে না।
উচ্ছেদের দুই দিন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এই উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে তাঁকে জানানোই হয়নি। ফলে এখানে আইনি আদেশের স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কেন স্থানীয় প্রশাসনকে এ উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে অন্ধকারে রাখা হলো? উপজেলা প্রশাসন ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে চাল ও অল্প অর্থসহায়তা দিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু সেটি তো সময়সাপেক্ষ। পরিবারগুলো নারী ও শিশুদের নিয়ে এখন কোথায় যাবে?
সমতলের ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আইনকে অপব্যবহার করে যে চক্র পরিবারগুলোকে উদ্বাস্তু করে দিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে গোটা বিষয়টি তদন্ত করা হোক। আমরা আশা করব, কোল পরিবারগুলোকে তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।