ইতিহাসে কি এই প্রথম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা–কাটাকাটি পারমাণবিক যুদ্ধ উত্তেজনার কারণ হতে চলেছে?

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভের এক পোস্টে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন রাশিয়ার জলসীমার কাছাকাছি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের এ পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর বিরুদ্ধে কী প্রতিক্রিয়া দেখাতে চলেছে মস্কো? যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া কি একটি পারমাণবিক সংঘাতের পথে এগোচ্ছে, নাকি ইন্টারনেট যুগে এসে নতুন রূপে ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকট ফিরতে চলেছে?

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোতে ট্রাম্পের পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর ঘোষণাকে বেশ অবজ্ঞার সুরে উপস্থাপন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে কিউবায় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল মস্কো ও ওয়াশিংটন। যদিও শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নেয়নি। তবে সে সময়ে বহু মানুষ আতঙ্কে দিন পার করেছেন।

বিবিসির রাশিয়া প্রতিনিধি স্টিভ রোজেনবার্গ তেমনটা মনে করেছেন না। তিনি বলেন, রাশিয়া প্রাথমিক যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে এ ধরনের সংকট তৈরি হওয়া নিয়ে তাঁর সন্দেহ রয়েছে।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোতে ট্রাম্পের পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর ঘোষণাকে বেশ অবজ্ঞার সুরে উপস্থাপন করা হয়েছে।

মাস্কোভস্কি কোমসমোলিয়েতস পত্রিকাকে একজন সামরিক বিশ্লেষক বলেন, ট্রাম্প শুধু রাগের মাথায় শিশুসুলভ মেজাজ দেখাচ্ছেন।

আবার কমেরসান্ত পত্রিকাকে একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল বলেন, সাবমেরিন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথাবার্তা নিরর্থক প্রলাপ। তিনি এসব বলে মজা পান।

অন্তত এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাশিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া (আনুষ্ঠানিক) দেখায়নি। দেশটি তার পারমাণবিক সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মোতায়েন করেছে, এমন কোনো ঘোষণাও নেই।স্টিভ রোজেনবার্গ, বিবিসির রাশিয়া প্রতিনিধি

একই পত্রিকাকে রাশিয়ার একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, ট্রাম্প (সাবমেরিন পাঠানো বিষয়ে) প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্দেশই দেননি।’

কমেরসান্ত পত্রিকায় ২০১৭ সালের কথা উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ট্রাম্প সেবার উত্তর কোরিয়াকে সতর্ক করার জন্য কোরীয় উপদ্বীপে দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠানোর কথা বলেছিলেন। এর কয় দিন পরই উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

খানিকটা অদ্ভুত শোনালেও ট্রাম্পের পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন তবে কি যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের পূর্বাভাস হতে পারে?

রোজেনবার্গ বলেন, তিনি অত দূর ভাবতে চাইছেন না। তবে রুশ কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিষয়টি তাঁর কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।

রোজেনবার্গ বলেন, অন্তত এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাশিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া (আনুষ্ঠানিক) দেখায়নি। রাশিয়া তাদের পারমাণবিক সাবমেরিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মোতায়েন করেছে, এমন কোনো ঘোষণাও আসেনি। এর অর্থ হচ্ছে হয় মস্কো এখনো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছে এবং কী করা উচিত ভাবছে অথবা মস্কো মনে করছে, প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো প্রয়োজনই নেই।

রোজেনবার্গ আরও বলেন, রুশ সংবাদমাধ্যম যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে সম্ভবত দ্বিতীয়টাই ঠিক, অর্থাৎ মস্কো প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায় না।

তবে কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প-মেদভেদেভ কথার লড়াই চলছে।

কিন্তু হঠাৎই তিনি ট্রাম্পের নজর কাড়েন এবং শুধু নজর কাড়াই নয়; বরং সরাসরি ট্রাম্পের রোষের মুখে পড়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ করতে বেঁধে দেওয়া ৫০ দিনের সময়সীমা কমিয়ে দুই সপ্তাহের কম করেছিলেন, তখন মেদভেদেভ এক পোস্টে লেখেন, ‘ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে আলটিমেটাম দেওয়ার খেলা খেলছেন… প্রতিটি নতুন আলটিমেটাম এক একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে এক একটি পদক্ষেপ।’

জবাবে ট্রাম্প লেখেন, ‘মেদভেদেভকে বলে দিন, তিনি একজন ব্যর্থ সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট, যিনি মনে করেন তিনি এখনো ক্ষমতায় আছেন। তিনি যা বলছেন তাঁকে সে বিষয়ে সতর্ক হতে বলুন। তিনি খুবই বিপজ্জনক এলাকায় প্রবেশ করছেন।’

মেদভেদেভ তাঁর পরের পোস্টে ‘ডেড হ্যান্ড’–এর কথা উল্লেখ করেন। এটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের একটি স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক প্রতিশোধব্যবস্থা। স্পষ্টতই, মেদভেদেভের ওই বক্তব্য হোয়াইট হাউস প্রধানের কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হয়নি।

২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন মেদভেদেভ। তুলনামূলকভাবে তাঁকে একজন উদার ব্যক্তি হিসেবেই দেখা হতো তাঁকে। তাঁর বিখ্যাত উক্তি, ‘স্বাধীনতা না থাকার চেয়ে স্বাধীনতা থাকা ভালো।’

কিন্তু মেদভেদেভ ক্রমে কট্টর রাজনৈতিক মনোভাবের দিকে চলে গেছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্র ও পশ্চিমাবিরোধী পোস্ট দেওয়ার জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছেন। যদিও তাঁর অধিকাংশ পোস্ট গুরুত্ব পায় না। কারণ, তাঁকে ক্রেমলিনের মুখ হিসেবে দেখা হয় না।

কিন্তু হঠাৎই মেদভেদেভ ট্রাম্পের নজর কাড়েন এবং শুধু নজর কাড়াই নয়; বরং সরাসরি ট্রাম্পের রোষের মুখেও পড়েন।

ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে আলটিমেটাম দেওয়ার খেলা খেলছেন…প্রতিটি নতুন আলটিমেটাম এক একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে এক একটি পদক্ষেপ।দিমিত্রি মেদভেদেভ, রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো পোস্ট আমাদের পছন্দ না হতেই পারে। সবাইকেই এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু তা এতটাই অপছন্দ হওয়া যে ক্ষুব্ধ হয়ে পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করাকে অতিরঞ্জন বলে মনে করেন রোজেনবার্গ।

তাহলে ট্রাম্প কেন পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করলেন, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজম্যাক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মেদভেদেভ এমন কিছু কথা বলেছেন, যেগুলো খুবই খারাপ। তিনি পারমাণবিক বিষয়ে (ডেড হ্যান্ড) কথা বলেছেন। যখন আপনি পারমাণবিক শব্দটি বলেন, আমার চোখ ঝলসে ওঠে এবং আমি বলি আমাদের সাবধান হওয়া উচিত। কারণ, এটা চূড়ান্ত হুমকি।’

তাঁর (ট্রাম্পের) মধ্যে এমনভাবে অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধীদের আলোচনার আগে বা আলোচনা চলাকালীন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।

কিন্তু মেদভেদেভের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পারমাণবিক হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগ আছে। এবারের ঘটনা তাই নতুন কিছু নয়।

আরও পড়ুনরাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের ঝুঁকি আসলে কতটা১৯ ঘণ্টা আগে

কিন্তু ট্রাম্প এবার মেদভেদেভের পোস্টগুলো যে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন, এটা স্পষ্ট এবং তিনি সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। হতে পারে এখানে কিছু কৌশলও কাজ করছে। কারণ, ট্রাম্পের কাজের ধরন, ব্যবসা বা রাজনীতিতে অপ্রত্যাশিত শব্দ একটি বড় ভূমিকা রাখে। তাঁর মধ্যে এমনভাবে অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধীদের আলোচনার আগে বা আলোচনা চলাকালীন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।

যেমন এই সাবমেরিন মোতায়েন, হতে পারে এ সবকিছু ইউক্রেনে যুদ্ধে সমাপ্তি টানতেই করছেন তিনি। হঠাৎ রাশিয়ার কাছে সাবমেরিন মোতায়েন করাও তাঁর সেই ধরনের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত হতে পারে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা: বিশ্ব কি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে১৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বম র ন ম ত য় ন য ক তর ষ ট র র র জ নব র গ আলট ম ট ম নজর ক ড় এক একট ক একট

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে