যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু মার্কিন অর্থনীতি যেন ভিন্ন কথা বলছে, এত দিন তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকা মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ার অন্যতম কারণ উচ্চ শুল্ক।

ট্রাম্পের সর্বশেষ উচ্চ হারে আমদানি কর আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। যদিও ব্যবসায়ীরা কিছুটা খরচ নিজেরা বহন করার চেষ্টা করেছেন, তাঁরা এখন হয়তো তার কিছু অংশ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে বাধ্য হবেন। এর অর্থ হচ্ছে, আমেরিকানদের বেশি দাম দিতে হবে।

মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা শীর্ষ পণ্যের মধ্যে কম্পিউটার অন্যতম। চীন, মেক্সিকো, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ ছিল।

চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর এরই মধ্যে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যদিও কিছু ব্যতিক্রম আছে। ১২ আগস্টের মধ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি না হলে এই শুল্ক হার আরও বাড়তে পারে। মেক্সিকো থেকে আসা পণ্যগুলো ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত বাণিজ্যচুক্তির শর্ত পূরণ করলে শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারে।

অন্যদিকে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া থেকে আসা পণ্যের শুল্ক আগামী সপ্তাহে বর্তমান হারের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। যদিও সার্বিকভাবে দাম বাড়ার হার সীমিত, ভোক্তা মূল্য সূচকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসে কম্পিউটারের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি ছিল।

শীর্ষ পাঁচটি বিদেশি কম্পিউটার রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে না থাকলেও ভারত এখনো যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার ও অন্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের বড় সরবরাহকারী। তাদের পণ্যে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

ইয়েল বাজেট ল্যাবের অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যকর থাকে, তাহলে স্বল্প মেয়াদে (২-৩ বছরের মধ্যে) কম্পিউটার ও অন্য ইলেকট্রনিকস পণ্যের দাম ১৮ দশশিক ২ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে (৩-১০ বছরের মধ্যে) ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে।

ইলেকট্রনিকস পণ্যের মতো পোশাকের একটি বড় অংশ বিদেশ থেকে কেনে যুক্তরাষ্ট্র। প্রধান সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া।

এসব দেশের ওপর ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করছেন, তা পোশাকের দামে বড় প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে যেহেতু পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আমদানি পণ্যের একটি। ইয়েল বাজেট ল্যাবের অনুমান অনুযায়ী, পোশাকের দাম স্বল্প মেয়াদে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ঘড়ি

পৃথিবীর সবখানেই সুইজারল্যান্ডের ঘড়ির কদর আছে। এই সুইস ঘড়িও এখন ৩৯ শতাংশ ‘পারস্পরিক’ শুল্কের মুখে পড়েছে। গত বছর দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ঘড়ি পাঠিয়েছে। চামড়াজাত পণ্যের দাম, যার মধ্যে ঘড়িও আছে, স্বল্প মেয়াদে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

জুতা

চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া শীর্ষ জুতা রপ্তানিকারক দেশ। এই তিন দেশের জুতার ওপর আগামী সপ্তাহ থেকে ন্যূনতম ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। ফলে নিশ্চিতভাবে জুতার দাম বাড়বে।

অ্যালকোহল

ওয়াইন অ্যান্ড স্পিরিটস হোলসেলারস অব আমেরিকার তথ্যানুসারে, আমেরিকার অ্যালকোহল বাজারের মোট বিক্রির ৩৫ শতাংশ রাজস্ব আসে আমদানি করা ওয়াইন ও স্পিরিট থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওয়াইন, হুইস্কি ও ভদকার বড় সরবরাহকারী, সেখান থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ছে।

আসবাব

ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের ফার্নিচারের শীর্ষ সরবরাহকারী, এরপরেই রয়েছে চীন।

খেলনা

খেলনার ক্ষেত্রে চীন ও ভিয়েতনাম শীর্ষ দুই রপ্তানিকারক দেশ। চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের কারণে খেলনা ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যেই দাম বাড়ানোর সতর্কতা দিয়েছে। ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা শুল্কের পুরো খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেননি। পাশাপাশি উচ্চ আমদানি করের আশঙ্কায় অনেকেই কয়েক মাস ধরে পণ্য মজুত করে রেখেছেন। সে কারণে গোল্ডম্যান স্যাক্সের অর্থনীতিবিদেরা অনুমান করছেন, আমদানি করা ভোক্তাপণ্যের খরচের প্রভাব ভোক্তাদামে পুরোপুরি প্রতিফলিত হতে প্রায় আট মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ উচ্চ শুল্কের প্রভাব পণ্যের দামে এখনই পড়ছে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র গত বছর অন য য দশম ক আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ত্রাণ সংগ্রহকারী ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েল

ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে সাইলেন্সার যুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েলি সেনারা। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল প্রথমবারের মতো এই অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে আল-জাজিরা অনলাইন।
 
উত্তর গাজায় আল জাজিরার আরবি সংবাদদাতা আনাস আল-শরিফ জানিয়েছেন, তিনি একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলেছেন যারা বেইত লাহিয়ার কাছে সুদানী এলাকায় সাইলেন্সার ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেখানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি সাহায্য কেন্দ্রের আশেপাশের লোকদের লক্ষ্য করে সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করেছিল।

তিনি জানান, এর অর্থ হল ইসরায়েলি সেনারা নিজেদের বেপরোয়াভাবে ত্রাণ সংগ্রহকারীদের হতাহত করার চেষ্টা করছিল। শুক্রবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ এবং ইসরায়েলে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি কয়েক ঘন্টা ধরে গাজা সফর করার সময় এই ঘটনাটি ঘটেছে।

গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ হচ্ছে একটি মার্কিন সমর্থিত একটি ত্রাণকেন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা। একে সমর্থন দিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় সরবরাহ পৌঁছানোর জন্য জিএইচএফ বেসরকারি মার্কিন নিরাপত্তা ও সরবরাহ কোম্পানি ব্যবহার করে। এটি জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন একটি ব্যবস্থাকে এড়িয়ে চলে। গাজায় জিএইচএফ মে মাসের প্রথম দিকে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের প্রায় প্রতিদিন গুলি করার জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফ্লাইট এক্সপার্টের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা, তিন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল আরো ৬৮ ফিলিস্তিনির
  • ফ্লাইট এক্সপার্ট বন্ধ, মালিক ও কর্মকর্তার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
  • পোশাকশিল্পে এখনই রূপান্তরের সময়
  • ত্রাণ সংগ্রহকারী ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েল
  • হ‌বিগ‌ঞ্জের শাহজীবাজার কেন্দ্রে আগুন, ১৫ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ আসবে
  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক