জন্মশতবর্ষে ফ্রানৎস ফানোঁ ও তাঁর বহমান উত্তরাধিকার
Published: 5th, August 2025 GMT
‘একজন ইউরোপীয়কে হত্যা করার মানে হচ্ছে এক ঢিলে দুই পাখি মারা।’ ফ্রান্স যখন সাত বছর ধরে বর্বরোচিতভাবে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে লিপ্ত, সেই সময় জাঁ পল সার্ত্রে এই কথাগুলো লিখেছিলেন। শত হলেও, এ ধরনের হত্যা একই সঙ্গে অত্যাচারী আর অত্যাচারিত, দুই পক্ষকেই নিকেশ করে দেয়: একজন মারা যায়, আর অন্যজন মুক্তি অর্জন করে। আলজেরিয়ার উপনিবেশবিরোধীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্য ফ্রান্সে প্রবলভাবে ঘৃণিত সার্ত্রে মানুষকে ‘আমাদের মানবতাবাদের স্ট্রিপটিজ নাচ’ দেখতে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। লিখেছিলেন, ‘আপনারা যাঁরা এত উদার, এত মানবিক, যাঁরা সংস্কৃতিপ্রেমকে ভড়ংয়ের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পছন্দ করেন, সেই আপনারা এটা ভুলে যাওয়ার ভান করেন যে আপনাদের উপনিবেশগুলোতে আপনাদের নামেই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।’
অগ্নিবর্ষী এই কথাগুলো সার্ত্রে লিখেছিলেন একটি বইয়ের ভূমিকায়। তাঁর নিজের বই নয়। ফ্রানৎস ফানোঁ নামের এক ফরাসি ও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান রাজনৈতিক দার্শনিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের। উপনিবেশবিরোধী ওই বইটির নাম (কন্সটান্স ফারিংটন ও রিচার্ড ফিলকক্সের স্বতন্ত্র ইংরেজি অনুবাদে) ‘দ্য রেচিড অব দ্য আর্থ’। বইটির লেখক বছর কয়েক আলজেরিয়া কাটিয়েছিলেন দেশটার মুক্তি আন্দোলনের পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম করে। আর বইটি যখন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, স্বল্প পরিচিত সেই লেখক তখন লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু। বয়স ছত্রিশ।
সার্ত্রের প্রবাদপ্রমিত খ্যাতি ফানোঁর বইটিকে আলোচনার পাদপ্রদীপে নিয়ে আসে; তবে সেই সঙ্গে, গোড়ার দিকে, পাশ্চাত্যে সেটার গ্রহণযোগ্যতাকেও খানিকটা বিঘ্নসংকুল করে তোলে। বইটি প্রকাশের ষাটতম বার্ষিকী উপলক্ষে গ্রোভ প্রকাশনা সংস্থা সেটার একটি নতুন সংস্করণ প্রকাশ করে। এবার সেটার ভূমিকা রচনা করেন কর্নেল ওয়েস্ট; আগে, অন্য একটি সংস্করণের ভূমিকা লিখেছিলেন বিশিষ্ট তাত্ত্বিক হোমি কে ভাবা। গ্রোভের এই সংস্করণে সেটাও যুক্ত হয়। রচনাটি এবার বি-উপনিবেশীকরণের আশ্চর্য এক দ্বিমুখী বিবরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
আরও পড়ুনমার্টিন লুথারের ‘হাতুড়ি’০৭ জুলাই ২০২৫১৯৬৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্ক্স-লেনিনবাদী সংগঠন ব্ল্যাক প্যান্থার পার্টির দুই সদস্য.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চার্লি কার্ককে কে হত্যা করল
গত কয়েক বছরে চার্লি কার্কের অনুষ্ঠানে আমার কয়েকবার অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁকে আমার সব সময় ভদ্র, শ্রদ্ধাশীল ও বিভিন্ন ধ্যানধারণার প্রতি আন্তরিকভাবে আগ্রহী একজন মানুষ বলে মনে হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের মতপার্থক্য ছিল, তা–ও তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।
চার্লি বাক্স্বাধীনতার একজন দৃঢ় সমর্থক ছিলেন এবং তরুণ প্রজন্মকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন—রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকলেও বাক্স্বাধীনতা ও সংলাপের মূল্য বেশ গভীর।
মাত্র ৩১ বছর বয়সে চার্লি দেশের রক্ষণশীল তরুণদের সবচেয়ে বড় সংগঠনের জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। ফলে এ দেশের ভবিষ্যতের রক্ষণশীল আন্দোলনে তাঁর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এমনকি তিনি রিপাবলিকান পার্টিকে প্রভাবিত করার মতো শক্তিশালী অবস্থানেও পৌঁছে গিয়েছিলেন।
বিগত রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারের সময় আমি নিজেই লক্ষ করেছি, এ দেশের তরুণেরা স্বাধীনতা, শান্তি ও সমৃদ্ধির আদর্শে সত্যিই অনুপ্রাণিত।
গত সপ্তাহে চার্লি কার্কের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা আসল গল্পটি জানতে পেরেছি, তা আমি বিশ্বাস করি না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার দেওয়া বিবরণে ব্যাপক অসংগতি দেখা যাচ্ছে। এসব সংস্থার বর্ণনাকে আমার বারবার পাল্টে যাওয়া কাহিনি বলে মনে হয়েছে, যা কোনো অর্থই বহন করে না।
কার্কের কাছের কিছু ব্যক্তি জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তাঁর অবস্থান ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছিল। প্রচলিত নব্য রক্ষণশীল যুদ্ধংদেহী (মিলিটারিজম) মনোভাব থেকে সরে এসে তিনি আরও অহস্তক্ষেপমূলক (নন-ইন্টারভেনশনিস্ট) নীতির দিকে ঝুঁকছিলেন।
টাকার কার্লসন সম্প্রতি জানিয়েছেন, ইরানে হামলা চালানো থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিরত রাখতে কার্ক নিজেই হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
আরও পড়ুনচার্লি কার্কের মৃত্যু উদ্যাপনকারীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত: জেডি ভ্যান্স১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ ছাড়া রক্ষণশীল পডকাস্টার (রাজনৈতিক ভাষ্যকার) ও চার্লি কার্কের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ক্যান্ডেস ওয়েন্স তাঁর নিজের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কার্ক সম্প্রতি ‘আধ্যাত্মিক সংকটের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আগের যুদ্ধংদেহী সমর্থন থেকে সরে এসে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অহস্তক্ষেপবাদী’ পথের দিকে ঝুঁকেছিলেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতায় তিনি এদিকে এগোচ্ছিলেন।
প্রশ্ন থেকে যায়, চার্লি কার্ক কি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এমন কোনো শক্তির দ্বারা নিহত হয়েছেন, যাঁরা তাঁর মতো এমন এক প্রভাবশালী নেতার দৃষ্টিভঙ্গির ওই রকম পরিবর্তন মেনে নিতে পারছিলেন না। তবে কী হয়েছে, তা আমরা এখনো জানি না।
যেমনটি বলেছি, তেমন কিছু যদি ঘটেও থাকে, তা শান্তির ধারণাকে এগিয়ে নেওয়া ঠেকাতে যাঁরা মরিয়া, তাঁরা অবশ্যই আড়াল করতে চাইবেন। যেমনটি তাঁরা অতীতে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে করেছেন।
আমার সাম্প্রতিক বই ‘দ্য সারাপটিশস কু: হু স্টোল ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশন?’-এ আমি এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এতে আমি জন এফ কেনেডি, রবার্ট এফ কেনেডি, মার্টিন লুথার কিংসহ বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেছি।
১৯৬০–এর উত্তাল দশকে তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। কারণ, তাঁরা প্রচলিত অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং শীতলযুদ্ধ চলাকালে সাংঘর্ষিক অবস্থান নেওয়া থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষক চার্লি কার্ক ফাইল