আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ কেটে দেওয়া হতে পারে
Published: 12th, August 2025 GMT
আয়কর রিটার্ন না দিলে আপনার গ্যাস-বিদ্যুৎসহ পরিষেবার সংযোগ কেটে দেওয়া হতে পারে। আয়কর আইনে সেই ক্ষমতা কর কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের যে আয়কর নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে রিটার্ন জমা না দিলে পাঁচ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো পরিষেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কোনো করদাতা যদি রিটার্ন জমা না দেন, কিন্তু তাঁর করযোগ্য আয় আছে কিংবা রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা আছে; তাহলে কর কর্মকর্তারা চাইলে ওই ব্যক্তির বাসাবাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠানের গ্যাস-বিদ্যুৎসহ পরিষেবার লাইন কেটে দিতে পারেন।
আয়কর নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করলে করদাতার যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেগুলো হলো—১.
দুই শ্রেণির কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) আয়কর রিটার্ন দিতে হয়। তাঁরা হলেন যাঁদের করযোগ্য আয় বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকা পেরিয়ে গেছে। অপর শ্রেণি হলো যাঁদের আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। এখানে বলা প্রয়োজন, ৩৯ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র দেখাতে হয়।
রিটার্ন কোথায় জমা দিতে হয়১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিতে পারেন। সেখানে সারা বছরের আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে হয়। এ বছর থেকে সব করদাতাকে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে হবে। www. etaxnbr. gov. bd এই ঠিকানায় অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে হবে। তবে বিশেষ পাঁচ শ্রেণির করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে বছরে ৪০ লাখের মতো করদাতা রিটার্ন দেন। গত অর্থবছরের ১৭ লাখের মতো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দেন। তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশ করদাতা কোনো কর দেননি। তবে রিটার্ন দিয়েছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আয়কর র ট র ন পর ষ ব করদ ত
এছাড়াও পড়ুন:
মঞ্জুর হওয়া গৃহঋণও আটকে গেছে
আবাসন খাতে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) ঋণের চাহিদা বাড়ছে। এ খাতে ঋণদানকারী রাষ্ট্রীয় বিশেষায়িত একমাত্র সংস্থা বিএইচবিএফসি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ঋণের সুদের হার কম হওয়ায় গৃহঋণ নিতে আগ্রহীরা এ সংস্থায় বেশি ঝুঁকছেন। কিন্তু তহবিলসংকটে সংস্থাটি সন্তোষজনক মাত্রায় ঋণ দিতে পারছে না।
বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদেরও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গৃহঋণ দিতে পারছে না বিএইচবিএফসি। এমন বাস্তবতায় আবাসন খাতে ঋণ বাড়াতে বিএইচবিএফসি সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকার ঋণসহায়তা চেয়েছে। গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৩ শতাংশ সুদে ২০ বছর মেয়াদে সরকার থেকে এ ঋণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ২৪ জুলাই সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল মান্নান এ সহায়তা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠি এসেছে। আবাসন খাতে বিএইচবিএফসির ঋণের চাহিদা যে বাড়ছে, এটাও ঠিক। সংস্থাটিকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে কাজ চলছে। সম্প্রতি আমরা এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের মতামত চেয়েছি। দেখা যাক।’
সাত দশকের বেশি সময় ধরে সুপরিকল্পিত আবাসন বিনির্মাণে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ঋণ দিয়ে আসছে বিএইচবিএফসি। সবার জন্য আবাসন, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ৭৩টি শাখা কার্যালয়ের মাধ্যমে এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। দেশের নগর ও মহানগর অঞ্চলের বাইরে সব উপজেলা এবং গুরুত্বপূর্ণ গ্রোথ সেন্টারগুলোতে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এ ঋণ কার্যক্রম।
ঋণ পাওয়ার যুক্তি হিসেবে সংস্থাটি কিছু তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে। জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৪৬ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করে ঋণ দিয়েছে ৬৯৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করে দিয়েছে ৯১৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করে দিয়েছে ৯২২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে টাকার অভাবে ৪১২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করতে পারেনি সংস্থাটি।
অর্থসংকট কাটাতে ৩ শতাংশ সুদে ২০ বছর মেয়াদে সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকা চেয়েছে সংস্থাটি।মোট তহবিল কতবিএইচবিএফসি সরকারকে জানিয়েছে, ১৯৫২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কোনো ঋণ অবলোপন করেনি সংস্থাটি। সংস্থাটি কোনো ঋণ মওকুফও করেনি। খেলাপি ঋণের হার ২৫ শতাংশ থেকে কমে নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে। সংস্থাটির কোনো প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি নেই। প্রচলিত ঋণের পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক ঋণসুবিধাও রয়েছে সংস্থাটির। বিএইচবিএফসি থেকে ঋণ নিলে তা ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।
সংস্থাটি এর তহবিলের মোট স্থিতিও জানিয়েছে। এ পর্যন্ত ছয়টি খাতে মোট তহবিল পেয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ১১৫ কোটি টাকা। বাকি তহবিলের মধ্যে ঋণপত্র (ডিবেঞ্চার) বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থই বেশি, যার পরিমাণ ১ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) প্রথম পর্যায়ে ৯২৮ কোটি ৩০ লাখ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭০০ কোটি টাকা দিয়েছে। সরকারি ঋণ রয়েছে ৮২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং স্থায়ী আমানত রয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। মোট তহবিলের মধ্যে স্থিতি বা ব্যালান্সের পরিমাণ বর্তমানে ২ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।
যেসব উৎস থেকে তহবিল পেয়েছে সংস্থাটি, তাদের কোনো কিস্তি বকেয়া নেই। এগুলোর সুদের হার ২ থেকে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত। সুদ ও আসল মিলিয়ে ঋণদাতা সংস্থাগুলোকে তিন অর্থবছরে সংস্থাটি ৩২৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
লভ্যাংশ পাচ্ছে সরকারঋণ আবেদনের পর বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এক পর্যায়ে ঋণ মঞ্জুর করে বিএইচবিএফসি। দেড় বছর আগে যেসব ঋণ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে, তার মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত অনেকে ঋণ পাননি। এর মধ্যে সাধারণ ঋণ রয়েছে ৩৩৪ কোটি টাকা আর সরকারি কর্মচারীদের গৃহঋণ রয়েছে ৫০ কোটি টাকা।
সংস্থাটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানিয়েছে, ঋণ প্রস্তাব মঞ্জুর করার পরও ঋণের চেক দেওয়া যাচ্ছে না নগদ তহবিলের চরম সংকটের কারণে। এতে গ্রাহক অসন্তোষ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর–পরবর্তী মুনাফা থেকে সরকারকে লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে ৮৩ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মুনাফা থেকেও ৫০ কোটি টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়, যা বর্তমান সংকটকে আরও নাজুক করে তুলেছে।
বিএইচবিএফসির এমডি মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তি তুলে ধরে সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছি। আশা করছি, সরকার তা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।’