পর্যটন শিল্প বাড়াতে এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রচারে নেপাল সরকার আগামী দুই বছর ৯৭টি হিমালয় পর্বতে আরোহণের জন্য পারমিট ফি মওকুফ করছে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) নেপালের দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট-এর বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। 

নেপালের সরকার এর আগে জানিয়েছিল যে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণের খরচ বৃদ্ধি পাবে। এভারেস্ট আরোহণের পারমিট ফি ১১ হাজার ডলার থেকে বেড়ে ১৫ হাজার ডলার হচ্ছে-প্রায় এক দশকের মধ্যে যা প্রথম বৃদ্ধি। তবে এবার নতুন সুখবর দিয়ে জানিয়েছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৯৭টি পর্বতে বিনামূল্যে আরোহণ করা যাবে।

আরো পড়ুন:

এ দেশে যে প্রশ্ন শুনতে হয় ‘এভারেস্টে উঠলে কী হয়?’ 

শাকিলের এভারেস্ট জয়ে আবেগ আপ্লুত মা, এলাকাবাসীর উচ্ছ্বাস

নেপালের পর্যটন বিভাগ জানিয়েছে, দেশের ‘অজানা পর্যটন সম্ভাবনা ও গন্তব্যগুলোকে’ তুলে ধরা এই পদক্ষেপের লক্ষ্য। পর্বতারোহণ নেপালের বড় আয়ের উৎস, যেখানে বিশ্বের ১০টি সর্বোচ্চ পর্বত অবস্থিত। শুধু গত বছরেই দেশটি এ খাত থেকে আয় করেছে ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার, যার তিন-চতুর্থাংশের বেশি এসেছে এভারেস্ট থেকে।

যে ৯৭টি শৃঙ্গের ফি মওকুফ করা হবে, সেগুলো নেপালের কার্নালি ও সুদুরপশ্চিম প্রদেশে অবস্থিত। উচ্চতা ৫ হাজার ৯৭০ মিটার থেকে ৭ হাজার ১৩২ মিটার পর্যন্ত। নেপালের এই দুই প্রদেশই সবচেয়ে দরিদ্র ও অনুন্নত এলাকা হিসেবে পরিচিত।

নেপালের পর্যটন বিভাগের মহাপরিচালক হিমাল গৌতম বলেন, “এসব পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও এখানে পর্যটক ও পর্বতারোহীর সংখ্যা খুব কম। যাতায়াত অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বলেই এমন হয়। আমরা আশা করি, নতুন বিধান এ পরিস্থিতি বদলাবে। এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৃদ্ধি এবং স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।”

তবে কর্তৃপক্ষ এই দুর্গম অঞ্চলে অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনা করেছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। একইসঙ্গে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো হঠাৎ বেড়ে যাওয়া পর্যটক চাপ সামলাতে পারবে কি না, সেটাও অজানা।

গত দুই বছরে এই ৯৭টি শৃঙ্গে মাত্র ৬৮ জন পর্বতারোহী গেছেন। বিপরীতে, ২০২৪ সালে কেবল এভারেস্টের জন্য ৪২১টি আরোহন পারমিট দেয়া হয়েছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এভারেস্টে অতিরিক্ত ভিড়, পরিবেশগত ক্ষতি ও একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট পাহাড়ের ধারণক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে এভারেস্টসহ কয়েকটি শৃঙ্গে সীমিতসংখ্যক পারমিট দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে, নেপাল সরকার পারমিট ফিতে ৩৬ শতাংশ মার্ক-আপ ঘোষণা করে। মৌসুমের বাইরে, সেপ্টেম্বর-নভেম্বর সময়ে এভারেস্ট আরোহণের খরচ হবে ৭ হাজার ৫০০ ডলার এবং ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৩ হাজার ৭৫০ ডলার।

এছাড়া যারা মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের ক্ষেত্রে নতুন একটি নিয়মও আসতে চলেছে। যে সব পর্বতারোহী মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার কথা ভাবছেন নেপালে তাদের প্রথমে কমপক্ষে ৭ হাজার মিটার উঁচু একটি শৃঙ্গ আরোহণ করা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছে নেপাল সরকার। ফলে কার্নালি ও সুদুরপশ্চিম প্রদেশের শৃঙ্গগুলোকে দেখা হচ্ছে আদর্শ প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে।

প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য নেপাল সরকার সংসদে পাঠিয়েছে। প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে সংসদের দুটি কক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের লাঠি নিয়ে তরুণকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল, ইউএনওর বিরুদ্ধে মামলা

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছ থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে দুর্জয় (১৮) নামের এক তরুণকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। মারধরের একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ঘটনায় রায়হান কবীর নামের যুবদলের এক নেতা গত রোববার আটপাড়া আমলি আদালতে ইউএনওর বিরুদ্ধে একটি মামলার আবেদন করেন। পরে আদালতের বিচারক আবেদন আমলে নিয়ে ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে মামলা করতে অনুমতি চান রায়হান।

মারধরের শিকার দুর্জয় উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় দিনমজুর। বাদী রায়হান কবীর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মোবারকপুর গ্রামের প্রয়াত ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে।

এলাকাবাসী, ইউএনও কার্যালয় ও মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৪ মার্চ দুপুরে বানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। ইউনিয়নের ২ হাজার ৩৭ জন উপকারভোগীর মধ্যে জনপ্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। সেখানে চাল নিতে আসা উপকারভোগীরা সিরিয়াল না মানায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া চাল পাচারের খবর পেয়ে ইউএনও রুয়েল সাংমা সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় ইউএনও পুলিশের কাছ থেকে লাঠি নিয়ে উপকারভোগী দুর্জয় নামের এক তরুণকে মারধর করেন।

ঘটনার পাঁচ মাস পর রোববার যুবদল নেতা রায়হান কবীর এ নিয়ে আদালতে মামলার আবেদন করেন। মামলায় ইউএনওকে একমাত্র বিবাদী করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন বলে জানান বাদীর আইনজীবী মিজানুর রহমান।

এ বিষয়ে বাদী রায়হান কবীর বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। ইউএনও ওই দিন দুপুরে পুলিশ নিয়ে পরিষদে উপস্থিত হয়ে পুলিশের কাছ থেকে লাঠি নিয়ে দুর্জয়কে মারধর করে একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে যান। আমরা চেষ্টা করেও তাঁকে প্রতিহত করতে পারিনি। একজন নিরীহ নাগরিককে সরকারি আমলা হয়ে তিনি মারধর করতে পারেন না। বিষয়টি এলাকায় ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় ন্যায়বিচারের দাবিতে আমি ছয়জনকে সাক্ষী করে মামলা করেছি। মারধরের একটি ভিডিও সংযুক্ত করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী দুর্জয় মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার মা হুসনা আক্তার অসুস্থ থাহনে আমি সেই দিন সাড়ে ১২টার সময় ভিজিএফের চাউল আনতাম যাই। ফরে লোকজনের ঠেলাধাক্কায় পরিষদের সামনে দেওয়া বাঁশের বেড়া খুইল্লা গেলে আমি সামনে গিয়া পইড়া যাই। এ সময় ইউএনও স্যার আইয়া আমারে মারধর করেন। পরে আমারে চারটা পর্যন্ত আটকাইয়া রাইখা একটা কাগজে স্বাক্ষর কইরা ছাইড়া দিছে। আমি কোনো চাউল লুটপাট করার লোক না।’

অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও রুয়েল সাংমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে মারধর করিনি। এটা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন মহলের চক্রান্ত চলছে। রমজানের ঈদের সময় কিছু বিশৃঙ্খল জনতা ভিজিএফের মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে আমরা ধরছি, ধরার পরে তারা আমার সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করে। আমি তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে ক্যাপচার করছি। ওখানে পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিল না। তবে আমি কাউকেই কোনো মারধর করিনি।’

পিবিআইয়ের ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রকিবুল আক্তার বলেন, ‘এ রকম একটি বিষয় শুনেছি। তবে আদালতের আদেশটি এখনো অফিশিয়ালি পাইনি।’

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রোববার এ নিয়ে একটি ডাক ফাইল কার্যালয়ে এসেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ