দুর্নীতির মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড
Published: 14th, August 2025 GMT
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩–এর বিচারক আবু তাহের আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। রায়ের পর পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট মামলা করে দুদক।
এর আগে গত ২৫ মে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় শামীমা নূর পাপিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর অস্ত্র আইনের মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীকে সর্বোচ্চ ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার পাঁচ তারকা একটি হোটেলে বিলাসবহুল কক্ষ ভাড়া নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে পাপিয়ার বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের বিষয়ে আঁচ পেয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর পাপিয়াকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে পাপিয়ার বুকিং দেওয়া বিলাসবহুল স্যুট ও ইন্দিরা রোডের ফ্ল্যাট থেকে বিদেশি একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পিস্তলের ২০টি গুলি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার নগদ টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, কিছু বিদেশি মুদ্রা ও এটিএম কার্ড জব্দ করেছিল র্যাব।
র্যাব জানায়, পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর মালিকানায় রাজধানীর ইন্দিরা রোডে ২টি ফ্ল্যাট, নরসিংদীতে ২টি ফ্ল্যাট, ২ কোটি টাকা দামের ২টি প্লট, তেজগাঁওয়ে এফডিসি ফটকের কাছে গাড়ির শোরুমে ১ কোটি টাকার বিনিয়োগ, নরসিংদী জেলায় কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন নামের প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকার বিনিয়োগ আছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করে র্যাব। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অবৈধ পাঁচ কোটি টাকার খোঁজ পেয়ে পাপিয়া ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এস আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগসংক্রান্ত আদেশ স্থগিত
এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এ–সংক্রান্ত মেমো স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ২০২০ সালের ১৯ জুলাই এক মেমোতে জানায়, সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব গ্রহণের কারণে সাইফুল আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের আবেদন সরকার মঞ্জুর করেছে। এর বৈধতা নিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পক্ষে চলতি মাসে রিটটি করা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আলম মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতারণামূলক উদ্দেশ্য থেকে সাইফুল আলম (এস আলম) ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন; যাতে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া টাকা দিতে না হয় এবং ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করে সুরক্ষা পেতে পারেন। নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে দাবি করে তিনি আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে গিয়েছেন। অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। সাইফুল আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে মেমো দিয়ে মঞ্জুর করেছিল, তা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ফলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বহাল থাকছেন।
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী আরও বলেন, ২০২০ সালে নাগরিকত্ব ত্যাগ করলেও বিভিন্ন ঋণসংক্রান্ত নথি–তথ্যাদিতে এস আলম নিজেকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দাবি করছেন দেখা যাচ্ছে। আবার সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে আন্তজাতিক সালিসি আদালতে গিয়ে বাংলাদেশে তাঁর বিনিয়োগের সুরক্ষা চাচ্ছেন। তাঁর কাছে ইসলামী ব্যাংকের পাওনা এক হাজার কোটির বেশি টাকা।
সিঙ্গাপুর থেকে সাইফুল আলমকে কূটনৈতিক মাধ্যমে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি এবং গ্রাহকদের টাকা পরিশোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় ও পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—এ বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ূম।