আট বছর ধরে পড়ে ছিল পরিত্যক্ত বিস্তীর্ণ মাঠ। লাল বেলেমাটির উর্বরতা ছিল না বললেই চলে। কয়েক বছর আগে মাঠটির এক কোনায় গড়েন একটি জৈব সারের কারখানা। পরে এর পাশেই ১৫ শতক জমিতে মেহের সাগর ও অগ্নিস্বর জাতের ১৫০টি কলাগাছ রোপণ করেন কাইছার খান সিদ্দিকী (৪৫)। সেই কলাগাছের ফাঁকে বস্তায় আদা চাষ করে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

কাইছারের বাড়ি লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নের মিয়াবাড়ি এলাকায়। একসময় চট্টগ্রাম শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। করোনার সময় অসুস্থ বাবাকে নিয়ে গ্রামে চলে আসেন। এরপর গ্রামেই স্থায়ীভাবে কৃষিকাজ শুরু করেন। সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ নিয়ে নানা খামারও গড়ে তুলেছেন সেখানে।

চলতি বছরের মে মাসে তিনি কলাবাগানের ফাঁকা জায়গায় ৩৭০টি সিমেন্টের বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন। কাইছারের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দক্ষিণে গোয়ালটি মুরার বড়তলী এলাকায় কলাবাগানটির অবস্থান। গত রোববার সরেজমিন দেখা যায়, বাগানের ফাঁকে প্রতি বস্তায় গজিয়েছে ১০ থেকে ২০টি আদার গাছ, উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট। পোকামাকড় দমনে বাগানে বসানো হয়েছে ফেরোমেন ফাঁদ। এর এক ফাঁকে কথা হয় কাইছারের সঙ্গে।

বস্তায় পানি জমে না, গাছ কোনো রোগে আক্রান্ত হলে সহজে বস্তা সরিয়ে ফেলা যায়। আবার সারের অপচয়ও হয় না। জমি না থাকলেও উঠান, ছাদ কিংবা পাশের ছোট ফাঁকা জায়গায় কয়েকটি বস্তায় আদা চাষ করা যায়।—কাইছার খান সিদ্দিকী, কৃষি উদ্যোক্তা

আদার বস্তা থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে করতেই কাইছার প্রথম আলোকে বলেন, চলতি বছর মার্চে ঠাকুরগাঁওয়ে ‘গ্লোবাল গ্যাপ’ শীর্ষক এক কৃষি প্রশিক্ষণে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে পরে বগুড়ার বাংলাদেশ মসলা গবেষণাকেন্দ্রে যান। ওই গবেষণাকেন্দ্র থেকেই বস্তায় আদা চাষের কৌশল শেখেন। পরে আদার বীজ কিনে নিজস্ব জৈব সার ও রাসায়নিক মিশ্রণে চাষ শুরু করেন। সব মিলিয়ে তাঁর খরচ হয় ১২ হাজার টাকা।

বস্তায় আদা চাষের সুফল জানিয়ে কাইছার প্রথম আলোকে বলেন, বস্তায় পানি জমে না, গাছ কোনো রোগে আক্রান্ত হলে সহজে বস্তা সরিয়ে ফেলা যায়। আবার সারের অপচয়ও হয় না। জমি না থাকলেও উঠান, ছাদ কিংবা পাশের ছোট ফাঁকা জায়গায় কয়েকটি বস্তায় আদা চাষ করা যায়। ডিসেম্বরের শেষে প্রতি বস্তা থেকে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ গ্রাম আদা তোলা যাবে বলে তাঁর ধারণা। সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম বলেন, বস্তায় আদা চাষ গ্রামীণ কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমি বা বাড়ির আঙিনাতেও এভাবে চাষ করা যায়। ২০২৩ সালের শেষের দিকে লোহাগাড়ায় প্রথম এভাবে আদা চাষ শুরু হয়। এ বছর ৩০ জন উদ্যোক্তা বস্তায় আদা চাষ করেছেন। বড় পরিসরে যাঁরা করছেন, কাইছার খান সিদ্দিকী তাঁদের অন্যতম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ষ কর

এছাড়াও পড়ুন:

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: সাভারে বিএনপির আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করার পর ঢাকার ধামরাইয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে ধামরাই উপজেলার বারবাড়িয়া এলাকায় উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে মিছিল করেন তারা। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এ রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে: নাহিদ 

শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকরের দাবি শহীদ রাকিবুলের মা-বাবার

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘‘আমরা মনে করি এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা এ বিচারকার্যের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা সেই মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যে ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য আমরা ১৫-১৬ বছর অপেক্ষা করেছি। আমরা শুধু এ রায়েই ক্ষান্ত হবো না।’’  অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে এনে রায় কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি। 

পরে তারা সাধারণ জনগণের কাছে মিষ্টি বিতরণ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা মাসুদ আল শাহীন, জাহাঙ্গীর আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ইমান আলী, ছাত্রদল নেতা সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। এতে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেয়।
 

ঢাকা/সাব্বির/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ