ছাত্রসংসদের দাবিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। ৪৮ ঘণ্টার এই আমরণ কর্মসূচিতে ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৫ জনকে। এর মধ্যে ২ শিক্ষার্থী সুস্থ হয়ে আবার আন্দোলনের যোগ দিয়েছেন। এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ শিক্ষার্থী।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের খসড়া গঠনতন্ত্রটি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদনের জন্য পরীক্ষা ও চূড়ান্ত করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গঠিত কমিটির সভা ২১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত হবে।

আজ মঙ্গলবার ইউজিসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (লিগ্যাল) শেখ আনিসুজ্জামানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুনরোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশনে অসুস্থ দুই শিক্ষার্থী হাসপাতালে১৮ আগস্ট ২০২৫

গত রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর ফটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১০ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। তাঁদের অভিযোগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্রসংসদের বিষয়টি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্রসংসদ বাবদ ফি নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন।

আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের উত্তর গেটে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন করছেন। এ সময় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রহমানকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল রাত দুইটার দিকে হাসপাতালে নেওয়া হয় গণিত বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আরমান হোসেনকে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নয়ন মিয়া বলেন, ছাত্রসংসদের দাবিতে আমরণ অনশনে এখন পর্যন্ত ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাত্রসংসদের রোডম্যাপ ঘোষণা না করে কালক্ষেপণ করছে।

আরও পড়ুনরোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের দাবিতে আমরণ অনশন, ৪ শিক্ষার্থী অসুস্থ১৮ আগস্ট ২০২৫

এদিকে, আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরুর ৩৬ ঘণ্টা পর উপাচার্যের বিবৃতি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অনশন ভেঙেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিবলি সাদিক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মুশফিকুর রহমান।

এ সময় শিবলি সাদিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৩৬ ঘণ্টা থেকে আমরণ অনশন করছিলাম। আমরা চাচ্ছিলাম, ছাত্রসংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিবৃতি দিক। উপাচার্য বিবৃতি দিয়েছেন। ১০ কার্যদিবসের সময় চেয়েছেন তিনি। আমি এটার সঙ্গে একমত। আমার শারীরিক পরিস্থিতিও খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ওয়াদা দিয়েছে, তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে আমি অনশন ভাঙছি।’

ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি উল্লেখ করে ১০ কার্যদিবসের সময় চেয়েছেন উপাচার্য শওকাত আলী। সোমবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক এহতেরামুল হকের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,  ছাত্রসংসদের বিষয়টি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নেই। তবে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রসংসদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ছাত্রসংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ একটি ব্যাংক হিসাব খুলে জমা রাখা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে সেটা শুধু ছাত্রসংসদের জন্যই খরচ করা যায়।

ছাত্রসংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য উপাচার্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কমিটির সদস্যরা চারটি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবি) থেকে গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও তিনটি আবাসিক হলের জন্য আলাদা করে ছাত্রসংসদের জন্য একটি গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করেছেন। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রশাসনিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুনরোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বিবৃতির পর অনশন ভাঙলেন দুই শিক্ষার্থী, অন্যরা অনড়১৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গঠনতন ত র উপ চ র য র জন য রহম ন ইউজ স

এছাড়াও পড়ুন:

তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ

সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।

এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।

তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।

আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।

অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।

অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।

আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।

আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ‍্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’

আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগে

যতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।

তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
  • ৩ দাবিই পূরণ চান অনশনরত জবি শিক্ষার্থীরা
  • টানা ৩০ ঘণ্টা অনশনে তিন জবি শিক্ষার্থী অসুস্থ
  • তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
  • তিন দাবিতে অনশনে জবি শিক্ষার্থীরা
  • ডিসেম্বর মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আশ্বাস জবি উপাচার্যের
  • জকসুর রোডম্যাপসহ ৩ দাবিতে অনশনে জবি শিক্ষার্থীরা
  • সম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী