দোহার ও নবাবগঞ্জে পৃথক দুটি আসনের দাবি
Published: 26th, August 2025 GMT
দোহার ও নবাবগঞ্জ নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অর্থাৎ দুই উপজেলায় দুটি আসন বিন্যাস করার দাবি উঠেছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত শুনানিতে অংশ নিয়ে এমন দাবি করেন তারা।
শুনানি শেষে দোহা ও নবাবগঞ্জ সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক মো.
কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যদি আগামীতে স্বৈরাচার সরকার না চান, তাহলে ২০০৮ সালে কমবেশি ১৫০ আসন কাটা-ছেঁড়া করা নির্বাচনী সীমানার পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। ঢাকা সিটিতে সোয়াশো কাউন্সিলর, ৮০ জনের মত নারী কাউন্সিলর এবং দুজন মেয়র থাকার পরও এতগুলো আসন কেন প্রয়োজন, তা আমাদের বুঝে আসে না। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম জুলাই অভ্যুত্থানের পর সব রাজনৈতিক দল মিলে সবার আগে এ দাবিটি তুলবে। ঢাকা সিটি থেকে আসন কেটে আগের মতো মফস্বল এলাকায় আসন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে আপনাদের অনুরোধ করবেন।”
তিনি বলেন, “২০০৮ সালের আগে বিগত সব নির্বাচনে দোহার উপজেলা নিয়ে ঢাকা-১ ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ঢাকা-২ আসন গঠিত ছিল। এ দুই আসনের সিংহভাগ মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হওয়ার অপরাধে ২০০৮ সালে দুইটি আসনকে একটিতে রূপান্তর করা হয়েছে। আপনারা জানেন দোহার এবং নবাবগঞ্জ প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। পরিবারের অন্তত একজন সদস্য প্রবাসে থাকেন না, এমন পরিবার পাওয়া দুষ্কর। তাই এই দুই উপজেলার মানুষ পারিবারিকভাবে অভিভাবক শূন্য। বিগত ১৭ বছর আমরা রাজনৈতিকভাবেও অভিভাবক শূন্য রয়েছি। অভিভাবক শূন্য হওয়ার সুযোগে আমাদের এলাকা এখন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া মারামারি হানাহানি লেগেই থাকে, দেখার কেউ নেই। আপনারা জানেন কিছুদিন আগে হারুন মাস্টার নামে একজন স্কুল শিক্ষক ভোরে যখন হাঁটতে বেরিয়েছেন, কীভাবে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “আমাদের এলাকায় উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। আমাদের এলাকা থেকে ঢাকায় আসতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আর বাবুবাজার ব্রিজে যদি যানজট হয়, তাহলে ঘণ্টা পাঁচেকের আগে ঢাকা সিটিতে প্রবেশ করার উপায় নেই। দোহারের এক পাশ দিয়ে পুরোটাই পদ্মা নদী।তাই শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার উপযুক্ত স্থান হওয়া সত্ত্বেও তা হয়নি। কারণ আমাদের এলাকায় এখনো গ্যাসের লাইন যায়নি, আর শিল্প কারখানা না থাকায় একটু বাতাস এলে, বৃষ্টিতে, গরমকালে বিদ্যুতের দেখা পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়।”
দোহা ও নবাবগঞ্জ সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধার কমিটির এ আহ্বায়ক বলেন, “আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে দোহার এবং ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে নবাবগঞ্জ আলাদা আলাদা স্বতন্ত্র প্রশাসনিক এলাকা। দুই উপজেলা মিলে আয়তন ৪০০ বর্গ কিলোমিটারে উপরে। তাই একজন সংসদ সদস্যের এত বড় এলাকা দেখভাল করা দুষ্কর। তাই দুটি উপজেলায় পূর্বের ন্যায় দুটি আসন বিন্যাস করা প্রয়োজন।”
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ