ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেগুন গাছটি কার? জেলা পুলিশ-গণপূর্তের ভিন্ন বক্তব্য
Published: 3rd, September 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন জায়গায় থাকা প্রায় ৭০ বছর পুরনো একটি সেগুন গাছ নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ আগস্ট গাছটি কেটে ফেলেন নিলামে পাওয়া ঠিকাদার।
এ নিয়ে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে। যদিও, জায়গাটি নিজেদের বলে দাবি পুলিশের। বর্তমানে জায়গাটি ডাম্পিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।
আরো পড়ুন:
টিনের চাল কেটে ঘরে ঢুকে ব্যবসায়ীকে হত্যা
জুলাই আন্দোলন: রাজশাহীতে ৯ মামলায় অভিযোগপত্র, আসামি ৫২৯
গাছ বিক্রির নিলামেও গণপূর্তের জায়গাটি নিজেদের বলে উল্লেখ করে পুলিশ। প্রকাশ্য নিলামে গাছটি ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ টাকা টাকায় বিক্রি করা হলেও প্রকৃতপক্ষে গাছটির মূল্য আরো বেশি বলে দাবি গণপূর্ত বিভাগের।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের মেড়ুরা মৌজার খতিয়ান নম্বর- ৫, এসএ নম্বর- ১৭৭১ এবং বিএস নম্বর- ৪৭০৬ এর ২ দশমিক ১২৫০ একর জায়গাটি এল.
বিএস খতিয়ান প্রকাশের আগ পর্যন্ত জায়গাটির খাজনা পরিশোধ ছাড়াও এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল ও পৌর কর পরিশোধ করে আসছে গণপূর্ত বিভাগ। আরএস ও সিএস খতিয়ানে জায়গাটি গণপূর্ত বিভাগের নামে রেকর্ড হলেও ভুলবশত বিএস খতিয়ানে জায়গাটি জেলা পুলিশের নামে রেকর্ডভুক্ত করা হয় বলে দাবি গণপূর্তের। এ নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল কোর্টে মামলা করেছে গণপূর্ত বিভাগ (মামলা নং- ৯১১/২০১৯)।
গত ২২ মার্চ জায়গাটি বিভিন্ন মামলার আলামতের গাড়ি ও জব্দকৃত যানবাহন সংরক্ষণে ব্যবহার করার কথা জানিয়ে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেয় জেলা পুলিশের শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) মীর আনোয়ার হোসেন। পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পাওয়া ওই চিঠির জবাবে মামলা চলমান থাকার পাশাপাশি জায়গাটি সরকারি প্রকল্পের জন্য ব্যবহার হবে উল্লেখ করে যানবাহন সংরক্ষণে ব্যবহার করা যাবে না বলে জানায় গণপূর্ত বিভাগ।
এ অবস্থায় গাছ বিক্রির জন্য গত ২১ জুলাই পত্রিকায় প্রকাশ্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা পুলিশ। এ বিজ্ঞপ্তি দেখে পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে নিলাম বন্ধ করতে বলে গণপূর্ত বিভাগ। এরই মধ্যে গত ৬ আগস্ট প্রকাশ্য নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে গাছটির সর্বোচ্চ ডাক উঠে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ১১ আগস্ট গাছ কাটার কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
চিঠিতে কাজ না হওয়ায় গাছ কাটার দিন সশরীরে গিয়ে বাধা দেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাদ মোহাম্মদ আন্দালিব। পরবর্তীতে তিনি ঘটনাস্থল থেকে চলে আসার পর ঠিকাদার গাছটি কেটে ফেলেন। আয়কর ও ভ্যাটসহ গাছটি বিক্রি হয় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫০ টাকায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাদ মোহাম্মদ আন্দালিব বলেন, ‘‘আরএস ও সিএস খতিয়ানে জায়গাটি গণপূর্ত বিভাগের নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ভুলবশত বিএস খতিয়ানে পুলিশের নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এ নিয়ে মামলা চলমান আছে। আমরা আশা করছি, চূড়ান্ত রায় আমাদের পক্ষে আসবে। যেহেতু জায়গাটি খালি ছিল, সেজন্য জেলা প্রশাসকের অনুরোধে মৌখিকভাবে জায়গাটি ব্যবহারের জন্য পুলিশকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে জায়গাটিতে সমন্বিত জেলা কার্যালয় স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো আছে। প্রকল্পটি শিগগিরই পাশ হবে বলে আশা করি। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই ছেড়ে দিবে শর্তে জায়গাটি পুলিশকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।’’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘‘ভূমি ব্যবস্থাপনা জেলা প্রশাসক করেন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আমি তো একটা পক্ষ তাই না! আমি বলব, যে এটা আমার জায়গা।’’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘‘গণপূর্তের দাবি অনুযায়ী, ভুলবশত সর্বশেষ রেকর্ডে পুলিশের নাম এসেছে- এটা নিয়ে মামলা চলমান আছে। রায় না আসা পর্যন্ত আপাতত পুলিশই জায়গাটির মালিক। তবে, পূর্বের রেকর্ডগুলোতে প্রমাণিত হয় যে এটি গণপূর্তের ছিল। রেকর্ড সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মালিকানা দাবি করতেই পারে। ফলে তাদের প্রয়োজনে গাছ কাটতেই পারে।’’
ঢাকা/পলাশ/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণপ র ত ব ভ গ র ব র হ মণব ড় য় গণপ র ত র ব যবহ র প রকল প র কর ড প রক শ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।