অবসর ভেঙে ফিরলেন রস টেইলর, তবে অন্য দেশের জার্সিতে
Published: 5th, September 2025 GMT
নিউ জিল্যান্ডের জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচ খেলার তিন বছর পার হওয়ার পর আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন রস টেইলর। তবে এ বার তিনি নামছেন জন্মভূমি নয়, মাতৃভূমির প্রতিনিধিত্ব করতে। আসন্ন আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এশিয়া–ইস্ট এশিয়া প্যাসিফিক বাছাইপর্বে সামোয়ার হয়ে মাঠে নামবেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
টেইলর নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে লিখেছেন, “এটা এখন অফিসিয়াল। আমি নীল জার্সি গায়ে সামোয়ার প্রতিনিধিত্ব করব। এটা কেবল ক্রিকেটে ফেরার সুযোগ নয়, বরং আমার শিকড়, সংস্কৃতি, গ্রাম আর পরিবারকে প্রতিনিধিত্ব করার এক বিশাল সম্মান।”
আরো পড়ুন:
ফের আলোচনায় বিসিবি নির্বাচন, গানম্যান চাইলেন সভাপতি
ইতিহাস গড়লেন ব্রিটজকে, ওয়ানডেতে রেকর্ডের পর রেকর্ড
৪১ বছর বয়সী টেইলরের মা সামোয়ার অধিবাসী হওয়ায় তার এই দলে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে নিউ জিল্যান্ডের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলার পর থেকে তিন বছরের সময়সীমা পূর্ণ হওয়ায় এখন তিনি দ্বিতীয় কোনো আন্তর্জাতিক দলের হয়ে খেলতে পারছেন।
নিউ জিল্যান্ডের হয়ে টেইলর খেলেছেন ৪৫০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। করেছেন ১৮ হাজার ১৯৯ রান (টেস্ট ৭ হাজার ৬৮৩, ওয়ানডে ৮ হাজার ৬০৭, টি-টোয়েন্টি ১ হাজার ৯০৯)। ২০২১ সালে নিউ জিল্যান্ডের ঐতিহাসিক ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলেও তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
টেইলর জানান, “হ্যাঁ, আমি ভীষণ উচ্ছ্বসিত। অনেকদিন ধরেই বিষয়টা ভাবছিলাম। অবশেষে দল ঘোষণা হলো। আর এখন আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে পারলাম। ভেবেছিলাম হয়তো কোচিং বা অন্য কোনো ভূমিকায় থাকব, খেলোয়াড় হিসেবে নয়। কিন্তু যখন সুযোগ এলো, আমি আর না বলিনি। আশা করি সামোয়ার হয়ে সেরাটা দিতে পারব।”
অবসরের পর নিয়মিত ক্রিকেট না খেললেও মাঝেমধ্যে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন তিনি। টেইলরের ভাষায়, “হ্যাঁ, আগের মতো আর ক্রিকেট খেলা হয়নি। তবে পুরোপুরি দূরে ছিলাম না। গত এক-দেড় মাস ধরে ট্রেনিং করছি, শরীর কেমন সাড়া দেয় দেখার জন্য। বয়স এখন ৪১, তাই আগের মতো ফুরফুরে নই। কিন্তু চেষ্টা করছি খেলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত হতে।”
আগামী ৮ অক্টোবর ওমানে নিজেদের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের অভিযান শুরু করবে সামোয়া। গ্রুপপর্বে তারা মুখোমুখি হবে ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনির।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সামোয়ার টি-টোয়েন্টি দল:
ক্যালেব জাসমাট (অধিনায়ক), রস টেইলর, ডেরিয়াস ভিসার, শন সোলিয়া, ড্যানিয়েল বার্গেস, ডগলাস ফিনাউ, স্যাম ফ্রেঞ্চ, কার্টিস হাইনাম-নাইবার্গ, বেন মাইলাটা, নোয়া মিড, সলোমন ন্যাশ, স্যামসন সোলা, ফেরেতি সুলুলোটো, সাওমানি তিয়াই ও ইলি তুগাগা।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব শিক্ষক দিবস: রাবিতে ৩ অধ্যাপককে সম্মাননা
‘শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উদযাপিত হয়েছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৫। দিবসটি উপলক্ষে শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সাবেক শিক্ষককে সম্মাননা দিয়েছে রাবি প্রশাসন।
রবিবার (২ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সম্মাননা প্রাপ্ত তিন শিক্ষক হলেন— ড. মু. আযহার উদ্-দীন, ড. এম নজরুল ইসলাম এবং ড. মামনুনুল কেরামত।
আরো পড়ুন:
কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
জাবি অধ্যাপককে হুমকি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি: ইউট্যাব
সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মু. আযহার উদ্-দীন, যিনি ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ও ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
ড. এম নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি এবং ১৯৯৩ সালে ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্টডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১০ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে, ড. মামনুনুল কেরামত ১৯৯১ সালে ভারতের ইন্ডিয়ান স্কুল অব মাইনস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন এবং উপ-উপাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৯ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন।
সম্মাননা পেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করে ড. আযহার উদ্-দীন বলেন, “আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার প্রিয় বিদ্যাপিঠ আজ আমাকে সম্মাননা দিয়েছে—এটি আমার জীবনের এক গর্বের মুহূর্ত। ১৯৬৪ সালের জানুয়ারিতে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছিলাম। এরপর ১৯৬৯ সালের অক্টোবরে আমি ইংল্যান্ডে চলে যাই উচ্চতর ডিগ্রির জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেখানেই ছিলাম।”
অধ্যাপক ড. এম নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, তখন এক শিক্ষক জিজ্ঞেস করতেন— ‘কি হতে চাও?’ আমি উত্তর দিতাম, ‘বিএ পাস করতে চাই।’ আমার সেই শিক্ষকদের কেউ ছিলেন ম্যাট্রিক পাস, কেউ আইএ পাস। তাঁরাই আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন আরো দূর যেতে। আজ আমি সেই শিক্ষকদের কথাই স্মরণ করছি। তবে শিক্ষকের প্রকৃত গর্ব এখানেই নয়—শিক্ষকের গর্ব হলো, তার শিক্ষার্থীরা কত দূর যেতে পেরেছে। শিক্ষার্থীর সফলতাই একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় অর্জন।”
শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। তাদের সঙ্গে নিয়ে চলতে পারলেই সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় গড়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ড. মামনুনুল কেরামত। তিনি বলেন, “এই সম্মাননার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। আমার সঙ্গে শিক্ষকতা করা অনেক সহকর্মী আজ আমাদের মাঝে নেই—তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। সময়ের সঙ্গে শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, শিক্ষার্থীরা এখন অনেক স্মার্ট। আমি মনে করি, শিক্ষকদেরও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তালমিলিয়ে আরো স্মার্ট হতে হবে।”
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, সাবেক শিক্ষক ও রাকসু প্রতিনিধিরা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমার মতে, শিক্ষকতার উপরে কোনো পেশা নেই। সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করে শিক্ষকতা করলে এর চেয়ে মহান পেশা আর হতে পারে না। এই পেশার মাধ্যমে আমরা মানুষের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাই। একজন শিক্ষক হওয়া নিঃসন্দেহে একটি ভাগ্যের ব্যাপার।”
তিনি বলেন, “গতবছরও আমরা তিনজন শিক্ষককে সম্মাননা দিয়েছিলাম। এই বছরও আমরা তিনজন গুণী এবং শিক্ষককে মনোনীত করেছি। এই আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত এবং যাদের আমরা এই সম্মাননা দিয়েছি তারাও অত্যন্ত যোগ্য। আমরা আমাদের প্রত্যেক গুণী শিক্ষককে সম্মানীত করার এ ধারা অব্যহত রাখতে চাই।”
সভার আগের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস সাধারণত ৫ অক্টোবর পালিত হয়। তবে প্রশাসনিক ব্যস্ততার কারণে এ বছর অনুষ্ঠানটি ২ নভেম্বর আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী