জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (জাকসু) ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গেছে। ৩৩ বছর পর আয়োজন করা জাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় ভোট কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। ২১টি ভোটকেন্দ্রের ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। 

আরো পড়ুন:

এলাকাবাসীর চোখে নবনির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েম যেমন  

ডাকসুর ভিপি-জিএস দুজনই বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার ছাত্র

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য। ভোট দিতে ছাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। 

ভোট দিতে আসা ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাইফ বলেন, ‍“ঈদ ঈদ লাগতেছে। উৎসব মুখর পরিবেশে সবাই একত্র হয়ে ভোটাধিকার প্র‍য়োগ করছি। আমি আশাবাদী, ভালো নেতা উঠে আসবেন।”

তিনি বলেন, “আশা থাকবে, সৎ নেতা আসুক সৎ পন্থায়, কেউ অনৈতিকভাবে উঠে না আসুক। কারণ অনৈতিকভাবে যিনি আসবেন তিনি অসৎ হবেন।”

ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস বলেন, “ভোট দিতে এসে ভালো লাগতেছে। উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রার্থীরা কাছে আসছেন, গুরুত্ব দিচ্ছেন এটা বেশি ভালো লাগছে।”

ভোট প্রদান শেষে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, “যতটা জটিলতা সবাই মনে করেছিল, ভোট প্রদান প্রক্রিয়া আসলে তত জটিল নয়। আপনারা সকলে ভোট দিতে আসুন। নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। স্বৈরাচারী শাসনামলে দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের ভোটাধিকার হরণ করে রাখা হয়েছিল। স্বৈরাচারের পতনের পর যে অধিকারটি ফিরে পেয়েছি আমরা, সেই অধিকারটি আপনারা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসুন।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে।

সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী:
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে রয়েছে বিজিবি ও আনসার সদস্যারা। ভোট কেন্দ্রসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

বহিরাগত প্রবেশ ঠেকাতে রাত থেকেই প্রবেশ গেটে বিশেষ পাহারা বসানো হয়েছে।  সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা স্পেশাল কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন। মোতায়েন করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ জন পুলিশ, বিশেষায়িত টিম, সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আরাফাত ইসলাম বলেছেন, “জাকসু নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে স্ব স্ব হলে ভোট গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন জাকসু নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো.

মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, “নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ১১টি ছাত্র হল ও ১০টি ছাত্রী হল মিলে মোট ২১টি হলে ২১টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। 

২৫ পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী:
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার জাকসুর ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। নির্বাচনের মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে জাকসু কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা সবার।

২১টি কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা
ভোট কেন্দ্রগেুলোর নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কেন্দ্রের পরিবেশ নজরদারি করা হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি টিম, প্রক্টরিয়াল বডি ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুরো ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালন করছেন। জাকসুর জন্য তিন পৃষ্ঠার এবং দুটি হলের জন্য দুই পৃষ্ঠার এবং বাকি হলগুলোর জন্য এক পাতার ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে।

ভোটার:
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৪৩ জন। তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৭২৮ জন ছাত্রী এবং ৬ হাজার ১১৫ জন ছাত্র। ছাত্রী ভোটার ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ছাত্র ভোটার ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ। 

ছাত্র ভোটারদের মধ্যে আল বেরুনী হলে ২১০ জন, ১০ নম্বর ছাত্র হলে ৫২২ জন, ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৩৫ জন, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে ৩৩৩ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯২ জন, মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫০ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ৩৯৮ জন এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জন ভোটার রয়েছেন।

ছাত্রী ভোটারদের মধ্যে ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯ জন, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১ জন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৭৯ জন, প্রীতিলতা হলে ৩৯৬ জন, ফজিলতুন্নেসা হলে ৭৯৮ জন, বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৩ জন, বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬ জন, রোকেয়া হলে ৯৫৬ জন, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ জন ভোটার রয়েছেন।

৮টি প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা:

এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট আটটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্যানেলগুলো হলো—জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল, ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)-সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’,  ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’, ছাত্র ইউনিয়ন অপর অংশের সমর্থিত ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের একাংশের নেতৃত্বে গঠিত ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টোর প্যানেল। এর বাইরে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, সংবাদ সংগ্রহকারী ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মীদের সামনে  প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ব্যালট বাক্স দেখিয়ে সিলগালা করা হয়েছে।

ঢাকা/আহসান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘ ল ইন র পর ব শ সমর থ ত প রব শ র জন য ইসল ম সমন ব গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার
  • ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার
  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • চরাঞ্চলের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি
  • নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
  • ১৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ, নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই হাজার সদস্য
  • ফরিদপুরে অবরোধ শনিবার পর্যন্ত স্থগিত
  • আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
  • বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচার শুরু, প্রার্থীদের ছোটাছুটিতে উৎসবমুখর ক্যাম্পাস