কুবি শিক্ষার্থী ও তার মাকে হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
Published: 11th, September 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মায়ের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
আফরিন হত্যা: মুখে কালো কাপড় বেঁধে কুবি শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল
কুবি শিক্ষার্থী ও তার মাকে পাশাপাশি দাফন
মানববন্ধনে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার বোনের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘তুমি কে আমি কে, সুমাইয়া সুমাইয়া’, ‘আমার বোন মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেনো বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে সুমাইয়ার সহপাঠী লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিয়া আফরোজ বলেন, “গত ৭ সেপ্টেম্বর সুমাইয়াকে হত্যা করা হলেও আমরা জানতে পারি ৮ সেপ্টেম্বর। আজ ১১ সেপ্টেম্বর হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কি কারণে সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে সে রহস্য প্রশাসন উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা আরও জানতে পারি, সুমাইয়া এবং তার মাকে হত্যা করেছে সে ২০২৩ সালের ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আসামি।”
তিনি বলেন, “২০২৩ সালের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ার পরেও ২০২৫ সাল পর্যন্ত সে বাইরে থাকে কীভাবে? পুলিশ যদি তাকে আগেই গ্রেপ্তার করে রাখত, তাহলে আজকের এই নির্মমতার সাক্ষী হওয়া লাগত না আমাদের। সুমাইয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার যতদিন নিশ্চিত না হবে, ততদিন আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”
কুবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল বাশার বলে, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মাকে হত্যার যে রহস্য তা এখনো উন্মোচন হয়নি। আমরা চাই প্রশাসন তা দ্রুত উন্মোচন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আপনারা একটা টিম করে নিয়মিত আপডেট আমাদের দেন।”
তিনি বলেন, “আজ মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি এখানে শেষ নয়, যতদিন পর্যন্ত সুমাইয়া হত্যার বিচার না হবে ততদিন আমরা মানববন্ধন চালু রাখবো। যদি প্রয়োজন হয় আমরা পুরো কুমিল্লা অচল করে দিব। যদি প্রশাসন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যার রহস্য উন্মোচন না করে তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
কুবি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এ রকম নির্মম ঘটনার সম্মুখীন কখনো হয় নাই। কুবির শিক্ষার্থীরা আজ কোথাও নিরাপদ না। কুবির শিক্ষার্থীদের আজকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়, অপহরণ করা হয়, ছিনতাই করা এমনকি হত্যাও করা হয়। আমরা কুবির শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই সুমাইয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি অতিদ্রুত নিশ্চিত না করা হয় তাহলে কুমিল্লার জমিনকে আমরা সারাদেশ থেকে আলাদা করে দেব।”
লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড.
তিনি বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনো ঘটনা ও রহস্য যদি থেকে থাকে, তাহলে সেই রহস্য উন্মোচন করতে হবে। পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়া যাতে দীর্ঘায়িত না হয়। আসামির সঙ্গে জড়িত অন্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এ ঘটনা যাতে কোনোভাবে ধামাচাপা দেওয়া না হয়। প্রকৃত ঘটনা সবার সামনে উন্মোচন করা হোক।”
গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুমিল্লার কালিয়াজুরী এলাকায় নিজ ভাড়া বাসা থেকে সুমাইয়া ও তার মায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি গ্রেপ্তার মোবারক হোসেনই এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা।
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ক ণ ড র স প ট ম বর আম দ র হত য র রহস য
এছাড়াও পড়ুন:
গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে ‘তড়কা’ রোগ, প্রতিরোধে যা করবেন
অ্যানথ্রাক্স রোগটি‘তড়কা’ নামেই বহুল পরিচিত। গ্রীক শব্দ ‘অ্যানথ্রাকিস’ বা কয়লা থেকে উদ্ভূত এই নামটি হয়তো অনেকেই জানেন না। তবে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ ঠিকই অবগত।
অ্যানথ্রাক্স নামের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগটি শুধু বন্য বা গৃহপালিত পশুকে নয়, বরং মানুষের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে বারবার।
আরো পড়ুন:
১৬ দিন ধরে অচলাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ বাকৃবি ছাত্রশিবিরের
দ্রুত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবি বাকৃবি শিক্ষার্থীদের
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, দেশের অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়াকে আক্রান্ত করে এই ব্যাকটেরিয়া। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই রোগে মারা গেছে অন্তত ১ হাজার গবাদিপশু। আর আক্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তের রিপোর্ট করেছেন অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এরইমধ্যে এ রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুইজন, যা নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি মানব অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার সবগুলোই ছিল ত্বকের অ্যানথ্রাক্স। তবে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬ হাজার ৩৫৪টি পশুর অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯৮টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে মোট মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১৫.৭ শতাংশে।
গবেষণার তথ্য মতে, বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ১৯৮০ সালে। এরপর থেকে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বারবার ফিরে এসেছে। বিশেষ করে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও মেহেরপুর জেলাকে ‘অ্যানথ্রাক্স বেল্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা ময়মনসিংহ, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলাকে যথাক্রমে উচ্চ, মাঝারি ও নিম্ন-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে, বিশেষত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
অ্যানথ্রাক্সের মূল কারণ হলো- ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত মৃত পশুর দেহে পাওয়া যায়। এটি এতই শক্তিশালী যে, জৈবিক অস্ত্র হিসেবেও এর ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়া বাতাসে উড়ন্ত স্পোর তৈরি করতে পারে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
অ্যানথ্রাক্স নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের স্নাতক রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্ণব সাহা।
তিনি বলেন, “মানুষ তিনভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে— ত্বকের মাধ্যমে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এবং খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে। এর মধ্যে ত্বকের অ্যানথ্রাক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এর সুপ্তিকাল সাধারণত দুই থেকে ছয়দিন।”
অন্যদিকে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংক্রমিত অ্যানথ্রাক্সের সুপ্তিকাল গড়ে চারদিন, যা ১০-১১ দিন পর্যন্তও হতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোট আক্রান্তের ৯১.৩ শতাংশ মানুষই ত্বকের অ্যানথ্রাক্সে ভুগেছে, যেখানে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল এবং উভয় ধরনের সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ৬.৫২ শতাংশ ও ২.৬৬ শতাংশ।
ত্বকীয় অ্যানথ্রাক্সের ক্ষেত্রে চামড়ায় প্রথমে একটি চুলকানিযুক্ত লাল ফোঁড়া দেখা যায়, যা পরবর্তীতে কালো কেন্দ্রযুক্ত ব্যথাহীন ঘা হিসেবে প্রকাশ পায়। উলের কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যাওয়ায় এটি ‘উল-সর্টার্স ডিজিজ’ নামেও পরিচিত।
সবচেয়ে মারাত্মক ধরণ হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের অ্যানথ্রাক্স। ব্যাকটেরিয়ার স্পোর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে ঠান্ডা, জ্বর ও কাশির মতো উপসর্গ দেখা যায়, যা দ্রুত শ্বাসকষ্ট, শক এবং উচ্চ মৃত্যুহারের দিকে নিয়ে যায়।
অর্ণব বলেন, “প্রাণীদের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স হলে হঠাৎ মৃত্যু সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ। মৃত পশুর নাক, মুখ ও মলদ্বার থেকে কালচে, জমাট না বাঁধা রক্ত বের হয় এবং পেট ফুলে যায়।”
রোগটির প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়ে বাকৃবি মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কারণ হলো জনসচেতনতার অভাব। অসুস্থ পশু জবাই করে তার মাংস কম দামে বিক্রি করার একটি প্রবণতা আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। অনেক বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষ জানেনই না যে, এই মাংস থেকে মানুষের শরীরেও রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
“পাশাপাশি, মৃত পশুর দেহ সঠিক উপায়ে অপসারণ না করে খোলা মাঠে, নদী, খাল বা বন্যার পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে এই জীবাণু পরিবেশ ও পশুপালনের জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, যা নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে,” যুক্ত করেন ড. গোলজার।
তিনি বলেন, “অ্যানথ্রাক্সের বিস্তার রোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ এই রোগের বিস্তার রোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম- জনসচেতনতা বৃদ্ধি। পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে জনশিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো গবাদি পশুর মধ্যে নিয়মিত এবং ব্যাপক হারে টিকাদান নিশ্চিত করা। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে। আমদানি করা ও জবাই করা পশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।”
ড. গোলজার বলেন, “এছাড়া মৃত পশুর দেহ ও দূষিত পদার্থ সঠিকভাবে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে এবং অনুমোদিত মাংস বিক্রেতাদের মাধ্যমে এবং পশু চিকিৎসকের পরীক্ষা করা মাংস বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
ঢাকা/মেহেদী