রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে ১৭টি কেন্দ্রের ফলাফল পৃথকভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে।

এর মধ্যে, শুধু একটি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে শীর্ষ তিন পদেই ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীর এগিয়ে রয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনের ফল আসতে ১৫ ঘণ্টা লাগতে পারে: রাবি উপাচার্য

রাকসুর ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে: পর্যবেক্ষণ দল 

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে রাত ৮টায় গণনা শুরু হয় সন্ধ্যার পর। ভোটার সংখ্যা কম-বেশি থাকায় কোনো কেন্দ্রে আগে, কোনো কেন্দ্রে দেরিতে ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে।

রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়েছে।

মুন্নুজান হল কেন্দ্র

রাকসুর ভোটে এই কেন্দ্রে ভিপি পদে শিবিরের মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ৯৭২টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন; তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ নূর উদ্দিন আবীর পেয়েছেন ২৩৬টি ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী তাসিন খান ১৭৩টি ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার ৮৪১টি এগিয়ে রয়েছেন; শিবিরের ফাহিম রেজা ৪৯৫টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। তবে ছাত্রদলের প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন মাত্র ৮৯টি ভোট পেয়েছেন।

এজিএস পদে শিবিরের সালমান সাব্বির ৫৫৩ এগিয়ে রয়েছেন। অপরদিকে, ছাত্রদলের জাহিন বিশ্বাস এষা ৩৭৮টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।
 

ঢাকা/কেয়া/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল ফল ফল

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে এইচআইভির নীরব বিস্তার, আগামী প্রজন্ম কি নিরাপদ?

এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) এমন একটি ভাইরাস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এ থেকে এইডস হতে পারে। এইডস এমন একটি অবস্থা, যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্যান্য জীবাণু দিয়ে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখনো বিশ্বজুড়ে এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এইচআইভি নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮ লাখ। গত বছর এইচআইভি সম্পর্কিত কারণে বিশ্বে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি ১৩ লাখ নতুন এইচআইভি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশে সংক্রমণের ধারা

বাংলাদেশে বর্তমানে এইচআইভির উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন প্রধানত পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষ, ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি, নারী যৌনকর্মী ও অভিবাসী কর্মীরা। এইচআইভি পরীক্ষা ও এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) পরিষেবা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে দেশের এআরটি কেন্দ্রগুলোতে সম্প্রতি শনাক্ত হওয়া এইচআইভি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এ বছর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯১ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে এইচআইভি সম্পর্কিত কারণে মারা গেছেন ২১৯ জন। ২০২৪ সালে দেশে ১ হাজার ৪৩৮ জন এইচআইভি আক্রান্ত হন এবং ৩২৬ জন এইচআইভি সম্পর্কিত কারণে মারা যান। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ২৭৬ ও ২৬৬।

২০২৪ সালে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছিলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৬ হাজার ৮৬৩ জন এইচআইভি আক্রান্ত ছিলেন। আর ইউএনএআইডিএস-এর অনুমান অনুসারে, দেশে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।

সিরাজগঞ্জ ‘রেড জোন’, যশোরে তরুণ রোগী বাড়ছে

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সিরাজগঞ্জ, সীমান্তবর্তী জেলা যশোর ও রাজশাহীর পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। সিরাজগঞ্জকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ, সেখানে ইনজেকশনযোগ্য মাদক সেবনকারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

২০২০ সালে ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে এআরটি কেন্দ্র চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে মোট ২৫৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ২৬ জন চিকিৎসা চলার সময় মারা গেছেন। এখানকার এইচআইভি আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৮৭ জন ইনজেকশনযোগ্য মাদক ব্যবহারকারী, যাঁরা সুই ভাগাভাগি করেন, ২৯ জন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চারজন পেশাদার যৌনকর্মী এবং ৩৫ জন সাধারণ নাগরিক।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যশোরের ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে ৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জন রোগীর বয়স ১৭ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। বর্তমানে খুলনা বিভাগের এইচআইভি আক্রান্ত ২২০ জন যশোর জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮টি নতুন সংক্রমণ এবং একজনের মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

তরুণদের মধ্যে ঝুঁকি কেন বাড়ছে

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, মাদক গ্রহণের সময় সুই ভাগাভাগি, কনডম ব্যবহারের প্রবণতা কম, অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, যৌন স্বাস্থ্যশিক্ষার অভাব, রোগনির্ণয়ের প্রাথমিক পরীক্ষাকে নিরুৎসাহিত করাসহ বেশ কয়েকটি কারণে তরুণদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের হিসাবে এইচআইভিতে আক্রান্তদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ মানুষ তাঁদের রোগ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।

অথচ ইউএনএআইডিএস-এর ২০১৪ সালের ঘোষিত লক্ষ্য হলো—২০৩০ সালের মধ্যে এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৫ শতাংশকে তাদের রোগ সম্পর্কে সচেতন করা।

আক্রান্তদের অনেকে তথ্য গোপন করে চিকিৎসাসেবা নেন। এটা অন্যদের মাঝে এইচআইভির সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। অথচ সচেতন হয়ে সঠিক তথ্য জানিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিলে দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকা সম্ভব। আক্রান্তের কাছ থেকে নতুন কারও মধ্যে ছড়ানোর ঝুঁকিও কম। ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতার পাশাপাশি অবশ্যই একটি জাতীয় এইচআইভি/এইডস পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার; যাতে স্পষ্ট উদ্দেশ্য, যথাযথ অর্থায়ন ও জনসম্পৃক্ততা থাকে। তবেই এইচআইভির বিস্তার ও ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

মুকেশ শর্মা চিকিৎসক, এমবিবিএস, এমডি (মাইক্রোবায়োলজি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ