তারেক রহমান এখনো ভোটার হননি, তবে সুযোগ আছে: ইসি সচিব
Published: 1st, December 2025 GMT
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, গত ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যাঁরা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন, তাঁরাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনো ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হননি। তবে ইসি সিদ্ধান্ত দিলে তিনি আগামী নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। আইনগতভাবে ইসির এই এখতিয়ার আছে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আখতার আহমেদ।
আরও পড়ুনদেশে ফেরার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়: তারেক রহমান২৯ নভেম্বর ২০২৫ইসি সচিব বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, পেশা, জন্মতারিখ, ভোটার ঠিকানা ও ছবি—এই সাতটি ক্ষেত্রে আপাতত সংশোধন করা যাবে না। তবে নতুন এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম চালু আছে। তবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন বা হয়েছেন তাঁরা, যাঁরা ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছেন। তাঁদের নামই ভোটার তালিকায় আসবে। এরপর কেউ ভোটার হলেও তিনি আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভোটার হয়েছেন কি না—এমন প্রশ্ন করা হয় ইসি সচিবতে। জবাবে তিনি বলেন, তাঁর জানামতে তারেক রহমান এখনো ভোটার হননি।
আরও পড়ুনতারেক রহমানের ফেরায় সরকারের কোনো আপত্তি নেই: প্রেস সচিব২৯ নভেম্বর ২০২৫তারেক রহমান আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি, এমন প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, ‘পারতে পারেন, যদি কমিশন সিদ্ধান্ত দেয়।’
এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, আইনে এটা আছে। যে কাউকে ইসি এ সুযোগ দিতে পারে।
আরও পড়ুনতারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে এক দিনে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব২০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ন বন ধ হয় ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
২০ লাখ ভোটকর্মীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে একটি প্রস্তাব
লেখাটি ছোট। প্রস্তাবও সহজ। কিন্তু ব্যাপ্তি অনেক। এ দাবি মানা উচিত, মানতে হবে! বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের বেশির ভাগই ভোট দিতে পারেন না। এটি গণতন্ত্রের এক চাক্ষুষ বৈষম্য। এ বৈষম্য রোধ করতে রাষ্ট্রকে সহজ পথ খুঁজে বের করতে হবে।
সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একটু পেছনে ফিরলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তখন দেশে ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল। ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৪২ হাজার ১৪৯ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ওই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন।
একটি কেন্দ্রে একাধিক বুথ বা ভোটকক্ষ থাকে। দ্বাদশ নির্বাচনে এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। প্রতিটি ভোটকক্ষের দায়িত্বে থাকেন একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। সুতরাং সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাও ছিল ২ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। প্রতি কক্ষে দুজন করে পোলিং এজেন্ট ছিলেন, সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। এ হিসাবে দ্বাদশ নির্বাচনে শুধু ব্যালটের সঙ্গে যুক্ত ভোটকর্মীই ছিলেন ৮ লাখের বেশি। আসন্ন নির্বাচনেও এ সংখ্যা প্রায় এমনই থাকবে।
এর বাইরে সাধারণত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার মিলে নিরাপত্তাকর্মী থাকেন প্রায় ১৬ জন। এ হিসাবে মোট ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা সাত লাখের মতো। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে এ সংখ্যা আরও বেশি হয়। এ ছাড়া রিজার্ভ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরা রয়েছেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন স্তরে ২০ লাখের মতো মানুষ নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
নিজ শহর ছেড়ে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করা গণমাধ্যমকর্মীদের সংখ্যা অনেক। হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, থানাসহ জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে অনেক। ভোট দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও এ মানুষদের অনেকের পক্ষেই ভোট দেওয়া সম্ভব হয় না। অথচ এ মানুষগুলো গণতন্ত্রের প্রত্যক্ষ অংশীদার। এ মানুষগুলো তাঁদের কর্মের কারণে দেশের ভালো–মন্দের বিষয়ে অধিক জ্ঞান রাখেন। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্ট সাধারণত শিক্ষকদের মধ্য থেকে হয়ে থাকেন। এ মানুষগুলো রাষ্ট্রের নাগরিক গড়ার মূল কারিগর। অথচ তাঁরা নির্বাচনে তাঁদের রায় দিতে পারেন না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এ ভোটকর্মীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু তা অত্যন্ত জটিল। নির্বাচনী প্রজ্ঞাপন জারির ১৫ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর সংশ্লিষ্ট ভোটারকে আবেদন করতে হয়। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা ওই ভোটারের ঠিকানা বরাবর ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠাবেন। সেটি আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ করে আরেকজন ব্যক্তির দ্বারা সত্যায়ন করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পাঠাতে হবে। এই পদ্ধতি পড়তে গেলেই মাথা ঝিম করে ওঠে। এ ঝক্কি পেরিয়ে কয়জনের পক্ষে এ পোস্টাল ভোট দেওয়া সম্ভব?
কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন—এমন ১০ জন শিক্ষককের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তাঁদের কেউই তাঁদের পোস্টাল ভোটিং সম্পর্কে অবগত নন। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সাতজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানালেন, ভোটকর্মীদের পোস্টাল ভোটিংয়ের বিষয়টি মোটাদাগে নির্বাচনী নথি ও আরপিওর ভেতরই সীমাবদ্ধ, জনপরিসরে চর্চিত নয়।
সহজ প্রস্তাবরিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আনসার পর্যন্ত সব ধরনের ভোটকর্মীর ভোটাধিকার সহজ করা হোক। এ ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব হলো, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্ক্যান করে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া। এর জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য টেমপ্লেট ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে নির্বাচন কমিশন। কারণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের কল্যাণে ব্যক্তির আঙুলের ছাপ তাঁদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, স্মার্ট কার্ডধারীদের আইরিশও আছে। আর এই ডিভাইসগুলোও পর্যাপ্ত আছে বলে মনে করি। এনআইডি স্ক্যানের পর ক্রস চেকের জন্য শুধু আঙুলের ছাপ নিতে চাইলে সিম বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনের দিনের জন্য কিছু বায়োমেট্রিক মেশিনও ধার নিতে পারে কমিশন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একটি মেশিন সেটআপের বেশি প্রয়োজন হবে না।
মনে রাখতে হবে, এই যে কমবেশি ২০ লাখ ভোটকর্মীর ধারণা দেওয়া হলো, তাঁরা সবাই কিন্তু রাষ্ট্রে সচেতন শ্রেণির নাগরিক, শিক্ষিত শ্রেণির নাগরিক। তাঁদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাই এই মানুষগুলোর নির্বাচনী রায় অনেকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। তাঁরা একজন প্রার্থীকে বা একটি দলকে অনেক কিছুর ওপর ভিত্তি করে রায় দেবেন। তাঁদের পাশাপাশি পুলিশ স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতালের মতো জরুরি সেবা-পরিষেবামূলক খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরও এনআইডি স্ক্যান করে কর্মস্থলের পাশের কোনো কেন্দ্রে ভোটাধিকার দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। এটা একটি নাগরিক অধিকার বলে মনে করি।
মো. ছানাউল্লাহ প্রথম আলোর সহসম্পাদক
*মতামত লেখকের নিজস্ব