নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ‘নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির কারণে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে দুই ঘণ্টার বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ব্যানার, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে জড়ো হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা ঘেরাও কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন এবং সেখানে সমাবেশ করেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সোনাপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবুল বাশার। বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর, সদস্যসচিব হারুনুর রশিদ, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আব্দুজ জাহের, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছাবের আহমেদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, নোয়াখালী দেশের প্রাচীনতম জেলার একটি এবং প্রবাসী আয়েও অন্যতম অবদান রাখে। এ জেলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি নোয়াখালী অঞ্চলকে কুমিল্লার সঙ্গে যুক্ত করে নতুন প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। বক্তারা অবিলম্বে ওই প্রস্তাব বাতিল করে নোয়াখালীকে স্বতন্ত্র বিভাগ ঘোষণার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, কয়েক দশক ধরে নোয়াখালীবাসী বৃহত্তর নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনীসহ আশপাশের জেলা নিয়ে স্বতন্ত্র নোয়াখালী বিভাগ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি কুমিল্লা ও ফরিদপুর জেলার নামে নতুন দুই বিভাগ গঠনের সুপারিশের পর নোয়াখালী বিভাগ আন্দোলনে নতুন গতি এসেছে। দুই সপ্তাহ ধরে নোয়াখালী ও ঢাকায় একই দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বতন ত র স গঠন গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

ওসমানী উদ্যানে আবার স্থাপনার পেছনে লক্ষ্য ‘টাকা কামানো’: বাপা

রাজধানীর ঐতিহাসিক ওসমানী উদ্যান উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নেতারা। তাঁদের ভাষায়, পুরান ঢাকার ফুসফুসখ্যাত এই উদ্যানকে ঘিরে চলছে ‘অর্থ কামাইয়ের উন্নয়ন’, যার সঙ্গে জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের ইতিহাস বা চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ওসমানী উদ্যান পরিদর্শন করেন বাপার নেতারা। পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলো বলেন সংগঠনটির নেতারা।

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের নেতৃত্বে উদ্যান পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন বাপার সহসভাপতি মহিদুল হক খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা রুহিন হোসেন, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর, ফরিদুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির, নির্বাহী কমিটির সদস্য জাভেদ জাহান, জাতীয় কমিটির সদস্য শেখ আনছার আলী প্রমুখ। তাঁদের সঙ্গে গ্রীন ভয়েসের নেতা–কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সাল থেকে ওসমানী উদ্যান সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ। এই সময়ে উদ্যান উন্নয়নের নামে ব্যয় হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। এখন সেখানে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণে আরও প্রায় ৪৭ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, এই উদ্যানের আইনগত মর্যাদা উপেক্ষা করে বারবার অবকাঠামো নির্মাণই এখন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘উন্নয়ন’ নামে উদ্যানের ভেতরে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে আসলে জনগণের সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে।

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘এখানে যেটা করা হইতেছে, এটা টাকা বানানো। এর সঙ্গে জুলাই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রমাণটা হলো, এখানে যে ওয়াটার বডিজ আছে, ওখানে গেলেই দেখা যায়, ওখান থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। এই স্মৃতি করে লাভটা কী? এই প্ল্যানটা আমি স্মৃতিস্তম্ভ বলি না, এটা স্রেফ মানি মেকিং প্রজেক্ট। আজকে যারা এগুলা (জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ) করছে, এগুলো কিছু মানি মেকিংয়ের জন্য করছে। এর মধ্যে আমি কোনো সঠিক প্ল্যানও দেখছি।’

ওসমানী উদ্যানকে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেই সরকারই আসুক, তাদের মাথায় থাকে শুধু উন্নয়নের নামে টাকা কামানোর চিন্তা। বহুদিন ধরে উদ্যানটা ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা, জনগণ ঢুকতেই পারে না। এই প্রকল্পে জনগণের টাকা লুটপাট ছাড়া অন্য কোনো কর্মকাণ্ড আমি দেখি না। ওসমানী উদ্যান জনগণের সম্পদ। এই উদ্যান উন্মুক্ত থাকা দরকার। বিশেষ করে মেহনতি, সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার ও বিশ্রামের জায়গা হিসেবে। অথচ আজ সেটাকে দখল করে তথাকথিত উন্নয়ন দেখানো হচ্ছে। আসলে এটা পরিবেশ ধ্বংসেরই আরেক নাম।’

ওসমানী উদ্যান পরিদর্শন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে গিয়ে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষোভের কথা জানান বাপার নেতারা। এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বাপা নেতাদের বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে ওসমানী উদ্যানে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

আরও পড়ুনওসমানী উদ্যান: ঢাকার ‘ফুসফুসে’ আবার স্থাপনা ১১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ