ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন প্রভা
Published: 3rd, December 2025 GMT
টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা। দুই দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে মনকাড়া অনেক কাজ উপহার দিয়েছেন। পর্দায় তার সাবলীল উপস্থিত এখনো মুগ্ধ করে দর্শকদের। নানা কারণে কাজ এখন অনেকটা কম করছেন এই অভিনেত্রী। তবে এই সময়ে রিলস দেখে তার সবচেয়ে বেশি সময় কাটে বলে জানিয়েছেন প্রভা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব প্রভা। এবার ফেসবুকে জুয়ার ওয়েবসাইটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন এই অভিনেত্রী।
এ নিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন প্রভা। তাতে এ অভিনেত্রী বলেন, “আমি আপনাদের সাথে একটা জিনিস শেয়ার করব। এটা সম্পূর্ণ ভুল বোঝাবুঝি ছিল এবং আমি কেন যেন এটা নিয়ে কখনো সিরিয়াসলি বা সিনসিয়ারলি আপনাদের সাথে আমার যেই এক্সপেরিয়েন্স, একটা ব্যাড এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করিনি। যেটার জন্য আমার আসলে প্রতিনিয়ত এই প্রবলেমটা ফেস করতে হচ্ছে। সেটা হচ্ছে, লাস্ট রোজার মাসে একটা কোম্পানি আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। এই টাইপের কিছু কোম্পানি এরা যখন আমাদের সাথে যোগাযোগ করে বা আমার যে এক্সপেরিয়েন্স সেটা হচ্ছে ওরা প্রথমে ক্লিয়ারকাট কথাবার্তা বলে না। আমাকে বলা হয়েছিল যে, গেমিং ওয়েবসাইট যেটার সাথে আমি একদমই পরিচিত না। আমি এমনিতেও মানে ফোনটোনে গেমস খেলি না, গেম সাইট সম্পর্কে জানি না। শুনেছি এটা আছে দ্যাটস ইট আমার একদমই এ ব্যাপারে আইডিয়া নেই।”
আরো পড়ুন:
‘ভদ্ররা চুপ হয়ে যায়, অভদ্ররা ভাবে জবাব দেওয়ার ক্ষমতা নেই’
বুকে ব্যথা লুকিয়ে মুখে হাসি রেখেছি: প্রভা
পরের ঘটনা বর্ণনা করে প্রভা বলেন, “একটা গেমিং ওয়েবসাইট মাঝে মাঝে টি-২০ দেখায় এই টাইপের অনেক সেলিব্রেটিরা এটার জন্য ক্যাম্পেইন করে দেয়। অনেক টিভিসি আমাকে মানে ওবিসি আমাকে দেখাল, দেখানোর পর আমি ওদের কাছে বারবার জানতে চেয়েছিলাম, এই সাইটে ওরা কীসের জন্য কাজ করবে, তখন বলল, ‘আপু শুধু যে টি-টুয়েন্টি সময় খেলা হয় না, ওই খেলাগুলো দেখায়। বিভিন্ন টাইপের গেম দেখায়।’ একটাবারের জন্যও ওরা আমার সাথে ক্লিয়ার ছিল না।”
চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনা বর্ণনা করে প্রভা বলেন, “আমি যেদিন ওদের সাথে চুক্তিপত্রে সাইন করব। ডিএইচএস-এ ওদের একটা অফিসে গেলাম। আমাকে বলা হলো যে, ‘আপু একটা ছোট্ট বাইট দিয়ে দেন।’ ছোট্ট একটা বাইট আর ওবিসি দুইটা কিন্তু দুই জিনিস। তো আমি যেহেতু এগ্রিমেন্টে সাইন করেছি এবং একটা টোকেন মানিও নিয়েছি। পরে আমি একটা ছোট্ট বাইট দিয়েছি যে, আমি এই সাইটটার সাথে আছি।”
জুয়ার প্রমোশন কি না, তা-ও জানতে চেয়েছিলেন প্রভা। এ তথ্য উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “এই গেমিং সাইটের সাথে আছি। তারপরে আমি তো আর জানতাম না যে, এটা একটা বেটিং ওয়েবসাইট হোইচ ইজ ভেরি রং থিং অ্যান্ড ইললিগাল। রাইট? আমি পোস্ট দেয়ার সাথে সাথে মানুষজন যখন আমাকে বলল, যেটা নেগেটিভ এটা কাজ করছেন। তখন আমি ওদের সাথে পরবর্তীতে আবার যোগাযোগ করলাম। আপনারা আমাকে এই জিনিসটা কেন ক্লিয়ার করেননি যে, এটা একটা জুয়ার প্রমোশন। আমাকে বলল, ‘ম্যাডাম আপনি বোধহয় বেটিং ওয়েবসাইটের মানে জানেন না।’ আমি তখন ওদেরকে বললাম, ‘বেটিং ওয়েবসাইটের মানে জানি না ডেফিনেটলি। এই ব্যাপারে আমি খুবই অশিক্ষিত। আমি তো আপনাদেরকে বারবার জিজ্ঞেস করেছিলাম এটা কিসের, কী টাইপের গেম।’ এরকমও হয়েছে যে আমি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করি, ভাই কোনো জুয়াটুয়া না তো? কারণ ওরা পরবর্তীতে আমাকে নমুনা দেখিয়েছিল। শুটিংয়ের জন্য কস্টিউম দেখায়। ওই সময় দুই-একটা ওবিসি দেখায়, যেগুলো বাইরের। আমি তখন বলছিলাম, ‘এগুলো তো সব জুয়ার প্রমোশন।”
প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রভাকে ভয়-ভীতি দেখিয়েছিল। এ তথ্য উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “তখন ওরা বলছে, ‘ওইটা তো বাইরের দেশেরটা, আমাদেরটা গেমের তো আমাকে কোন একটা ভুজুং ভাজুং বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আপনাদের ধন্যবাদ যে, আপনারা আমাকে ওখানে লিখছিলেন, ‘শেষমেশ এইটার প্রমোশন করছেন।’ তখন আমার টনক নড়ে এবং সাথে সাথেই আমি ওদের সাথে যোগাযোগ করলাম। ওরা আমাকে অনেক রকমের ভয়-ভীতি দেখানোর চেষ্টা করেছিল।”
একজন ক্যামেরা ম্যান প্রভার কাছে কাজটি নিয়ে এসেছিল। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমি আরটি সিকিউরিটির সাথেও যোগাযোগ করেছি। আমাকে এই কাজে যে এনেছিল, সে একজন ক্যামেরা ম্যান। আমি ওকে অনেক টেক্সট করেছি, ওর সাথে আমার কনভার্সেশনের অনেক স্ক্রিনশট এখন পর্যন্ত আছে। আমাকে এরকম একটা প্রবলেমের মধ্যে কেমন করে ফেললা। তুমি যখন জানতা যে, এই জিনিসটা ইলিগ্যাল এবং পরবর্তীতে আমি সেই কাজটা অবশ্যই করিনি। এখন এই ব্যাপারে অনেকে যখন জানতে চায়। তখন বারবারই বলি, আমি বেটিং ওয়েবসাইটের মানেই জানতাম না।”
প্রভার একটা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে। এই ভিডিওতে যে বক্তব্য তা প্রভার নয়। এ বিষয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমি ওদের প্রমোশন করিনি, শুধু ছোট্ট একটা বাইট দিয়েছিলাম। আমি খেয়াল করেছি, আপনারাও দেখতে পাবেন আমার লিপসিংটা মিলে না। অন্য আরেকটা কোম্পানির নাম বলে, অন্য আরেকটা ওয়েবসাইটের নাম বলে। ওই লিপসিংয়ের সাথে আমার কথা মিলছে না।”
কখনো এ ধরনের প্রমোশন করবেন না জানিয়ে প্রভা বলেন, “আমি কখনো কোনো জুয়ার প্রমোশন করব না। কোনো বেটিং ওয়েবসাইটের প্রমোশন করব না। ইনফ্যাক্ট আমি কোনো গেমিং টেমিং এর প্রমোশন করব না। আমি এত ভয় পেয়েছি! আমি এগুলো কিছুই করব না। দিস ইস টোটালি ইলিগ্যাল। আমার একদম ধারণা ছিল না। ওরা আমাকে সঠিক ইনফরমেশন দেয়নি। আশা করছি, আমি আপনাদের কাছে একটু হলেও বিষয়টি ক্লিয়ার করতে পেরেছি।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক চলচ চ ত র য গ য গ কর আপন দ র স ইট র য় র কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত খুলনা: ১৬ মাসে ট্রিপল-ডাবলসহ ৪৮ খুন
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গত ১৬ মাসে খুলনায় ট্রিপল ও ডাবলসহ ৪৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, মাদক ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২০টি। চলতি নভেম্বর মাসেই সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার (৩০ নভেম্বর) খুলনার আদালত পাড়ায় প্রকাশ্যে দুইজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইদিন রাতে নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় আরো এক যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
একের পর এক হত্যাকাণ্ডে ভয় আর আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা। দিন-দুপুরে আদালত এলাকার মতো জনবহুল জায়গায় হত্যাকাণ্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
আরো পড়ুন:
আলোচিত রায়হান হত্যার রায় ৭ জানুয়ারি
খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন
পুলিশের তথ্য বলছে, গত ১৬ নভেম্বর দুপুরে নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনারের কালভার্ট এলাকায় বাড়ির মধ্যে নানি মহিতুন্নেসা (৫৫), তার নাতি মুস্তাকিম (৮) এবং নাতনি ফাতিহাকে (৬) হত্যা করা হয়। ওই রাতেই করিমনগরে নিজ বাড়ির ভেতর আলাউদ্দিন মৃধা নামের এক যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ২৭ নভেম্বর রাতে খালিশপুর ফেয়ার ক্লিনিকের সামনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় যুবক ইমানকে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) কর্মচারী মো. মহসিন শেখ লিটুর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। ২৮ অক্টোবর ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে মহানগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা খুঠিরঘাট এলাকার ওই বাড়িতে গুলিবর্ষণ হয়। তবে, কেউ আহত হননি।
গত ৯ অক্টোবর সকালে খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকায় সবুজ খান (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনার রূপসা উপজেলায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমরান হোসেন মানিক (৩৪) নামে এক যুবক নিহত হন।
সে সময় রূপসা থানার ডিউটি অফিসার জনি আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “রাতে মানিক একটি ভ্যানযোগে ইলাপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় কয়েকজন সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করেন। তারা মানিককে লক্ষ্য করে পরপর দুইটি গুলি ছোড়েন। একটি গুলি মানিকের মাথায় লাগে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।”
এর আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা মহানগরীর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে প্রকাশ্যে এক যুবককে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ওই যুবকের নাম নিক। তিনি নগরীর কালীবাড়ী এলাকার মন্টু দাশের ছেলে।
একের পর হত্যাকাণ্ডে উদ্বিগ্ন নাগরিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ধারাবাহিক হত্যা ও সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে খুলনা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। এছাড়া, আইনশৃখলা পরিস্থিতি অবনতির প্রতিবাদে গত শনিবার নগরীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন আইন অধিকার বাস্তবায়ন ফোরাম। তার একদিন পরেই রবিবার দুটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটল। এর আগে, খুলনার আদালত চত্বর থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছিল পুলিশ। গত ২০ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে বস্তুটি পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে চরমপন্থিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল খুলনা। নতুন শতাব্দির শুরুতেও তা বহাল ছিল। বোমা মেরে অথবা গুলি করে মানুষ হত্যা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারান সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার দক্ষিণাঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে র্যাব গঠন করে। যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে শুরু হয় অপারেশন ক্লিনহাট, অপারেশন স্পাইডার ওয়েব। এসব অপারেশন অধিকাংশ চরমপন্থি সন্ত্রাসী নিহত ও অনেকে গ্রেপ্তার হন। ধীরে ধীরে শান্তি ফিরে আসে খুলনায়। খুলনার আইনশৃখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আবারো বিশেষ অভিযান শুরুর দাবি জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “একের পর এক হত্যাকাণ্ড সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলছে। এ থেকে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের দমনে পুলিশ প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।”
খুলনায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি বিশেষ করে গতকাল রবিবার আদালত অঙ্গনে দিনে দুপুরে লোমহর্ষক জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু এবং সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা। আদালত অঙ্গনে নিরাপত্তা জোরদারসহ খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পুলিশ প্রশাসন এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আরো কঠোর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “বেশিরভাগ হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। রবিবার দুপুরে দুই হত্যার সঙ্গে জড়িতরাও দ্রুত গ্রেপ্তার হবেন।”
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ