প্রথম টাই, প্রথম সুপার ওভার, এরপর বাংলাদেশের হার
Published: 21st, October 2025 GMT
কালো মাটির উইকেট, সাপের মতো বাঁক খাওয়ানো বল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুধু স্পিনারদের দিয়েই পুরো ৫০ ওভার করানোর রেকর্ডের পর শেষ ওভারের রোমাঞ্চ—ম্যাচটাকে মনে রাখার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু কে জানত, বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ওয়ানডের শেষটাতে লেখা ছিল আরও এক পরত নাটকীয়তা! সব ভুলিয়ে দিন শেষে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হবে তাতেই।
৫০ ওভার শেষে ম্যাচ টাই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সুপার ওভারের মুখোমুখি বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়ল হারের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে। সুপার ওভারে অধিনায়ক শাই হোপের ৩ বলে ৭ রানের সৌজন্যে ১ উইকেটে ১০ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে করে ৯ রান। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, দুটি নো, একটি ওয়াইড ও একটি লেগ বাই থেকে অতিরিক্ত ৪ রান এবং ৩টি বাড়তি বল পেয়েও বাংলাদেশ ১০ রানের লক্ষ্য পেরোতে পারেনি। সুপার ওভারে নাজমুল হোসেনকে তিনে নামানোটাও অবশ্য কম বিস্ময়ের ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাটকীয় জয়ে সিরিজে এখন ১-১ সমতা। আগামীকালের শেষ ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছে অলিখিত ফাইনাল।
দিন শেষে ফলাফলটাই আসল। তার ওপর সেটির নিষ্পত্তি যদি হয় এমন রোমাঞ্চকরভাবে, জয়-পরাজয় দুটোর অনুভূতিতেই ভর করে আবেগ। পরশু গভীর রাতে ঢাকায় পৌঁছে কাল দুপুরেই ম্যাচ খেলতে নামা আকিল হোসেনকে তাই ম্যাচ শেষে সতীর্থ প্রায় সবাই আলিঙ্গনে জড়ালেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বাংলাদেশকে জয়বঞ্চিত করা সুপার ওভারটা যে করেছিলেন তিনিই! বাংলাদেশের ডাগআউট তখন শোকস্তব্ধ। এমন ম্যাচও যে এভাবে হারা যায়, সেটা যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না ক্রিকেটারদেরই।
১নিজেদের ৩৯ বছর ও ৮১৪ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতহাসে প্রথম টাই করল বাংলাদেশ।ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের অন্যতম নায়ক আকিল হোসেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসা দিয়ে পথ দেখালে তরুণেরা পথ হারাবে না
দৃঢ় মনোবল আর প্রচেষ্টা থাকলে কোনো বাধা পেরোনোই কঠিন নয়। দরকার ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রম। আমাদের আশপাশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজেদের জীবনগাথায় লিখে চলেছেন অদম্য জয়ের গল্প। তাঁদের সেই সাফল্য ব্যক্তিগত অর্জনের সীমানা পেরিয়ে সমাজের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতাকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। তেমনই কয়েকজনের গল্প নিয়ে ধারাবাহিক এ আয়োজন। আজ জানব রংপুর সদরের খলেয়া ইউনিয়নের দেওরা গ্রামের বানিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাজিম ইসলামের জীবন-গল্প। (শুরুতেই একসার্পট আকারে যাবে)
রংপুর সদরের খলেয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গ্রাম দেওরা। এই গ্রামের বানিয়াপাড়ায় এক সাধারণ পরিবারে আমার জন্ম। আমি শাজিম ইসলাম। আমার তারুণ্য ছিল অন্ধকারে ঢাকা। ২০ বছর বয়সে সঙ্গদোষে নেশার কবলে পড়ি। নেশার ঘোরে চারপাশের সবাইকে তুচ্ছ ভাবতাম, অবহেলা করতাম। বিশেষ করে আমার বয়সী কারও সঙ্গে বনিবনা হতো না। সব সময় মেজাজ খিটখিটে থাকত। সবার সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করতাম। রগচটা আর বদমেজাজের কারণে সবাই আমাকে ভয় পেত। পরিচিতরা এড়িয়ে চলায় নিজেকে খুব বদ্ধ জগতের মানুষ মনে হতো। এই জগৎ থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
নেশায় আসক্ত থাকায় লেখাপড়াও বেশি দূর এগোতে পারিনি। পরিবারের কেউ আমার ওপর ভরসা করতে পারত না। ঘরে-বাইরে মানুষের এত অসম্মান আমাকে অনেক পীড়া দিচ্ছিল। তখন লক্ষ করলাম, আমার স্বভাবের কারণে অনেকেই কটু কথা বললেও অন্ধকার থেকে আলোতে আনার পথ দেখাত না। আর নেশার ঘোরে আমার রাত-দিন পার হতে থাকে।
এর মধ্যে আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়, যদিও তার বয়স কম ছিল। পরিবারের সবাই ভেবেছিল বোন অনেক সুখী হবে। কিন্তু তা হলো না। তার কষ্ট দেখে আমার উপলব্ধি হয়, অধিকাংশ পুরুষ নারীদের মর্যাদা দেয় না। নারীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। বোনের সংসারজীবনের কষ্ট আমাকে ভাবনায় ফেলে।
নিজেকে বদলানোর সুযোগ খুঁজি। একদিন খবর পাই আমাদের গ্রামে ব্র্যাকের একটি প্রকল্প আছে, যেখানে আমার বয়সী ছেলেমেয়েরা যায়। নিয়মিত বৈঠক করে। ‘অধিকার এখানে, এখনই’ (আরএইচআরএন) নামে তরুণদের গ্রুপে লিঙ্গসমতা, অধিকার আর আবেগ বা রাগ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কথা বলা হয়।
প্রথমে এ ধরনের প্রকল্পের কথা শুনে হাসতাম। বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-তামাশাও করেছি। তবে একদিন কৌতূহলবশত আরএইচআরএনের ওই সেশনে যাই। এরপর মনে হলো, অন্ধকারে বসবাস করা আমি আলোর দেখা পেয়েছি। বৈঠকগুলোতে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। বুঝলাম, আমি ভালোবাসা আর সম্মানের কাঙাল ছিলাম। তাদের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। নতুন করে অন্ধকার থেকে আলোর পথের দিশা পাই।
সেই প্রকল্প থেকে ইলেকট্রিক্যাল আর হাউস ওয়্যারিংবিষয়ক প্রশিক্ষণ নিই। এরপর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিভিন্ন বাসাবাড়ি এবং নির্মাণাধীন ভবনে কাজ শুরু করি। যেকোনো ইলেকট্রিক্যাল কাজের সমাধান করতে শিখি। ফ্যান, মোটর, রাইস কুকার মেরামত কিংবা ওয়্যারিং কাজে আমার দক্ষতার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আমার ব্যবহারেও অনেক পরিবর্তন আসে। মানুষকে সম্মান আর সমীহ করে কথা বলতে শিখি। বিনিময়ে হারানো ভালোবাসা আর সম্মান ফিরে পাই।
বৈদ্যুতিক কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে মূলধারায় ফেরেন শাজিম। ধীরে ধীরে হারানো সম্মান ও ভালোবাসার দেখা পান