প্রশাসন ও সরকারি বিতর্কিত কর্মকর্তারা যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে না পারেন সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বলে তাদের জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে আব্দুল মঈন এসব কথা বলেন। আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এসব কথা বলেন।

আব্দুল মঈন খান বলেন, গত ১৫ বছরে প্রশাসনকে একটি রাজনৈতিক দলে অনুগতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে অতীতের তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা যে প্রহসনের শিকার হয়েছেন, তা সবারই জানা। এই বাস্তবতার মধ্যেও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে যুক্ত না হতে পারেন। কমিশন যেন এমন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেন, যেখানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, অতীতের সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা বাস্তবসম্মত নয়। বরং তাদের মধ্যে যারা অতীতে চাপ বা ভয়ের কারণে অন্যায় করেছে, তাদের এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ অন্তরে গণতান্ত্রিক। যখন তারা বুঝবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, তখন এটি উৎসবমুখর একটি ঘটনার রূপ নেবে।

আব্দুল মঈন খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য কোনো ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ নয়— জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ১৭ বছরের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পর, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় আমরা চাই— ১৮ কোটি মানুষ যেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করতে পারে, সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে, আর ১২ কোটি ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি যেন তারা একটি উদাহরণ স্থাপন করে, যাতে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারে— বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোচ্ছে।’ মঈন খান মনে করেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদিও কমিশনের নিজস্ব জনবল সীমিত, তবুও একটি দিনে সারা দেশে প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও তিন লাখ বুথে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে অন্তত ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন। এই জনবল সরকারের প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আসে। ফলে এই বিশাল কাঠামো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন ভূমিকা নিতে হবে যাতে জনগণ বিশ্বাস করে যে তাদের কোনো দলীয় স্বার্থ নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি দৃশ্যমানভাবে সেই নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে পারে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে।

একই সঙ্গে মঈন খান বলেন, বিএনপি আগেই নির্বাচনী সংস্কার সংক্রান্ত তাদের প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন যদি সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে আসন্ন নির্বাচন হবে দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

শেষে তিনি বলেন, আমরা চাই, এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনুক, যাতে বিশ্ব বুঝতে পারে— বাংলাদেশ সত্যিই গণতন্ত্রের পথে ফিরছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ , সাবেক সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া এ সময় মঈন খানের সঙ্গে ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক কর মকর ত প রক র ব এনপ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

তাদের দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে: তারেক রহমান 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠীকে বলতে শোনা যায়, ক্ষমতায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলকে দেখা হয়েছে। এবার অমুককে দেখুন। এই অমুককে দেশের মানুষ ১৯৭১ সালে দেখেছে কীভাবে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে।

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘৭ দিনব্যাপী কর্মসূচি: বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে ছাত্রদলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

আরো পড়ুন:

বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদের ওপর হামলা, আহত ৫ 

বেগম জিয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন: টুকু

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠীকে ইদানীং বলতে শুনেছি বা বিভিন্ন জায়গায় কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম, এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে অমুককে দেখুন, তাদের তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। ১৯৭১ সালে তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে রক্ষার্থে কীভাবে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। এই যাদের কেউ কেউ বলে যে একবার দেখুন না এদের। তাদের দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে।’’

‘‘লাখ লাখ মানুষকে শুধু হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা কীভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল, এ কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে,’’ বলেন তিনি। 

তারেক রহমান বলেন, ‘‘একটি রাজনৈতিক দলের কিছু ব্যক্তি বা বেশ কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন জিনিসের টিকিট বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন জিনিসের কনফারমেশন দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’’

‘‘দোজখ, বেহেশত, দুনিয়া সবকিছুর মালিক আল্লাহ। যেটার মালিক আল্লাহ, যেটার কথা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই বলতে পারেন, সেখানে যদি আমি কিছু বলতে চাই, আমার নরমাল দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বুঝি যে সেটি হচ্ছে শিরক।’’

‘‘ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে, যারা এসব কথা বলে, তারা শিরক করছে। যারা শুনবেন, তারাও শিরকের পর্যায়ে পড়ে যাবেন,’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন তিনি। 

বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র, বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমি গত ৫ অগাস্টের পর থেকে বলে আসছি যে, আমাদের সামনের সময়গুলো কিন্তু খুব ভালো নয়, সামনে অনেক কঠিন সময়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র, বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে।”

তিনি বলেন, ‘‘এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে এই দেশের জনগণ এবং এই ষড়যন্ত্র জনগণকে সাথে নিয়ে রুখে দিতে পারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্র।’’

এর আগে সকালে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)।

ঢাকা/তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একটি দলের কর্মীরা হেলমেট মাথায় দিয়ে মহড়া দিচ্ছে: এ্যানি
  • ‘তানিয়া রবের প্রচারণায় হামলা গণতন্ত্রের ওপর হুমকি’
  • মানবাধিকার রক্ষা প্রতিদিনের জন্য অপরিহার্য: তারেক
  • খালেদা জিয়া: কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন নাম
  • ‘একজন ভালো আর সবাই খারাপ’- আ. লীগ আমলের এই প্রচার এখনো চলছে: তারেক রহমান
  • জনমানসের পরিবর্তন একক কারণে নয়
  • তাদের দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে: তারেক রহমান 
  • রাজনৈতিক চাহিদা থাকলে আইন দিয়ে অবৈধ আয় বন্ধ হবে না: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
  • গণতন্ত্রের স্বার্থে জাপাকে নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে: জি এম কাদের
  • বেগম জিয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন:টুকু